এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,২৩ আগস্ট : কয়েকদিন ধরে ভারতের ত্রিপুরাসহ আশপাশের এলাকায় ভারী বৃষ্টির কারণে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নয়টি জেলায় । বিশেষ করে কুমিল্লা অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এদিকে প্রবল বর্ষণে জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় ত্রিপুরার গুমতি নদী অববাহিকায় ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে জল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে ভারত । আর এটাকেই হাতিয়ার করে ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে ‘ভিকটিম কার্ড’ খেলতে শুরু করেছে বাংলাদেশের জিহাদিরা । সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা ‘হ্যাশট্যাগ শেম অন ইন্ডিয়া’ ট্রেন্ড চালাচ্ছে ।
সোলিয়ামন হায়দার নামে একজন বাংলাদেশি এক্স ব্যবহারকারী জলমগ্ন একটা মন্দিরের ছবি পোস্ট করে লিখেছে,’ভারত থেকে তথাকথিত হিন্দু ত্রাতারা এটা নিয়ে হাততালি দিচ্ছে। প্রিয় বাংলাদেশী হিন্দুরা, অনুগ্রহ করে জানুন আপনি কে। আপনি ভারতীয় সাম্প্রদায়িক কৌশল দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছেন. বাংলাদেশী হোন। আমরা হিন্দু নই, আমরা মুসলিম নই, আমরা বাংলাদেশী ।’ তাসিনুল হক নবির নামে এক জিহাদির প্রতিক্রিয়া, ‘বাংলাদেশে বন্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। এটা ভারতের তৈরি । ভারতীয় বন্যা প্রাকৃতিক হলেও বাংলাদেশের বন্যা ভারতের তৈরি। বন্যার জল ছাড়াই ত বাঁধ খুলে দিল তারা! ভারতীয় আমাদের বন্ধু ছিল না এবং নয়।’ যতীন বিষ্ণৈই নামে একটা ভুয়ো অ্যাকাউন্টের একজন বাংলাদেশি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে বন্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। এটি ভারতের তৈরি। ভারতীয় বন্যা প্রাকৃতিক যদিও, বাংলাদেশের ভারতীয় তৈরি। বন্যার পানি ছাড়াই বাঁধ খুলে দিল তারা! ভারতীয় আমাদের বন্ধু ছিল না এবং নয়।’
তারা পালটা উত্তরও পাচ্ছে ভারতের কাছ থেকে । আস্থা নামে একজনের প্রতিক্রিয়া,’শেম অন ইন্ডিয়া? সত্যিই? আপনি হিন্দু মন্দির পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছেন, প্রতিটি হিন্দু স্থাপত্য ধ্বংস করেছেন, হিন্দুদের হত্যা করেছেন এবং হিন্দু কন্যাদের ধর্ষণ করেছেন এবং এখনও সাহায্যের আশা করছেন!বাংলাদেশের বন্যা প্রাকৃতিক, কিন্তু তারা ক্ষতিগ্রস্ত নয়।’
করুনা ত্যাগীর প্রতিক্রিয়া, ‘লজ্জা ভারতের নয়, ছাত্রদের প্রতিবাদের নামে যারা হিন্দুদের হত্যা করছে এবং তাদের মহিলাদের ধর্ষণ করছে তাদের জন্য লজ্জা। লজ্জা তাদের জন্য যারা প্রতিবাদের নামে নারীদের প্রতি তাদের নোংরা মানসিকতা প্রদর্শন করছে। যারা বাংলাদেশ গঠনে সাহায্যকারী সেই জাতিকে টার্গেট করছে তাদের জন্য লজ্জা।’
অভিষেক পাল লিখেছেন,’যারা একসময় বাংলাদেশে সহিংসতা ছড়ায় এবং হিন্দুদের টার্গেট করেছিল তারা এখন টুইটারে #IndiaOut #ShameOnIndia ট্রেন্ড করছে। প্রাকৃতিক বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করে ভিকটিক কার্ড খেলা ঠিক নয় ।’
বাংলাদেশের সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বন্যায় বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নয়টি জেলাকে বিধ্বস্ত করেছে। কয়েকদিন ধরে ভারতের ত্রিপুরাসহ আশপাশের এলাকায় ভারী বৃষ্টির কারণে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে কুমিল্লা অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। কারণ ভারত গুমতি নদী অববাহিকায় ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে জল ছাড়ছে ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অব্যাহত ভারী বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে খাগড়াছড়িতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন শহর, গ্রাম এবং সড়ক প্লাবিত হয়েছে। খাগড়াছড়ি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।বন্যার জলে খাগড়াছড়ি পৌর এলাকার আদালত সড়ক, মাস্টারপাড়া, মিলনপুর এবং বাইতুশরাফসহ বেশ কয়েকটি সড়ক ডুবে গেছে। সদর, মাটিরাঙ্গা ও দীঘিনালা উপজেলায় প্রায় ৯ হাজার মানুষ আটকা পড়েছে ।উপজেলার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মহালছড়ির সিঙ্গিনীলা গ্রামে বন্যার জলে একটি সেতুর সংযোগ সড়ক ভেসে গেছে । দীঘিনালার কবাখালী ও মেরুং ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ এখনো আটকা পড়ে আছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে চট্টগ্রাম থেকে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ফেনীর ফাজিলপুর এলাকায় বন্যার জলে রেললাইন ডুবে গেছে। কুমিল্লায় গোমতী নদীর জল বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে, ফলে নিম্নাঞ্চলের চরাঞ্চলে বসবাসরত হাজার হাজার মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছে । বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত নদীর জ ৫৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
এদিকে বাংলাদেশে চলমান বন্যা পরিস্থিতির জন্য ত্রিপুরার ডাম্বুর বাঁধকে দায়ী করার অভিযোগ ভারত নাকচ করে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বন্যার জন্য ডাম্বুর বাঁধ দায়ী নয়, বরং গুমতি নদীর অববাহিকায় হওয়া প্রবল বর্ষণই এর মূল কারণ। ভারত স্পষ্ট করেছে যে, ডাম্বুর বাঁধ সীমান্ত থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং এটি একটি নিম্ন উচ্চতার বাঁধ। এই বাঁধ থেকে বাংলাদেশ ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎও সরবরাহ করা হয় ৷ ভারত আরও জানিয়েছে, ২১ আগস্ট থেকে ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের সংলগ্ন এলাকায় ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে নদীর জল।বৃদ্ধি পেয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জল নির্গমন হয়েছে।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা বন্যা সম্পর্কিত তথ্য রিয়েলটাইমে বাংলাদেশের কাছে পাঠাচ্ছে। তবে ২১ আগস্ট বিকেল ৬টায় বন্যার কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে কিছু সময়ের জন্য যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের সাথে সাক্ষাৎ করে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন ।।