এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,০৩ আগস্ট : ব্যান্ডপার্টি দলে বাজনা বাজিয়ে তাতেই কোনও রকমে সংসার চালাতেন । কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারনে বাজানোর জন্য বরাত মিলছিল না । ফলে ভেঙে যায় দল । তারপর সংসার চালানোর জন্য কখনও রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ের কাজ,কখনও জনমজুরি, কখনও আবার শব্জির ব্যাবসা শুরু করেছিলেন । কিন্তু সেই উপার্জনে কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না মালদা শহরের বিএস রোডের জগদ্ধাত্রী তলার বাসিন্দা শঙ্কু ঋষি নামে বছর পঁয়ত্রিশের এক যুবক । শেষে ছেলের গহনা বিক্রি করে শুরু করেন লটারির ব্যাবসা । তাতেও ক্ষতির মুখে পড়তে হয় । শেষে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ওই যুবক । সে কথা বাড়ির সকলের সামনে প্রকাশও করে ফেলেছিলেন । তখন তাঁর ৩ বছরের শিশুপুত্র আশ্বস্ত করে বলেছিল, ‘বাবা তুমি মরবে না । দেখো, তোমার লটারিতে টাকা পড়বে।’ আর ছেলের কথাই সত্যি প্রমানিত হল । অবিক্রিত টিকিটে প্রথম পুরষ্কারের এক কোটি টাকা পেলেন শঙ্কুবাবু । পেলেন পুনঃজীবন ।
মালদা শহরের বিএস রোডের জগদ্ধাত্রী তলার বাসিন্দা শঙ্কু ঋষিরা দুই ভাই । তাঁরা একই বাড়িতে পৃথক সংসারে থাকেন । একটিমাত্র ছোট্ট ঘরে স্ত্রী,৯ বছরের মেয়ে ও ৩ বছরের ছেলেকে নিয়ে থাকেন শঙ্কুবাবু । একটি ঘরে থাকেন তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা । অপর আর একটি ঘরে পরিবার নিয়ে থাকেন শঙ্কু ঋষির ভাই । সম্প্রতি ব্রেনস্ট্রোক হয়েছিল শঙ্কুবাবুর মায়ের । একদিক পক্ষাঘাত হয়ে বর্তমানে তিনি শয্যাশায়ী । শঙ্কুবাবু ও তাঁর ভাই পালা করে বৃদ্ধ মা-বাবার খরচ খরচা চালান ।
শঙ্কু ঋষি বলেন, ‘আমি ব্যান্ডপার্টি দলে বাজনা বাজাতাম । গত বছর প্রথম লকডাউন থেকে ওই কাজ বন্ধ হয়ে যায় । তারপর কখনও রাজমিস্ত্রী ও রঙমিস্ত্রীর জোগাড়ের কাজ , কখনও শব্জির ব্যাবসা শুরু করি । কিন্তু সেই উপার্জনে সংসার চালাতে পারছিলাম না । তাই শেষে ছেলের অন্নপ্রাশনে পাওয়া সোনার হারটা বিক্রি করে লটারির ব্যাবসা শুরু করেছি । একটা টেবিল কিনে জগদ্ধাত্রী তলার বসে ক’দিন ধরে টিকিট বিক্রি করছিলাম ।’
শঙ্কুবাবুর স্ত্রী সুপ্রিয়াদেবী বলেন, ‘লটারির টিকিটের ব্যাবসা করতে গিয়েও দু’দিন ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে । একদিন আমার স্বামী হতাশ হয়ে বাড়িতে এসে বলেন, ‘আত্মহত্যা করা ছাড়া আমার বিকল্প কোনও রাস্তা নেই’ । এই কথা শুনে ছেলে তখন বাবার গলা জড়িয়ে বলে, ‘,বাবা তুমি মরবে না । লটারিতে তোমার টাকা পড়বেই, দেখো’ । আর শেষে ছেলের কথাই সত্যি হল ।’
জানা গেছে,সোমবার সব লটারি টিকেট বিক্রি হলেও একটা টিকিট থেকে যায় । কিন্তু ওই টিকিটটি ডিলারকে ফেরত না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন শঙ্কু ঋষি । তারপর তিনি বাড়ি ফিরে আসার ঘন্টাখানেক পরেই ডিস্ট্রিবিউটারের কাছ থেকে শঙ্কুবাবুর মোবাইলে ফোন আসে । তখন তিনি জানতে পারেন ওই অবিক্রিত টিকিটেই পড়েছে এক কোটি টাকার প্রথম পুরষ্কার । খবর জানাজানি হতেই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে প্রতিবেশীরা আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেন ।
শঙ্কু ঋষি জানান,টিকিটের টাকা ক্যাশ হওয়ার পর প্রথমে তাঁর মায়ের ভালো করে চিকিৎসা করাবেন । পরে একটা বাড়ি বানাবেন । ছেলে-মেয়েকে ঠিকমত পড়াশোনা শেখাবেন । তবে করোনা পরিস্থিতি কাটলেই ফের তিনি পুরনো পেশায় ফিরে যাবেন বলে জানান । তিনি বলেন, ‘লটারির টিকিট বিক্রি করতে গিয়ে এক কোটি টাকা পেয়েছি ঠিকই তবে এই পেশা আমার পছন্দ নয় । তার থেকে ব্যান্ডপার্টি দলে থেকে বাদ্যযন্ত্রে বিভিন্ন গানের সুর তোলা আমার কাছে অনেক আনন্দজনক । পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই ফের আমি ব্যান্ডপার্টি দলে ফিরে যাবো ।’।