সেখ মিলন,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৯ নভেম্বর : পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী ও ব্লক সহসভাপতি অশোক হাজরা গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব সাম্প্রতিক সময়ে খবরের শিরোনামে ছিল । ২০২৬ সালে রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচনের আগে যুযুধান এই দুই গোষ্ঠীকে নিয়ে কার্যত অতান্তরে পড়েছিল জেলা নেতৃত্ব । কিন্তু ‘আত্মীয়ের আত্মীয়’ অশোক হাজরার সঙ্গে ঝামেলাকে ‘স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া’ আখ্যা দিয়ে দ্বন্দ্বে ইতি টানেন বিধায়ক । যদিও বিধায়কের এই মন্তব্যের পর এখনো পর্যন্ত প্রকাশ্য সভায় দু’জনকে এখনো এক সাথে দেখা যায়নি । এদিকে ‘ঘরোয়া কোন্দল’ সামলে নিয়ে এবারে বিধানসভার ভোটকে পাখির চোখ করে সংগঠন চাঙ্গা করতে আসরে নেমে পড়লেন মানগোবিন্দ অধিকারী ।
ইতিমধ্যেই ভাতারের বিভিন্ন অঞ্চলে ধারাবাহিকভাবে কর্মী বৈঠক শুরু করেছেন বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীর । কর্মীদের নিয়ে বুথ স্তরের সংগঠনকে আরোও মজবুত করার লক্ষ্য নিয়েছেন ভাতারের বিধায়ক । আজ মঙ্গলবার ভাতারের সাহেবগঞ্জ-১ অঞ্চলের শালকুনি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি কর্মী বৈঠকের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী, ভাতার ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বাসুদেব যশ , ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি অমিত কুমার হুই , জেলা যুব তৃণমূলের সহ সভাপতি জুলফিকার আলী,ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শেখ শফিকুল আলম, স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান, অঞ্চল সভাপতি সহ বুথ সভাপতিরা। এদিনের কর্মীসভা থেকে বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী ও ব্লক সভাপতি বাসুদেব যশ দলের কর্মীদের বাড়ি বাড়ি জনসংযোগ ও পুরনো কর্মীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একসাথে পথ চলার বার্তা দেন ।
বিধায়ক জানান যে ইতিমধ্যেই তার ৬ টি কর্মী সম্মেলন করা হয়েছে । তিনি উপস্থিত কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘প্রার্থী কে হবেন সেটা দেখার দরকার নেই । জোড়াফুল চিহ্নে ভোট দিতে হবে এটাই মাথায় রাখবেন । আমাকেই যে প্রার্থী হতে হবে তার কোনো মানে নেই, তবে জোড়াফুল চিহ্নটাই থাকবে,তাতে যেই প্রার্থী হোন না কেন ভোট ওই প্রতীকেই দিতে হবে এটা মাথায় রেখে ভোটের প্রচারে নামুন ।’ যদিও এবারে মমতা ব্যানার্জি ভাতারে কাকে প্রার্থী করবেন সেনিয়ে দলের অভ্যন্তরেই তুমুল আগ্রহ রয়েছে । রয়েছে ধন্দ্বও । তবে মানগোবিন্দের বিকল্প নাম এখনো পর্যন্ত সামনে নেই ।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকের মতই ভাতারে শাসকদলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের পুরনো ইতিহাস আছে । ২০১১ সালে তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা বনমালি হাজরা বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার প্রায় অব্যবহিত পর থেকেই মানগোবিন্দ অধিকারীর সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয় । বনমালির সময় কালের মধ্যেই একটা স্থানীয় নির্বাচনের সময় গুলিবিদ্ধ হন মানগোবিন্দ । দীর্ঘ দিন কলকাতায় চিকিৎসাধীন থাকতে হয় তাকে । এই ঘটনার পর মানগোবিন্দ গোষ্ঠীর কার্যত চক্ষুশূল হয়ে যান বনমালি । প্রায় মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরে ফের সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আসেন মানগোবিন্দ । কিন্তু বনমালির সঙ্গে তার আর সম্পর্ক জোড়া লাগেনি৷ এটা উপলব্ধি করেই ২০১৬ সালের ভোটে আউশগ্রামের সুভাষ মণ্ডলকে প্রার্থী করেন মমতা । তিনি জেতেনও । কিন্তু সুভাষ ভাতার ব্লকে একটা সমান্তরাল সংগঠন তৈরি করতে শুরু করলে বনমানী ও মানগোবিন্দ একজোট হয়ে যায় । পরের বার অর্থাৎ ২০২১ সালের ভোটে টিকিট দেওয়া হয়নি সুভাষকে । পরিবর্তে প্রার্থী করা হয় মানগোবিন্দকে। তিনি জয়ীও হন। আর তারপর থেকে বাকি দুই গোষ্ঠী কার্যত হিমঘরে চলে যায় । ফলে বর্তমানে প্রতিদ্বন্দ্বীবিহীন মানগোবিন্দ অধিকারীই ফের একবার ভাতারের টিকিট পাবেন বলে নিশ্চিত তার গোষ্ঠীর লোকজন । বিধায়ক গোষ্ঠীর নেতা তথা ব্লক সভাপতি বাসুদেব যশ সম্প্রতি একটা কর্মী বৈঠকে জোর গলায় দাবি করেন যে মানগোবিন্দ অধিকারীই ফের টিকিট পেতে চলেছেন । এখন দেখার বিষয় যে মমতা-অভিষেক জুটি কার উপর আস্থা রাখেন ।।