জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতা,১৬ মে : গোটা এপ্রিল মাসে ছিল বাঁধন ছাড়া উত্তাপ। গত কয়েক দিন ধরে ছিল মিশ্র আবহওয়া – সকালে গরম তো বিকেলে ঝড় বৃষ্টি। এদিকে এগিয়ে আসছে ‘মানসকন্যা’-র প্রকাশ ক্ষণ। অতিথিদের আমন্ত্রণ সহ সমস্ত আয়োজন শেষ। স্বাভাবিক ভাবেই গভীর উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটছিল ‘কাব্যতরী’ সাহিত্য পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তথা প্রাণপুরুষ প্রবীর চৌধুরীর। অবশেষে বাহ্যিক নয়, আন্তরিকতার আড়ম্বরের মধ্যে দিয়ে গত ১৫ ই মে গড়িয়ার আজাদ হিন্দ পাঠাগার মঞ্চে উপস্থিত অতিথিদের হাত ধরে আত্মপ্রকাশ ঘটল ‘কাব্যতরী’ সাহিত্য পত্রিকার ষষ্ঠ বর্ষের প্রথম সংখ্যার এবং পত্রিকা প্রকাশ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হলো এক সুন্দর ও আকর্ষণীয় সাহিত্যানুষ্ঠানের।
অনুষ্ঠান শুরুর সময়টা ছিল দুপুর দেড়টা । তার অনেক আগে থেকেই বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, আমতলা, বনগাঁ সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রানের উচ্ছাসে ও গভীর আন্তরিকতায় সাহিত্যকে ভালবেসে একে একে হাজির হন সাহিত্য প্রিয় প্রায় পঁচাত্তর জন কবি-সাহিত্যিক। সাহিত্যের টানে কার্যত বিনা আমন্ত্রণে হাজির হলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক দিলীপ রায়। সত্যিই এ এক বিরল ঘটনা। মধুমিতা হালদার তো বলেই ফেললেন – পবিত্রদার অনুষ্ঠানে বিনা আমন্ত্রণে আসা যায়। একে একে হাজির হলেন কবি-সাহিত্যিক বৈজয়ন্ত রাহা, অজিতেশ নাগ, সৌমিত বসু, বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হলেন কলকাতা অসামরিক প্রতিরক্ষা দপ্তরের নিয়ামক কবি উৎপল নস্কর, ভাষাসরিৎ সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক তথা বিশিষ্ট কবি নদেরচাঁদ হাজরা প্রমুখ। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে তাদের যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে বরণ করা হয়।
এর আগে উদ্বোধনী সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। অংশগ্রহণ করেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল, সমর্পিতা রাহা, শর্মিলা দাস রায়, মালা চ্যাটার্জ্জী, চন্দ্রাবলি বন্দোপাধ্যয় প্রমুখ। এরপর উপস্থিত কবিরা স্বরচিত কবিতা পাঠের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানটিকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেন।
উদ্যোক্তাদের সৌজন্যে সম্ভবত কোনো সাহিত্য অনুষ্ঠানে প্রথমবারের জন্য অভিনব এক আঙ্গিকের সাক্ষী থাকার সুযোগ পেলেন উপস্থিত অতিথিরা। অনুষ্ঠানে বিধায়ক ভট্টাচার্য গীতা থেকে শ্লোক পাঠ করেন ও কোরান শরীফ থেকে পাঠ করেন সাইফুল ইসলাম । সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ এক অসাধারণ নিদর্শন ।
পত্রিকা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে অন্যান্য বছরের মতো এবছরও আন্তরিকতার সাথে সাহিত্য পরিবারকে পরিচালনা করেন এমন চারটি সাহিত্য পরিবারকে এবং নিঃস্বার্থ ভাবে সমাজসেবার কাজে ব্রতী আছেন এমন একটা সংস্থাকে ‘অনিল কুমার চৌধুরী স্মৃতি সম্মাননা ২০২২’ স্মারক দিয়ে সম্মান জানানো হয়। সংস্হাগুলি হলো দীপায়ন সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদিকা কবি শিলাবৃষ্টি,
সঞ্জীবনী সাহিত্য পরিবারের সম্পাদিকা কবি শর্মিষ্ঠা শেঠ, অক্ষর কথা সাহিত্য পত্রিকার সম্পদক স্বরূপ চক্রবর্তী, কবিগুরু সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক কবি বিষ্ণু ঘোষ।
এবং সমাজ সেবামূলক কাজের জন্যে
অর্কদ্বীপের সোপানের সম্পাদিকা দীপ্তি রায় বিশ্বাস। প্রসঙ্গত এরা প্রত্যেকেই বিনা মূল্যে পত্রিকার সৌজন্য কপি বিতরণ করেন। মঞ্চে উপস্থিত বিশেষ অতিথিদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ‘কাব্যতরী ভাষা সাহিত্য সম্মাননা ২০২২’ এবং উপস্থিত প্রত্যেক কবির হাতে তুলে দেওয়া হয় ‘অনিল কুমার চৌধুরী স্মৃতি স্মারক’।
স্বরচিত কবিতা পাঠ, সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা ইত্যাদিতে কেটে যায় প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। এই অনুষ্ঠানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল এককভাবে কেউই অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেননি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জন সঞ্চালনা করলেও অনুষ্ঠানের মান কখনোই নষ্ট হয়নি।
প্রচণ্ড উষ্ণতা ও ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কাকে
উপেক্ষা করে সাহিত্যের টানে দূর দূরান্ত থেকে যেভাবে কবি-সাহিত্যিকরা ছুটে এসেছেন তার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ‘কাব্যতরী’ পত্রিকা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তথা প্রাণপুরুষ প্রবীর চৌধুরী বললেন – আজ সত্যিই খুব আনন্দের দিন। বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি-সাহিত্যিকদের উপস্থিতিতে সভাগৃহ হয়ে উঠেছিল সত্যিকারের মিলন মেলা। আশাকরি আগামীদিনেও এদের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন প্রতিভাদের পাশে পাব ।।