এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),১১ জুন : মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের ঘাতক স্ত্রী সোনম রঘুবংশীকে নিয়ে এখন দেশ জুড়ে তোলপাড় চলছে । ঠিক একই কায়দায় পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার আমূল গ্রামের মহাদেব দাসকে খুন করে তার স্ত্রী মিতা দাস । স্বামীকে কার্বলিক অ্যাসিড যুক্ত মদ পান করিয়ে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে খুনের পর ঘাতক স্ত্রী মিতা তার প্রেমিককে ফোন করে বলেছিল…“কাজ শেষ” । পুলিশের জেরায় একথা স্বীকার করেছে ওই মহিলা । আমূল গ্রামের মহাদেব দাসকে খুনের ষড়যন্ত্রে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত থাকায় মিতার প্রেমিক অভিজিৎ বাগদীকে গ্রেপ্তার করেছে কাটোয়া থানার পুলিশ । আজ বুধবার তাকে গ্রেপ্তারের পর কাটোয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয় ।
ঘাতক স্ত্রীর একাধিক পুরুষের সাথে সম্পর্ক
জানা গেছে,কাটোয়ার আমূল গ্রামের এই চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনার তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে যে মিতা দাসের একাধিক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল । প্রায়ই সে কোনো না কোনো পুরুষদের সাথে পালিয়ে যেত । নাবালক সন্তানদের কথা ভেবে স্বামী মহাদেব ও পরিবারের লোকজন তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ফিরিয়ে আনত । কিন্তু মিতার চরিত্রের বদল হয়নি । সম্প্রতি নানুনের বাসিন্দা অভিজিৎ বাগদীর সঙ্গে তার ফেসবুকে পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে । কিন্তু সেই সম্পর্কের কথা টের পেয়ে যায় মিতার স্বামী মহাদেব । এনিয়ে আশান্তিও করছিলেন তিনি । তাই প্রেমের পথের কাঁটা স্বামীকে সরাতে প্রেমিকের সাথে মিলে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে মিতা দাস ।
কিভাবে খুন ?
মিতা দাস যেভাবে তার স্বামীকে খুন করেছিল তা যেকোনো পেশাদার খুনিকেও হার মানাবে । আসলে, সেদিন ছিল জামাইষষ্ঠী । কিন্তু বিশেষ এই দিনটা যে জীবনের শেষ দিন হতে চলেছে সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি মহাদেব দাস । এদিকে আগে থেকেই প্রেমিক অভিজিতের সঙ্গে মিলে স্বামীকে খুনের ছক কষে রেখে দিয়েছিল মিতা । পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা বলে সেদিন স্থানীয় বাজারে প্রেমিক অভিজিতের সাথে মিলিত হয় মিতা । অভিজিত তাকে এক বোতল কার্বলিক অ্যাসিড কিনে দেয় । এক বোতল মদও কেনে । সেগুলি সকলের নজর এড়িয়ে নিজের ঘরে লুকিয়ে রাখে মিতা । তারপর রাতে দুই নাবালক সন্তান ঘুমিয়ে পড়লে কার্বলিক অ্যাসিড মেশানো মদ স্বামীকে পরিবেশন করে ওই মহিলা ।
ঘাতক স্ত্রীর তারপরের স্বীকারোক্তি শুনে কার্যত হতভম্ব হয়ে যান কাটোয়া থানার পোড় খাওয়া আধিকারিকরা । মিতা জেরায় জানায় যে কার্বলিক অ্যাসিড মেশানো মদ পান করার কিছু পরেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন মিতার স্বামী মহাদেব । ঘরের সামনে দাওয়া থেকে তিনি উঠানে লুটিয়ে পড়েন । সেই অবস্থায় স্বামীর মাথায় একটা বাঁশ দিয়ে সজোরে আঘাত করে মিতা । বাঁশের আঘাতে রক্তাক্ত হয় মহাদেবের মাথা । এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ঘর থেকে একটা বালিশ এনে তার মুখ চেপে ধরে সে ।
প্রমান লোপাটের চেষ্টা
তবে এখানেই শেষ নয় । খুনের পর স্বামীর দেহটা টেনে ঘরে এনে একটা চাদর ঢাকা দিয়ে দেয় মিতা দাস । এরপর ঠান্ডা মাথার খুনির মতই প্রমান লোপাটের চেষ্টা করে ঘাতক স্ত্রী । উঠানে পড়ে থাকা রক্তের দাগ জল মেশানো গোবর দিয়ে প্রলেপ দিয়ে দেয় । সমস্ত কাজ সারা হয়ে গেলে প্রেমিককে ফোন করে বলে…”কাজ শেষ” । এরপর পরের দিন সকালে উঠে স্বামীর হৃদরোগে মৃত্যুর গল্প ফাঁদে মিতা দাস । কিন্তু মৃতের মাথায় রক্ত ও গলায় কালশিটে দাগ দেখে পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয় । তারাই কাটোয়া থানায় ফোন করে ঘটনার কথা জানায় । খবর পেয়ে পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি মিতা দাসকে আটক করে জেরা শুরু করে । আর পুলিশের ম্যারথন জেরায় সে স্বামীকে খুনের কথা কবুল করে । পুলিশ জানিয়েছে, এই খুনের ষড়যন্ত্রে আর কেউ যুক্ত আছে কিনা তা জানার চেষ্টা হচ্ছে । বিশেষ করে মিতা দাসের বাপের বাড়ির লোকেরা এখন পুলিশের র্যাডারে রয়েছে বলে খবর ।।

