শ্যামসুন্দর ঘোষ,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),১৬ জুলাই : পাশাপাশি বাড়ি তরুন-তরুণীর । দু’জনের মধ্যে গড়ে উঠেছিল প্রেমের সম্পর্ক । ইতিমধ্যে তরুণীর বিয়ে ঠিক করে তার পরিবার । ঘটনার কথা কানে যেতেই সে ছুটে আসে প্রেমিকের বাড়িতে । কিন্তু তার পরিবারের লোকজন বাড়িতে চড়াও হয়ে দুজনকেই ব্যাপক মারধর করে এবং তরুনীকে চুল ধরে টানতে টানতে বাড়ি নিয়ে যায় বলে অভিযোগ । এদিকে প্রেমিকার সঙ্গে এই প্রকার অমানবিক আচরণ মেনে নিতে পারেনি যুবক ৷ শেষ পর্যন্ত তিনি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিলেন । মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর থানার সুটরা গ্রামে । পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম জিৎ হালদার ওরফে অপূর্ব(১৯)। মঙ্গলবার বিকেলে নিজের বাড়িতে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে তড়িঘড়ি মন্তেশ্বর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসে পরিবারের লোকজন । কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি । মৃতদেটি আজ ময়না তদন্তের জন্য কানলা মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ।
জানা গেছে, মন্তেশ্বর থানার সুটরা গ্রামের বাসিন্দা সনু হালদার ও চুমকি হালদারের একমাত্র ছেলে জিৎ হালদার ওরফে অপূর্বর । সনু হালদার শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ৷ অত্যন্ত হতদরিদ্র পরিবার তাদের । অপূর্বদের পাশাপাশি বাড়ির এক তরুণীর সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল । সম্প্রতি তরুণীকে না জানিয়ে তার বিয়ে ঠিক করে ফেলে পরিবার । কিন্তু কোনভাবে বিষয়টি জানতে পেরে যান তরুণী । বিয়ের কথা কানে যেতেই সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছুটি আছেন প্রেমিকের বাড়িতে ।
মৃতের মা চুমকি হালদার বলেন,’মেয়েটি আমাদের বাড়িতে পালিয়ে আসার পর আমি তাকে ফিরে যাওয়ার জন্য অনেক বোঝাই । কিন্তু মেয়েটি ফিরে যায়নি । সেই সময় আমার ছেলে বাড়িতে ছিল না। ইতিমধ্যে মেয়েটির পরিবারের বেশ কয়েকজন মহিলা ও পুরুষ আমাদের ওপর চড়াও হয় । তারা মেয়েটিকে ব্যাপক মারধর করে। খবর পেয়ে আমার ছেলে বাড়িতে ছুটে আসে । তাকেও মারধর করে । এরপর মেয়েটির কাকা তাকে চুল ধরে হিড় হিড় করে টানতে টানতে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যায় ।’
বৃত্তের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নিজের বাড়িতেই প্রেমিকার ওপর ঘটে যাওয়া এই অত্যাচার মেনে নিতে পারেননি অপূর্ব । ঘটনার পর তিনি মনমরা হয়েছিলেন । খাওয়া-দাওয়াও ঠিক মত করত না ওই যুবক । এরপর মঙ্গলবার বিকেল প্রায় চারটে নাগাদ অপূর্বর ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায় পরিবারের লোকজন । বাবা-মায়ের আর্ত চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন । যুবককে দড়ি কেটে নিচে নামিয়ে দ্রুত মন্তেশ্বর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন । পরে খবর পেয়ে পুলিশ মৃতদেহটি থানায় নিয়ে আসে । আজ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় ।
মৃতের জ্যাঠা গোপাল হালদার বলেন,’একদিকে এই অপমান এবং অন্যদিকে মেয়েটির ওপর অমানসিক নির্যাতন আমার ভাইপো সহ্য করতে পারেনি । মেয়েটি ও চেয়েছিল যে আমার ভাইপোর সঙ্গে সংসার করতে । কিন্তু ওর পরিবার সেটা আর হতে দিল না । নিজের ভালবাসাকে পাবেনা বুঝতে পেরেই আমার ভাইপো এই চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে ।’ যদিও এই বিষয়ে থানায় কোন লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে জানা গেছে । একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ।।

