প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৭ এপ্রিল : কোভিড সংক্রমণে মৃতদের দেহ সৎকার নিয়ে শ্মশানে সক্রিয় হয়ে উঠেছিল দালাল চক্র।সেই দালাল চক্রের এক পাণ্ডাকে হাতেনাতে পাকড়াও করে গণধোলাই দিল সাধারণ মানুষজন । শুনতে অবাক লাগলেও সোমবার রাতে এমনই ঘটনা ঘটেছে বর্ধমানের নির্মল ঝিল শশ্মানে । যা জানার পর তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন আপানোর বর্ধমানবাসী । শুরু হয়েছে দালাল চক্রের সদস্যদের খোঁজ ।
গোটা দেশ জুড়ে উর্ধ্বমুখী করোনার গ্রাফ ।এই রাজ্যেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।গোটা রাজ্যের সঙ্গে পাল্লাদিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ।স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী সোমবার একদিনে জেলায় ৪৫৫ জন কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন । পাশাপাশি একদিনে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের । এই পরিস্থিতিতে কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া ব্যক্তির দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করা নিয়ে বর্ধমানে সক্রিয় হয়ে ওঠে দালাল চক্র । দেহ সৎকার নিয়ে উৎকন্ঠায় থাকা মৃতর পরিবার সদস্যদের বোকা বানিয়ে মোটা টাকা কামাচ্ছিল বর্ধমানের একটি অসাধু দালাল চক্র। অভিযোগ শহর বর্ধমানের বেশ কয়েকটি নার্সিং হোমের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই অসাধু দালাল চক্র তাদের কাজ হাঁসিল করে চলেছে । ওই চক্র বর্ধমান শহরে বেশ কয়েকটি নার্সিং হোমও সক্রিয় বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ ।
ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা রবি দাস , পল্লব রায় প্রমুখরা অভিযোগে বলেন , করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া ব্যক্তির পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেয় অসাধু চক্রের সদস্যরা। পরে রাতে তারা বর্ধমানের নির্মল ঝিল শ্বশানে দেহ দাহ করতে নিয়ে যায়। স্বাস্থ্য দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির পরিবারের কয়েকজন সদস্যও দালালদের হাতধরে শ্মশানে পৌছে যাচ্ছিলেন ধর্মীয় রীতি রেওয়াজ মেনে দেশ সৎকার করার জন্য ।
সোমবার রাতে বর্ধমানে নির্মল ঝিল শ্মশানে এমন অনিয়ম করেই এক করোনা আক্রান্তের দেহ সৎকারের প্রস্তুতি চলছিল ।যদিও প্রশাসনের নিয়ম আছে, কোভিডে মারা যাওয়া ব্যক্তির দেহ কোনরকম পূজার্চনা ছাড়াই সরাসরি পুড়িয়ে দিতে হবে । এই কাজ রাত দশটার পর করার কথাও বলা আছে প্রশাসনের তরফে । ঘটনার কথা জানার পরেই ক্ষিপ্ত শহর বর্ধমানের মানুষজন শ্মাশান চত্বরে পৌছে দালাল চক্রের লোকজনকে হাতেনাতে পাকড়াও করে। শুরু হয় গণধোলাই। খবর পেয়ে বর্ধমান থানার আই সি পিন্টু সাহার নেতৃত্বে পুলিশ আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌছান । তারই মধ্যে শ্মশান চত্ত্বর ছেড়ে পালিয়ে যান দালাল চক্রের লোকজন । পল্লব বাবু বলেন ,তাঁরা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন এই অসাধু চক্রে জড়িত রয়েছে নার্সিংহোমের কয়েকজন দালাল এবং অ্যাম্বুলেন্স চালকরা ।
এই বিষয়ে বর্ধমান পৌরসভার আধিকারিক অমিত গুহ বলেন, “ঘটনার কথা জানার পরেই পৌরসভার পক্ষ থেকে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।সন্ধ্যা ৬ টা থেকে সকাল ৬ টা পর্যন্ত শ্মশান চত্ত্বরে পুলিশ ক্যাম্প করার জন্য জেলার পুলিশ সুপারকে চিঠি করা হয়েছে।এছাড়াও বেসরকারি নাসিংহোমে কেউ কোভিডে মারা গেলে সেই সংক্রান্ত তথ্য পৌরসভাকে যাতে জানানো হয় তার জন্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককেও চিঠি পাঠানো হয়েছে।’।