প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৪ জুন : বর্ধমানে তেজস্ক্রিয় পদার্থ বিক্রি করতে আসার দায়ে মাস দেড়েক আগে পুলিশ ও এসটিএফ এর হাতে ধরা পড়েছিল এক অবসর প্রাপ্ত বিডিও সহ চারজন। উদ্ধার হওয়া ধাতব বস্তুটি আদৌ তেজস্ক্রিয় পদার্থ কিনা সেই বিষয়ে নিশ্চিৎ হতে বস্তুটি কলকাতার পারমাণবিক শক্তি বিভাগে পাঠায় বর্ধমান থানার পুলিশ । পরীক্ষা শেষে ভারত সরকারের পারমাণবিক শক্তি বিভাগ রিপোর্ট পাঠিয়ে জানিয়ে দিল প্রকৃত অর্থেই বস্তুটির মধ্যে তেজস্ক্রিয়তা রয়েছে । বস্তুটি ইউরেনিয়াম। এমনকি তার মধ্যে ইউরেনিয়াম আইসোটোপেরও অস্তিত্ব রয়েছে। এই রিপোর্ট আসার পরেই কার্যত চমকে গিয়েছেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের কর্তারা ।কি ভাবে তেজস্ক্রিয় বস্তুটি ধৃতদের কাছে পৌছালো সেটাই এখন পুলিশ কর্তাদের কাছে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ,পারমাণবিক শক্তি বিভাগও মনে করছে বস্তুটির উৎসের বিষয়ে জানা অত্যন্ত জরুরি ।তার জন্য উপযুক্ত সংস্থাকে দিয়ে এর তদন্ত করানো জরুরি বলেও পারমাণবিক শক্তি বিভাগ তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে । প্রয়োজনে মুম্বইয়ের ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাটোমিক এনার্জি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগের জন্যও তারা পুলিশকে পরামর্শ দিয়েছে।উদ্ধার হওয়া বস্তুটি তেজস্ক্রিয় পদার্থ বলে রিপের্ট আসার পরেই মামলার গুরুত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছে। এই মামলায় ১৯৬২ সালের অ্যাটোমিক এনার্জি অ্যাক্ট প্রযোজ্য কিনা তা পুলিশে পক্ষ থেকে পারমাণবিক শক্তি বিভাগে জানতে চাওয়া হয়েছিল। অ্যাটোমিক এনার্জির ধারা এক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে পারমাণবিক শক্তি বিভাগ রিপোর্টে উল্লেখ করেছে। রিপোর্টে পুলিশ যেভাবে উদ্ধার হওয়া ধাতব বস্তুটি পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিল তার ভূয়সী প্রশংসা করেছে। পুলিশ দ্বিস্তর বিশিষ্ট তামার শিট দিয়ে ধাতব বস্তুটি উপযুক্ত মোড়কে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিল । এ ধরণের তেজস্ক্রিয় পদার্থ কিভাবে পাঠাতে হবে সে ব্যাপারে বর্ধমান থানার পুলিশের জ্ঞানের ভূয়সী প্রশংসা করছে পারমাণবিক শক্তি বিভাগ ।
পুলিশ জানিয়েছে,গত ১৫ মে রাতে বর্ধমান শহরের পারবীরহাটা এলাকা থেকে একটি ধাতব পদার্থ সহ আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, নিমাই দাস ও পার্থ পালকে গ্রেপ্তার করে এসটিএফ ও বর্ধমান থানার পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ধাতব বস্তুটির ওজন ৯৪৩ গ্রাম। সেটি ৫০ লক্ষ টাকায় একজনকে বিক্রি করার জন্য আনা হয়েছিল বলে ধৃতরা পুলিশকে জানায়।ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে শিউজি পাণ্ডে নামে এক ব্যক্তিকে পুলিশ শ্রীরামপুর থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে হুগলির প্রভাসনগর থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে অবসরপ্রাপ্ত বিডিওকে সুধন্য দাস কে গ্রেপ্তার । কলকাতার রাজারহাটের এক বাসিন্দা তাঁকে তেজস্ক্রিয় বস্তুটি দিয়েছিল বলে জেরায় অবসরপ্রাপ্ত বিডিও পুলিশ কে জানান। সেটি আদৌ তেজস্ক্রিয় পদার্থ কিনা তা জানতে এর পর পুলিশ বস্তুটি পরীক্ষার জন্য পারমাণবিক শক্তি বিভাগের কলকাতা অফিসে পাঠায়।
এদিকে, এই ঘটনায় ধৃত চারজনের মধ্যে তিনজনের জামিনের আবেদন বৃহস্পতিবার খারিজ করে দিয়েছেন জেলা জজ। তবে,অবসরপ্রাপ্ত বিডিও সুধন্য দাসের জামিনের আবেদন এদিন মঞ্জুর করেছেন জেলা জজ। তাঁর কাছ থেকে কিছু উদ্ধার না হওয়ায় এবং এফআইআরে তাঁর নাম না থাকায় আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করে।।