শ্যামসুন্দর ঘোষ,মেমারি(পূর্ব বর্ধমান),০৪ আগস্ট : বহু দশক আগে বামফ্রন্টের জমানায় মোড়াম পড়েছিল গ্রামের যাতায়তের মূল রাস্তায় । তারপর দশকের পর দশক কেটে গেছে । কোনো এক অজ্ঞাত কারনে মেমারির দু’নম্বর ব্লকের বিজুর এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কন্দর্পুর গ্রামের রাস্তা সংস্কারের কোনো প্রকার উদ্যোগই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ । আজ রাস্তায় মোড়ামের ছিঁটেফোটা নেই । এদিকে লাগাতার বৃষ্টিপাতের পর রাস্তার মাটি গলে গিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে । রাস্তার মাঝে মাঝে গভীর গর্তে জমেছে জল । তার উপর গ্রামের পাশে যাওয়া কালনা-বর্ধমান সড়কপথ জলমগ্ন হয়ে পড়ায় সমস্ত যানবাহন কন্দর্পুর গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাতায়ত করছে । ফলে আরও বেহাল হয়ে পড়েছে রাস্তাটি । শেষ পর্যন্ত শনিবার রাস্তা অবরোধ করে সমস্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিল ক্ষিপ্ত জনতা ।
জানা গেছে,মেমারির বিজুর এক অঞ্চলের কন্দর্পুর গ্রামের প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তাটি দীর্ঘদিন দিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছেন । রাস্তাটি জেলাপরিষদের অধীনে ৷ কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে জেলা পরিষদ রাস্তাটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ । কন্দর্পুর গ্রামের বাসিন্দা মিতা হাঁসদা, হৃদয় দত্ত,অভিষেক মন্ডলরা বলেন, ‘রাস্তা সংস্কারের দাবিতে আমরা পঞ্চায়েত, ব্লক প্রশাসন, জেলাপরিষদ, জেলাশাসকের কাছে বহুবার তদ্বির করেছি । কিন্তু কারোই টনক নড়েনি । রাস্তা শুকনো থাকলে তবুও চলাচল অন্তত করা যায়৷ কিন্তু কয়েকদিন ধরে লাগাতার বৃষ্টিপাতের কারনে গোটা রাস্তায় কোথাও একহাঁটু কাদা, কোথাও বড়বড় খানাখন্দে জল জমে আর চলাচল করা যাচ্ছে না । তার উপর পাশের কালনা-বর্ধমান সড়কপথ জলমগ্ন হয়ে পড়ায় গ্রামের রাস্তা দিয়ে সমস্ত যানবাহন চলাচল করছে, ফলে আরও বেহাল অবস্থা হয়ে পড়েছে রাস্তাটি । এদিকে স্কুল পড়ুয়াদের স্কুলে যাওয়া এবং রোগী ও প্রসূতিদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে ।’
জানা গেছে,শনিবার বেলার দিকে কন্দর্পুর গ্রামের বেশ কিছু মহিলা ও পুরুষ রাস্তা অবরোধ শুরু করে । প্রচুর যানবাহন আটকে যায় । জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের দুই মহিলা কর্মী বাইকে চড়ে অফিসের কাজে যাচ্ছিলেন । কিন্তু তারা অবরোধে আটকে পড়েন । তাদের মধ্যে সোহিনী চ্যাটার্জি নামে এক স্বাস্থ্য কর্মী গ্রামের রাস্তার বেহাল অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে যান । তিনি বলেন, ‘এতদিন ধরে গ্রামের লোকজন এই রাস্তা দিয়ে কিভাবে যাতায়াত করছে সেটা ভেবেই অবাক লাগছে । একজন প্রসূতিকে হাসপাতালে পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারল না দেখলাম । কি হবে তার ?’ তিনি গ্রামবাসীদের রাস্তা অবরোধকে সমর্থন করে বলেন,’অনেক আগেই গ্রামবাসীদের প্রতিবাদ করা উচিত ছিল ।’ যদিও ওই দুই স্বাস্থ্য কর্মী তাদের গন্তব্যে যেতে না পেরে ফের বর্ধমানে ফিরে যান ।
এদিকে বেশ কয়েক ঘন্টা অবরোধ চলার পর ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন মেমারি দু’নম্বর ব্লকের বিডিও বিশাখ ভট্টাচার্য । আসে মেমারি থানার সাতগেছিয়া ফাঁড়ির পুলিশ । অবরোধকারীরা বিডিওকে গ্রামের ভিতরে গিয়ে রাস্তা পরিদর্শনের জন্য অনুরোধ করেন । কিন্তু রাস্তার বেহাল অবস্থা দেখে তিনি পরিদর্শনে যেতে রাজি হননি বলে অভিযোগ । শেষে বিডিও-এর কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে অবরোধ তুলে নেওয়া হয় । বিডিও বিশাখ ভট্টাচার্য বলেন,’সিএমআরও পোর্টালে অভিযোগ করা হয়েছিল । রাস্তা সংস্কারের জন্য অর্থের অনুমোদন হয় কিনা দেখা যাক । তবে পরের সপ্তাহে ব্লকের ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে পরিদর্শন করিয়ে কন্দর্পুর গ্রামের রাস্তার বিশেষ বিশেষ অংশ মেরামত করার ব্যবস্থা করব ।’ এদিকে গ্রামবাসীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে গোটা রাস্তাটা পাকা না করা হয় তাহলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন ।।