এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাবুল,২৯ মে : বিশ্ব খাদ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুসারে,সারা বিশ্বে ৮২০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধার শিকার । এর মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষ আফগানিস্তানের মতো অনুন্নত দেশে বাসবাস করে । বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বলছে যে আফগানিস্তানের ৮০ শতাংশ মানুষ পর্যাপ্ত খাবার পায় না এবং রাতে ক্ষুধার জ্বালা নিয়েই ঘুমায়।আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো প্রায় ২ বছর ধরে আফগানিস্তানে ক্ষুধার্তদের সাহায্য করার জন্য কাজ করে চলেছে । কিন্তু মানবিক সাহায্য বিতরণের প্রক্রিয়া সম্পর্কেও সন্ত্রাসী সংগঠন তালিবানের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ উঠছে । অভিযোগ যে বিদেশ থেকে আসা সাহায্য সামগ্রী উপজাতীয় প্রবীণ, প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তালিবান সদস্যদের দ্বারা বিতরণ করা হয় । কিন্তু সিংহভাগ সামগ্রীই দু:স্থ মানুষের মধ্যে বিতরণ না করে সেগুলি আত্মসাৎ করে খোলা বাজারে চড়া দামে বিক্রি করে দেয় তালিবানের সাঙ্গপাঙ্গরা ।
হেরাতের বাসিন্দা আব্দুলমোমান তার জীবন ও দারিদ্র্য নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন । তিনি বলেছেন যে তিনি তার বাচ্চাদের সাথে রাতে ক্ষুধার্ত অবস্থাতেই ঘুমান । তালিবান যখন সাহায্য সামগ্রী বিতরণ করে তখন প্রকৃত অভাবী মানুষকে না দিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেয় । তিনি বলেছেন,’তালিবানরা আসার পর থেকে প্রচুর সাহায্য এসেছে দেশে, তারা আমাদের বুকলেটও নিয়ে গেছে । কিন্তু আমরা এখনও কোনো সাহায্য পাইনি ।’
এর আগে গত ৪ মে প্রকাশিত মাসিক প্রতিবেদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ইন্সপেক্টর জেনারেল ফর দ্য রিকনস্ট্রাকশন অফ আফগানিস্তান (সিগার) বলেছিল যে তালিবানরা দাতব্য ও সাহায্য সংস্থার কাজে উল্লেখযোগ্যভাবে হস্তক্ষেপ করেছে এবং তারা দু:স্থ মানুষদের না দিয়ে সাহায্য সামগ্রীর একটি বড় অংশ তারা নিজেদের আত্মীয়দের মধ্যেই বিতরণ করে ।
হেরাতের আরও এক বাসিন্দা আব্দুল আলীও ত্রাণের অন্যায্য বণ্টন নিয়ে অভিযোগ করেছেন এবং বলেছেন যে বর্তমান তালিবান সরকারে অভাবীদের দিকে নজর দেয় না । আব্দুল আলী বলেছেন,’আমি ১৮ বছর ধরে এই শহরে বাস করছি এবং আমরা এযাবৎ কোন সাহায্য পাইনি, আমরা প্রাতঃরাশ এবং রাতের খাবারের জন্য মূলত রুটির উপর নির্ভরশীল । যদি কোনো মুসলমান আমাদের রুটি দান করে তাহলে আমরা খেতে পাই,নচেৎ আমাদের উপবাস করে থাকতে হয় ।’ তাঁর অভিযোগ,’তালিবান আসার পর তাদের কাছ থেকে আমি এক টুকরো শুকনো রুটিও পাইনি ।’
জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অফ হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) এর সর্বশেষ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে আফগানিস্তানের ২৮.৩ মিলিয়ন মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন । রিপোর্টে বলা হয়েছে,আফগানিস্তানে মানবিক বিপর্যয় রোধ করতে তার প্রয়োজন ৭১৭.৪ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি তাৎক্ষণিক তহবিল এবং একটি উপযুক্ত অপারেটিং সিস্টেম । উল্লেখ্য,আফগানিস্তানে তালিবানের পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক সাহায্য মানবিক খাতেই সীমাবদ্ধ ছিল । তালিবানরা বেসরকারী সংস্থাগুলিতে মহিলাদের কাজের উপর বিধিনিষেধ জারির পরে বেশিরভাগ ত্রাণ সংস্থার কার্যক্রম হয় বন্ধ হয়ে গেছে নচেৎ তাদের কর্মকাণ্ড হ্রাস করা হয়েছে । ফলে দেশের ক্ষুধার্ত মানুষদের মধ্যে ত্রাণ বিলির কাজ মূলত তালিবানরাই করে থাকে । ওসিএইচএ সতর্ক করে জানিয়েছে যে ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা না আনলে আফগানিস্তানে মানবিক সঙ্কট আরও বৃদ্ধি পাবে ।।

