শ্যামসুন্দর ঘোষ,কালনা,২৫ ফেব্রুয়ারী : “রথ দেখা ও কলা বেচা”- প্রবাদটাকে বাস্তবে প্রমাণ করে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগ রাজের মহাকুম্ভ মেলা । উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দাবি করেছিলেন যে আধ্যাত্মিক উৎসব মহাকুম্ভ থেকে রাজ্যের অর্থনীতিতে ৩ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আনবে । তবে মহাকুম্ভ মেলা উত্তরপ্রদেশে অর্থনীতিকে ঠিক কতটা সাহায্য করবে সেটা ভবিষ্যৎ দেখা যাবে । কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রের ব্যবসায়ীরা যে এই আধ্যাত্মিক উৎসব থেকে চরম উপকৃত হয়েছেন তা স্পষ্ট নজরে পড়ছে । এমনকি মহাকুম্ভের কারনে কার্যত কপাল খুলে গেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনার পূর্বস্থলীর কুল চাষিদের । লরি লরি কুল প্রতিদিন পাড়ি জমাচ্ছে প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে । চাষিরা জানিয়েছেন যে সেখানে পূর্বস্থলীর কুলের চাহিদা ব্যাপক রয়েছে । আর এই চাহিদার কারণেই এবারে তারা মোটা টাকা মুনাফাও করছেন ।
জানা গেছে,সব্জির দাম ঠিক মতন না পেয়ে কয়েক বছর ধরেই বিকল্প চাষ হিসাবে কুল চাষ বেছে নিয়েছেন পূর্বস্থলীর এলাকার অনেক চাষী। সরস্বতী পূজার আবহে মূলত তাদের কুল বিক্রি হয় । পাশাপাশি তারা পড়শি রাজ্য বিহার, ঝাড়খণ্ডেও কুল সরবরাহ করে থাকেন । ফলে সবজির থেকে এই কুল চাষে তাদের অর্থ এনে দেয় বেশি । কিন্তু এবছরটা ছিল তাদের কাছে একটা স্পেশাল বছর । সৌজন্যে মহাকুম্ভ মেলা । এই মেলা শুরু হওয়ার আগে থেকেই উত্তরপ্রদেশে লরি লরি কুল পাঠাচ্ছে শুরু করেন পূর্বস্থলী চাষীরা ।পূর্বস্থলীর বিভিন্ন এলাকার বাউকুল, ভারতসুন্দরি, বলসুন্দরি ইত্যাদি নানা প্রজাতির কুলের সেখানে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে । ভালো মোটা অঙ্কের মুনাফাও করছেন চাষিরা। স্থানীয় চাষি বলরাম মণ্ডল, মিলন রায়,সঞ্জয় মালরা বলেন,’প্রতিদিন লরি লরি কুল যাচ্ছে প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে । দেড় মাসের অধিক সময় ধরে চলা এই মেলায় আমাদের প্রচুর কুল বিক্রি হয়েছে । যে কারণে এবারে আমাদের স্থানীয় বাজারের উপর বেশি নির্ভর করতে হয়নি । পাশাপাশি আমরা ভালো দাম পেয়েছি । কুল বিক্রি করে এই প্রথম আমরা এত মুনাফা করতে পারলাম ।’ তাদের প্রত্যেকের মুখে দেখা গেল চওড়া হাসি।
প্রসঙ্গত, ভাগীরথীর তীরবর্তী পূর্বস্থলী এলাকায় মাটির উর্বরতার কারণে ব্যাপক হারে সবজির চাষ হয় । উৎপাদন হয় প্রচুর । বাজারে প্রচুর জোগান থাকায় তারা ঠিকমতো সবজির দাম পাননা । পাশাপাশি সবজি সংরক্ষণের জন্য সরকারিভাবে তেমন ব্যবস্থা না থাকায় সবজি পচে গিয়ে তাদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়। সেই কারণে তারা বিকল্প চাষের দিকে ঘুরতে শুরু করেছেন। আর এই বিকল্প চার্জ হিসেবে তারা কুল কে বেছে নিয়েছেন । পূর্বস্থলীর মুকশিমপাড়া, কালেখাঁতলা-১, শ্রীরামপুর, বকপুর অঞ্চলের বহু চাষি কুল চাষ করছেন। পাশাপাশি পূর্বস্থলী-২ ব্লকের সরডাঙা, বড়গাছি এলাকাতে বিঘার পর বিঘা জমিতে বাউকুল, বলসুন্দরি, ভারত সুন্দরি প্রজাতি কুলের চাষ করে আসছেন স্থানীয় চাষিরা ।।