জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরা(পূর্ব বর্ধমান),১৪ ফেব্রুয়ারী : তিনি স্থানীয় বিধায়ক । দায় ও দায়িত্ব অনেক । নিরাপদে ষোলোটি ‘কামরা’-কে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে হবে। তাই একইসঙ্গে ইঞ্জিনের ‘ড্রাইভার’ হয়ে সামনে থাকছেন ও ‘গার্ড’ হয়ে কামরাগুলির দিকে লক্ষ্য রাখছেন। তিনি অভেদানন্দ থাণ্ডার, পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক। আসন্ন পুরভোটে এলাকার একমাত্র পুরসভা গুসকরা পুরসভার কাণ্ডারী ।
আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রায় দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরের মাথায় রাজ্যের ১০৭ টা পুরসভার সঙ্গে গুসকরা পুরসভায় হতে চলেছে ভোট। ২০১৮ সালে নির্বিচিত বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর রাজ্যের অন্যান্য পুরসভার মত গুসকরা পুরসভাও প্রথমে সরকারি প্রশাসক ও পরে প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হতে থাকে। নামে প্রশাসকমণ্ডলী হলেও যেহেতু অধিকাংশ সদস্য গত বোর্ডের তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর তাই পুরবোর্ডটি তৃণমূল পরিচালিত বলাই ভাল। রাজ্যের মত এখানেও পরপর তিন বার বোর্ড দখলের অর্থাৎ হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার তিন বছর আগেই ২০০৮ সালে তৃণমূল গুসকরায় পুরবোর্ড দখল করেছিল এবং এটাই ছিল রাজ্য রাজনীতির বড় টার্নিং পয়েন্ট। একইভাবে ২০১৩ সালেও তৃণমূল পুনরায় ক্ষমতা লাভ করে। যদিও সেবার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। এবারের ভোটে তৃণমূলের পুরনো সৈনিকদের কেউই ভোটের ময়দানে প্রার্থী হিসাবে এবং আপাতত সেভাবে প্রচারেও নাই। লড়াইয়ে আছে সম্পূর্ণ নতুন সৈনিকরা। ভোটের মঞ্চে এটা বিরল ঘটনা । নতুন সৈনিকরা রাজনীতির মঞ্চে দীর্ঘদিন ধরে থাকলেও ভোট যুদ্ধে প্রথম।
বর্তমানে যথেষ্ট দুর্বল হলেও একটা সময় অবিভক্ত বর্ধমান ছিল লালদুর্গ। গুসকরাও তার ব্যতিক্রম নয়। বিধানসভায় খালি হাতে ফিরতে হলেও এখনো বিভিন্ন ওয়ার্ডে বামপন্থীরা যথেষ্ট শক্তিশালী। ষোলোটি ওয়ার্ডেই তারা প্রার্থী দিয়েছে। চারটি ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী না দেওয়ায় লড়াইটা তৃণমূলের সঙ্গে মুখোমুখি এবং অতীতের বিচারে এই চারটি ওয়ার্ডেই বামপন্থীরা আপারহ্যাণ্ডে আছে।
২০১৯ এর লোকসভা ভোটে চোদ্দটি ওয়ার্ডে প্রায় সাত হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে থাকা বিজেপি বিধানসভা ভোটে সেই ‘লিড’-টা ধরে রাখতে পারেনি, অনেকখানি কমে যায় । ন’টা ওয়ার্ডে মাত্র আড়াই হাজারের কাছাকাছি ভোটে এগিয়ে থাকে। এখন যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে দুর্বল থেকে দুর্বল হওয়ার পথে। পরিস্থিতি এমন যে সবকটি ওয়ার্ডে প্রার্থী দেওয়ার মত পরিস্থিতিতেও তারা নাই। যদিও এরজন্য তারা ‘স্ক্রিপটেড’ সংলাপের মত তৃণমূলের সংলাপের দিকে আঙুল তুলেছে।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর গুসকরায় তৃণমূলের কার্যত অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই শুরু হয়। লড়াইয়ে নেতৃত্বে ছিলেন শহর তৃণমূল সভাপতি কুশল মুখার্জ্জী ও তৃণমূল অন্ত প্রাণ সঙ্গীরা। পাশে ছিলেন বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার। মাথার উপর বরাভয়ের হাত ছিল এলাকার ভারপ্রাপ্ত নেতা তথা বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। এবার কুশল বাবু সহ তার সঙ্গীদের অধিকাংশ পুরভোটের প্রার্থী হয়েছেন। প্রথম বারের জন্য ভোটের প্রার্থী কুশল বাবুকে নিজের ওয়ার্ড সহ অন্যান্য প্রার্থীদের ওয়ার্ডেও যেতে হচ্ছে। এদিকে হাতে সময় কম।
স্বাভাবিক ভাবেই দলের ষোলো জন প্রার্থীকেই ‘ভিকট্রি স্ট্যান্ডে’ তোলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডারকে। এই লড়াইয়ে মূলত তিনিই কৃষ্ণ। সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত বিভিন্ন ওয়ার্ডে ছুটে বেড়াচ্ছেন। যেখানেই যাচ্ছেন এলাকাবাসীর সাড়াও পাচ্ছেন। শুধু প্রার্থীদের হয়ে প্রচার নয়, প্রতি মুহূর্তে কর্মীদের সঙ্গে আলোচনাও করছেন। সঙ্গে আছেন আউসগ্রাম ১ ও ২ নং ব্লক সভাপতি সালেক রহমান ও রামকৃষ্ণ ঘোষ, দুই কার্যকরী সভাপতি অরূপ মিদ্দা ও লালন সেখ সহ অন্যান্য কর্মীরা।
বিধায়ক বললেন,’তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা গত কয়েক বছর ধরে শহরে প্রচুর উন্নতি করেছে। উন্নয়নের নিরিখেই অবশ্যই আমরা ১৬-০ তে জিতব। জয় নিশ্চিত হলেও কোনোরকম আত্মতুষ্টিতে আমরা ভুগতে রাজি নই। ইতিমধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডেই কর্মীরা বাড়িতে বাড়িতে একাধিক বার প্রচার সেরে ফেলেছে। কাজের চাপ থাকলেও আমি নিজেও মাটি কামড়ে পড়ে আছি।
অন্যদিকে শহর তৃণমূল সভাপতি তথা ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী কুশল মুখার্জ্জী বললেন,’বিগত লোকসভা ভোটে আমাদের বিপর্যয় ঘটলেও সর্বদা আমরা মানুষের পাশে ছিলাম, আছি ও থাকব। ভোটের ময়দানে ‘ডাকলেই পাওয়া যায়’ বিধায়কের উপস্থিতি আমাদের বাড়তি সুবিধা দেবে এবং তার সুফল আমরা পাবই। যেভাবে বিধায়ক শহর জুড়ে প্রচার করছেন সেটা সত্যিই প্রশংসনীয় ।’।