এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাটোয়া,১৫ ডিসেম্বর : প্রকাশ্যে দলের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করলেন কাটোয়া পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তৃনমুল নেতা অমর রাম। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি কাটোয়ার মাধবীতলায় দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নেতৃত্বের উপর ক্ষোভ উগরে দেন অমর রাম । তাঁর সঙ্গে ছিলেন দুই বিদায়ী কাউন্সিলর শ্যামল ঠাকুর ও ভাস্কর মন্ডল ও প্রনব দত্তসহ কয়েকজন ঘনিষ্ট নেতা ও নেত্রী ।
সম্মেলনের শুরুতেই অমর রাম বলেন, ‘জেলা ও রাজ্যের যাঁরা আমাদের নেতৃত্ব দেন প্রাক্তন চেয়ারম্যান হিসাবে তাঁদের বিরুদ্ধে একটা ক্ষোভ প্রকাশ করার জন্য আজকে আপনাদের ডেকেছি ।’
তারপরেই কাটোয়ার বই মেলায় তাঁকে ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের আমন্ত্রন না জানানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অমর রাম । তাঁদের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে অমর রাম বলেন, ‘২০১৩ সালের পর থেকে ২০১৫ সালে যে পৌর নির্বাচন হয়েছিল সেই নির্বাচনে তৎকালীন কংগ্রেসের যিনি নেতা ছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করে কাটোয়া পুরসভায় তৃনমুল কংগ্রেসকে প্রতিষ্ঠা করেছিলাম । তার জন্য আমাদের এক কর্মীকে হারাতে হয়েছিল । ইন্দ্রজিৎ সিং নামে ওই কর্মীকে খুন করেছিল কংগ্রেসী গুন্ডারা । কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তৃনমুলকে প্রতিষ্ঠা করেছিলাম পরে তাদেরকেই আমাদের দলে নেওয়া হল । দলের শ্রীবৃদ্ধির হচ্ছে দেখে আমরা মেনে নিয়েছিলাম ৷ সেই সময় শীর্ষ নেতৃত্ব বলেছিল আইন আইনের পথে চলবে । যারা দোষী তাদের সঠিক বিচার হবে । জানি না কি বিচার হবে। যত দিন যাচ্ছে বিচারের জায়গাটা অন্ধকার হয়ে আসছে ।’
এরপর অমর রাম বলেন, ‘তারপর কংগ্রেস থেকে যারা তৃনমুলে এসেছিল তারাই আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে দিল । ২০১৬ সালে কংগ্রেসের এম এল এ তৃনমুলে চলে এলেন । দল তাঁকেই বিধানসভার টিকিট দিল । আমরা দলীয় প্রার্থীকে জেতানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম । কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত কাটোয়ার মানুষ ওই প্রার্থীটাকে গ্রহন করেনি । কোনও ভাবে জিতে গেছে । ৯০৬-৭ ভোটে জিতেছিলেন। যেটাকে জেতা বলে না । পরে এনিয়ে দলে বিশ্লেষন হয়নি। উলটে বোঝানো হল অমর রামদের জন্য এই অবস্থা হয়েছে । কোনও বিশ্লেষন না করেই এটা মেনে নিয়েছিল শীর্ষ নেতৃত্ব৷ তারপর ২০১৭ সালে অনাস্থা এনে আমাকে পুর প্রধান থেকে সরিয়ে দেওয়া হল । কেন সরানো হল। কোন অপরাধে সরানো হল, তার কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায়নি ।’
প্রসঙ্গত,অমর রাম একসময় কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ ছিলেন । তখন রবীন্দ্রনাথ ছিলেন কংগ্রেসে। ২০১৩ সালে অমরবাবু রবীন্দ্রনাথের সঙ্গ ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। তারপর ২০১৫ সালে পুরভোটে মূলত তারই নেতৃত্বে কাটোয়া পুরসভা দখল করে তৃণমূল । চেয়ারম্যান হন অমর রাম । পরে রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলে যোগ দেন । তারপর থেকেই অমর রাম গোষ্ঠী ও রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ শুরু ।
এদিন অমর রাম বলেন, ‘আমরা যাতে মিটিং-এ না যাই দিনের পর দিন সেই ব্যাবস্থা করা হত । হেয় প্রতিপন্ন করা হত । তা সত্ত্ব্বেও আমরা দলের মিটিং-এ গেলে আমাদের হেয়ো প্রতিপন্ন করা হত । তাই নিজের সম্মান রক্ষার্থে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।’
পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে শুরু হল অমর রাম বিজেপি করছে । ২০১৭ সালে আমাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল । লাভ কি হল? ২০১৯ লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে কাটোয়া বিধানসভা থেকে হেরে গেল দল । তার কোনও ব্যাখ্যা হল না। এনিয়ে জেলা নেতৃত্ব কোনও আলোচনা করল না । কোনও আলোচনা না করেই দিনের পর দিন একজনকে ফ্রি হ্যান্ড দেওয়া হচ্ছে।’ পাশাপাশি জেলা নেতৃত্বের প্রতি তাঁর অভিযোগ, প্রয়োজনে ফোন করলে তাঁর ফোন ধরা হয় না ।
অমর রাম বলেন, ‘আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই বার্তাটাই দিতে চাই, ভালো করে দেখুন কারা তৃনমুলটাকে শেষ করল । এবং এখনও কারা শেষ করছে ।’ এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে দলের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন অমর রাম। তাঁর এই বিদ্রোহ ঘিরে কার্যত চরম অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল।