এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৮ সেপ্টেম্বর : তৃণমূল ছাত্র পরিষদের চাঁচল কলেজ ইউনিটের নেতৃত্বে দিন দুয়েক আগে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে একটি জমায়েতে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছবিতে আগুন লাগায় । তৃণমূল ছাত্র পরিষদের চাঁচল কলেজ ইউনিটের সভাপতি এ. বি. সোহেলের নেতৃত্বে গত ২রা সেপ্টেম্বর ওই জমায়েতে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশ্ববরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি তো আগুন ধরায় তারা৷ বিষয়টা নিয়ে শাসক দল মুখে কুলুপ এঁটে থাকলেও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিজেপি । রাজ্য বিজেপির সভাপতি ও রাজ্যসভার সদস্য শমীক ভট্টাচার্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি পোড়ানোর ঘটনায় আজ সোমবার কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলনে তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘আজ যে জিহাদিরা রবীন্দ্রনাথের ছবিতে আগুন লাগাচ্ছে কাল আপনার বাড়িতে ঢুকে আগুন লাগাবে ৷’ মমতা ব্যানার্জির ক্যাবিনেটের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের পশ্চিমবঙ্গকে ৫০% উর্দুভাষী করার স্বপ্নের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি ৷
শমীক ভট্টাচার্য বলেন,’মালদার চাঁচলের যে ঘটনা, সেটা সারা ভারতবর্ষের মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখতে পাচ্ছেন৷ রবীন্দ্রনাথের মাটিতে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথের ছবিতে আগুন লাগানো হচ্ছে । এই যে জিহাদি ভাবনা, কট্টরপন্থী মানসিকতার প্রাদুর্ভাব, সেটা বাংলাদেশে দেখা গেছে । ইন্দিরা গান্ধীর ছবিতে আগুন লাগানো, গ্রন্থাগারে আগুন লাগিয়ে ৭০ হাজার বই পুড়িয়ে দেওয়া, সত্যজিৎ রায়ের বাড়িতে ধুলিস্যাৎ করে দেওয়া, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ি দখল করা, সমস্ত মন্দিরের হিন্দু দেবদেবীদের মুর্তি কলঙ্কিত করা, এবং সর্বোপরি রবীন্দ্রনাথের লেখা জাতীয় সংগীতের বিরোধিতা করা । আজকে একই প্রতিচ্ছবি দেখা গেল মালদায়। আজকের তৃণমূলের এই ধরনের পদক্ষেপ পশ্চিমবঙ্গ কে আগামী দিনে একটা ভয়াবহ জায়গায় পৌঁছে দেবে । রতুয়ার ঘটনা তার ইঙ্গিত বহন করছে৷’
তিনি বলেছেন,’বাংলাদেশের লোকেরা যে ভাষায় কথা বলে সেটাও বাংলা ভাষা আর আমাদের এখানে তৃণমূলের লোকেরা যে ভাষায় কথা বলে সেটাও বাংলা ভাষা। কিন্তু তৃণমূলের বাংলা ভাষাটা আজকে সীমান্তবর্তী জেলায় বাংলাদেশের বাংলা ভাষা হয়ে গেছে৷ না হলে ছাত্র কোনদিন রবীন্দ্রনাথের ছবিতে আগুন লাগাতো না৷’
শমীক ভট্টাচার্য বলেন ‘যদিও ইসলাম ধর্মে কারোর ছবি রাখা নিষিদ্ধ,তাও যদি কাফেরের ছবি হয় । রবীন্দ্রনাথকে যারা কাফের বলে মনে করছে তারা আজ পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আছে । আর তাদেরই ভোটার লিস্টটা নাম রেখে দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তার দল সচেষ্টা । যারা ভাষার বিভাজন দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের জনসমাজকে ভাঙতে চাইছে, বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে, পশ্চিমবঙ্গে হিন্দি ভাষাভাষীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে চাইছে, তারা শুধু পশ্চিমবঙ্গের সর্বনাশ করছেন না পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার সঙ্গে আপোষ করে নিচ্ছেন । আর আজ যারা বিভিন্ন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করছেন তাদের জীবন এবং জীবিকাকে অনিশ্চিত করে দিচ্ছেন । এর বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে আমরা প্রতিবাদ করছি৷’
কলকাতা পৌরসভার মেয়র ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের “৫৯% উর্দুভাষী দেখার” স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে শমীক ভট্টাচার্য বলেন,’ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন যে আর সেদিন দেরি নাই যেদিন পশ্চিমবঙ্গের ৫০ শতাংশ মানুষ উর্দুতে কথা বলবে । অর্থাৎ আজকে মালদায় রবীন্দ্রনাথের ছবিতে আগুন লেগেছে আগামীকাল জোড়াসাঁকোতে আগুন লাগবে না, শরৎচন্দ্রের বাড়িতে আগুন লাগবেনা, সুভাষ বোসের বাড়িতে আগুন লাগবেনা, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে আগুন লাগবেনা, বা সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি আক্রান্ত হবে না এটা মনে করার কোন কারণ নেই। এই যে চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি স্বাধীন ভারতবর্ষে এমনকি ব্রিটিশ ইন্ডিয়াতেও কেউ কোনদিন দেখেননি৷ রবীন্দ্রনাথের ছবিতে আগুন লাগানোর মতো ঘৃণ্য চক্রান্ত আর কিছু হতে পারে না। এর জন্য দায়ী হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের ঘৃণ্য জিহাদী রাজনীতি৷’ তিনি বলেন,’আর যারা রবীন্দ্রনাথের ছবিতে আগুন লাগিয়েছে কাল কলকাতায় আগুন লাগাবে। আপনার বাড়িতে ঢুকে আগুন লাগাবে। আজ যারা বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধদের মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করছে কাল সেটা এখানেও হবে ।’
শমীক ভট্টাচার্য বলেন,’এই লড়াই তৃণমূলের বাঙালির বিরুদ্ধে নয়৷ কারণ আমরা মনে করি প্রথমে আমরা ভারতীয় তারপর বাঙালি । সাম্প্রতিক সময়ে মহাকুম্ভ দেখিয়ে দিয়েছে যে আমাদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই এদেশে ৷’ রাজ্যের দলমত নির্বিশেষে রাজ্যের সমস্ত মানুষকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি পোড়ানোর প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।।