সনাতন ধর্মে যে কোনও শুভ কাজের আগেই স্বস্তিক চিহ্ন আঁকতে করতে হয় । দেবদেবীর পূজোয় ঘট এনে সশীষ ডাবে স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে ঘটে স্থাপন করা বাধ্যতামূলক । গৃহপ্রবেশে সদর দরজা থেকে শুরু করে প্রতিটি ঘরের দরজার দুপাশে স্বস্তিক চিহ্ন আঁকা হয় । হিন্দু বাড়িতে কোনও শুভ অনুষ্ঠান বা পুজো থাকলেও প্রয়োজন পড়ে স্বস্তিক চিহ্নের। দ্বারঘট বা পুজোর আসল ঘট, সবেতেই প্রয়োজন হয় স্বস্তিক চিহ্নের। তা ছাড়া অসম্পূর্ণ প্রায় সব মঙ্গল কাজ। বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে, স্বস্তিক আঁকা অত্যন্ত শুভ। বিশ্বাস স্বস্তিক যেদিকেই আঁকা হোক না কেন, তা বাড়িতে ১০৮ গুণ অবধি ইতিবাচক শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে। ঋগ্বেদে স্বস্তিকাকে সূর্যের প্রতীক মনে করা হয়। এই চিহ্ন চারটি দিক নির্দেশ করে। স্বস্তিককে মঙ্গলের প্রতীক বলে মনে করা হয়। সৌভাগ্যও আকর্ষণ করে চুম্বকের মতো। ব্যক্তির ঘরে সুখ-সমৃদ্ধি বজায় থাকে। স্বস্তিক প্রতীক তৈরি করলে সমস্ত শুভকাজ সিদ্ধ হয়।
কিন্তু স্বস্তিক চিহ্ন কিভাবে আঁকতে হয় অনেকের অজানা ৷ অধিকাংশ মানুষ যুক্ত চিহ্ন(প্লাস) আঁকার মত স্বস্তিক চিহ্ন আঁকেন৷ কিন্তু এটি অশুভ লক্ষণ বলে বিবেচিত৷ হিন্দু ধর্ম শাস্ত্র অনুযায়ী স্বস্তিক চিহ্নের প্রতিটি দাঁড়ি ও বিন্দুর একটি নির্দিষ্ট অর্থ আছে এবং এটি আঁকার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। সেই পদ্ধতি এখানে তুলে ধরা হলো৷ তার আগে স্বস্তিক চিহ্নের প্রতিটি দাঁড়ি এবং বিন্দুর শাস্ত্র অনুযায়ী নাম জেনে নেওয়া আবশ্যক ।
যে চারটি মূল দাঁড়ি দিয়ে স্বস্তিক চিহ্ন আঁকা শুরু করা হয়, সেগুলি হল : ডান দিকে ধর্ম, বাম দিকে-কাম, নিচের- অর্থ এবং উপর-মোক্ষ । এই চারটি দাঁড়ি কখনো ব্রহ্মস্থান কেটে বা প্লাস চিহ্নের আকারে
আঁকবেন না । এতে বিপরীত ফল হয় ৷ ধর্ম-অর্থ-কাম- মোক্ষ চারটি রেখা বাইরে থেকে ভিতরে টেনে নিয়ে গিয়ে একটি বিন্দুতে মিলিত করুন।
চার প্রকার মুক্তি অর্থাৎ উপরে -শালোক্য, ডান দিকে – সামীপ্য, নিচে -সারুপ্য এবং বাম দিকে- সাযুজ্য চিহ্ন হিসাবে উপরিউক্ত চার দাঁড়ির মাথা থেকে ছোট দাঁড়ি টেনে দেওয়া হয় । এই চার প্রকার মুক্তি ক্লক ওয়াইজ তৈরি করুন ।
চার রকম অন্তঃকরণ
চার প্রকার মুক্তির দাঁড়ির মাথায় একটা করে ছোট দাঁড়ি দিয়ে চার রকম অন্তঃকরণ(উপরে- মন,ডাইনে – বুদ্ধি, নিচে -অহঙ্কার এবং বামে – চেতনা) চিহ্নিত করা হয় ।
চার অন্তঃবিন্দু
এরপর চার প্রকার ভক্তদের চিহ্নিত করতে চার অন্তর্বিন্দু হিসাবে বিন্দু উপরে – শ্রদ্ধা,ডাইনে – বিশ্বাস, নিচে -প্রেম এবং বামে -সমর্পন সংযুক্ত করুন ।
স্বস্তিক একটি পবিত্র চিহ্ন। এই চিহ্ন কল্যাণের প্রতীক .যে কোনো মঙ্গল অনুষ্ঠানে অনেকে স্বস্তিক চিহ্ন আঁকেন। এই চিহ্ন প্রগতির প্রতীক। ভারতীয় সংস্কৃতিতে সুখ , শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। হিন্দু , বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মালম্বী মানুষের কাছে খুবই পবিত্র এই স্বস্তিক চিহ্ন। গবেষকরা বলছেন প্রায় এগারো হাজার বছরের ও পুরানো এই চিহ্ন। বেদে ও মিলেছে এর নক্সা।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে আর্য রক্তের অহংকারে গর্বিত এক নায়ক তন্ত্রের নায়ক হিটলারের দলীয় পতাকায় ছিল এই স্বস্তিক চিহ্ন। মঙ্গলে সেই অমঙ্গলের ছাপ। হিংসা, রক্ত আর বর্বরতার সাক্ষী হয়েছে স্বস্তিক।
স্বস্তিক চিহ্ন দুই প্রকার – ১) ডান মুখী ও ২) বাম মুখী।
ডান মুখী :- এই স্বস্তিক হিন্দুদের কাছে সূর্য বা প্রগতির প্রতীক।
বাম মুখী :- এই স্বস্তিক রাত্রি কিংবা তন্ত্রের প্রতীক ।
জৈন তীর্থঙ্কর ও ভগবান গৌতম বুধের পাদ ফলকে আমরা এই পবিত্র চিহ্ন দেখতে পাই।
তাৎপর্য :-
১) এই পবিত্র চিহ্নকে আমরা বিষ্ণুর চারটি বাহুর সাথে কল্পনা করি। আবার অনেকে এই চিহ্নের চারটি বাহুকে ব্রহ্মার চারটি মুখের সাথে তুলনা করেন। যিনি সর্বদিক পর্যবেক্ষণ করছেন।
২( স্বস্তিকের কেন্দ্র বিন্দুকে শ্রী বিষ্ণুর নাভি কমল হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। তাই স্বস্তিক বিষ্ণু প্রতীক স্বরূপ বিরাজ করছে।
৩) ভগবান বিষ্ণু হলেন জগতের পালন কর্তা। তাঁকে উদ্দেশ্য করে এই চিহ্ন আঁকা হয় । তখন সব কিছু বিষ্ণু তুল্য হয়ে যায়।
৪) প্রধান প্রবেশ দরজার ভিতরের দিকে স্বস্তিক চিহ্ন গৃহে সুরক্ষার প্রতীক।।

