লক্ষ্মীশ্রী চৌধুরী, মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),৩০ সেপ্টেম্বর : দুর্গাপুজোয় মহাঅষ্টমীর সন্ধিক্ষণে যে দেবীকে নিয়ে মেতে ওঠেন বিশ্ববাসী, সেই দেবী চামুণ্ডার অধিষ্ঠান আর কোথাও না। একেবারে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের মাইচপাড়ায়। মঙ্গলবার সন্ধিপুজোয় সেই দেবী চামুণ্ডাকে নিয়ে মেতে উঠলেন দূরদূরান্তের ভক্তরা। পুজোপাঠ থেকে চন্ডীপাঠ, আরতি থেকে ছাগবলিতে মেতে উঠলেন তারা। উল্লেখ্য, দেবী দুর্গার আর এক রূপ দেবী চামুণ্ডা। পৌরাণিক কাহিনী থেকে জানা যায়, অসুর শুম্ভ- নিশুম্ভ দেবী কৌশিকীকে তার কাছে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য অসুর চন্ড-মুন্ডকে পাঠিয়েছিলেন। চন্ড-মুন্ড তার বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে দেবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেন। চন্ড-মুন্ডের কথা শুনে দেবীর কপাল যায় কুঁচকে, রাগে ভ্রূ যায় বেঁকে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসে কদাকার দেখতে বিকট এক নারী মূর্তি। ঘোর কালো তার গায়ের রং। গায়ে মাংস বলতে কিছুই নেই। শুধু হাড় আর চামড়া। গলায় নরমু্ন্ডের মালা। পরনে বাঘের ছাল। লকলক করে তার জিহ্বা। চোখ দুটো কোটরের ভিতর। তা থেকে ঠিকরে পড়ছে আগুন। সেই দেবীর নাম হল চামুন্ডা। দেবী কৌশিকীকে সাহায্য করতে দেবী চামুন্ডা অসুর চন্ডমুন্ডকে বধ করেন।
কথিত আছে যে বর্ধমানের মহারাজা কীর্তি চন্দ্র রায়কে মা চামুণ্ডা স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন । তারপর মহারাজা মা চামুণ্ডার পূজার প্রচলন শুরু করেন । ব্রাহ্মণ থেকে শুরু করে পুজোর জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের জন্য যাদের ওপর দায়িত্ব পড়েছিল তাদের প্রত্যেককে জমি দিয়ে গিয়েছিলেন মহারাজা । এমনকি প্রতিদিনের নিত্য সেবায় যারা ঢাক বাজান তাদেরকেও জমি দিয়ে গেছেন তিনি ।
মন্তেশ্বরের মাইচপাড়ার দেবী চামুন্ডার সেবাইত বলেন, দুর্গাপূজার মতই মহাষষ্ঠীর দিন মা চামুন্ডার সামনে ঘট স্থাপন করা হয় । ওই ঘটকে সামনে রেখে আমরা ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী এই পাঁচ দিন ধরে পুজো করি । সন্ধি পূজায় শুধু মা চামুণ্ডার পূজা হয় ।শ্রদ্ধালুরা মায়ের কাছে এসে পূজার্চনা পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে আশীর্বাদ গ্রহণ করেন ।’ তিনি জানান, সর্বত্রই ইনি সেই চামুন্ডা যিনি সন্ধি পূজায় পূজা গ্রহণ করে ।
স্থানীয় বাসিন্দা সজল কুন্ডু বলেন,’মন্তেশ্বরের মাইচপাড়ায় দেবী চামুন্ডার অধিষ্ঠান হওয়ায় আগে এলাকায় কোন দুর্গাপুজো হতো না। এখন হয়তো দু-চার জায়গায় বারোয়ারি পূজোর আয়োজন করা হচ্ছে৷’।