এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাঁকুড়া,১১ জানুয়ারী : ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধ স্বামীর । কিন্তু কিছুই বুঝতে পারেননি মানসিকভাবে অসুস্থ বৃদ্ধা স্ত্রী । এদিকে প্রায় ২৪ ঘন্টা ধরে ঘরের মেঝেতে পেতে রাখা সতরঞ্জির উপর পড়ে রয়েছে স্বামীর মৃতদেহ । অন্যদিকে নির্বিকারভাবে গৃহস্থালির কাজ করে যাচ্ছিলেন স্ত্রী । শেষে বৃদ্ধের বৈকালিক আড্ডার সঙ্গীসাথীরা এসে বৃদ্ধকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান ৷ মর্মস্পর্শী এই ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার সিনেমা রোড এলাকায় । জানা গেছে,সত্তরোর্ধ ওই বৃদ্ধের নাম সাধন বরাট ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,বাঁকুড়ার সিনেমা রোডে দোতলা বাড়ি রয়েছে সাধন বরাটের । নিচের তলার ঘরগুলি দোকানের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে । বেশ কয়েকটি দোকানঘর রয়েছে । উপরতলায় স্ত্রী রেবা বরাটকে নিয়ে বসবাস করতেন সাধনবাবু । তাঁদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে । সকলেই ভিন রাজ্যে থাকেন । রেবাদেবী দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগে ভুগছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা ।
স্থানীয় বাসিন্দা শিবশঙ্কর দত্ত বলেন, ‘সাধনবাবু প্রতিদিনই পাড়ার লোকজনের সাথে আড্ডা দিতেন । কিন্তু কয়েকদিন ধরে ওনাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না । সোমবার খবর পেয়ে আমরা ওনার বাড়িতে আসি । দেখি ঘরের মেঝেতে মুখ ঢাকা নিয়ে শুয়ে আছেন সাধনবাবু । বুঝতে পারি উনি মারা গেছে । ভেবেছিলাম গত কালই সৎকার করে দেবো ৷ কিন্তু সাধনবাবুর মোবাইলটা নিয়ে তাঁর বড় ও ছোট মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আমাদের জানানো হয় ওনারা যাওয়ার পরেই যেন সৎকার করা হয় । তা না হলে সোমবারই আমরা ক্লাব থেকেই ওই বৃদ্ধের সৎকার করে দিতাম ।’ শিবশঙ্করবাবুর অনুমান, সোমবার দুপুর নাগাদ ঘুমের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই বৃদ্ধের ৷
স্বামীর মৃত্যুর প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে রেবাদেবী বলেন,’উনি কখন মারা গেছেন আমি জানি না । আমার স্বামী যে মারা গেছেন আমায় তো উনি বলেনি । তবু আমি বারবার জিজ্ঞাসা করেছি, ‘কি হয়েছে তোমার?’ কিন্তু কিছুই বলছে না । তারপর আমি ওর কপালে হাত দিয়ে দেখি ঠান্ডা হয়ে গেছে । তখন আমি নিজের মনে মনে করছিলাম, তাহলে কি মারা গেল? সেই কারনেই কি কপালটা এত ঠান্ডা?’ সেই সঙ্গে রেবাদেবী জানান,আত্মীয় স্বজনরা দুরে দুরে থাকে ৷ তাই তাঁর পক্ষে তাঁদের খবর দেওয়া সম্ভব হয়নি ।
তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন,আসলে মানসিকভাবে অসুস্থ ওই বৃদ্ধা বুঝতেই পারেননি যে ওনার স্বামী মারা গেছেন । বৃদ্ধা ভেবেছিলেন তাঁর স্বামী ঘুমচ্ছেন । মঙ্গলবার বৃদ্ধের দুই মেয়ে আসার পর স্থানীয় ক্লাবের সদস্যরা বৃদ্ধের মৃতদেহের সৎকার করেন ।।