প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৬ জুলাই : বন্দুক ও গুলির লড়াইয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করা জেল বন্দি মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম এবার শিক্ষার জগৎতেও ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। ইতিহাস বিষয়ে পিএইচডি করার জন্যে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারভিউ দেওয়া ২৫০ জনের মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করেছেন প্রাক্তন এই মাওবাদী নেতা । তাঁর এমন রেজাল্ট করার দৌলতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে নতুন ইতিহাস তৈরি হল বলে মনে করা হচ্ছে ।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান সইদ তনভীর নাসরিন জানান,ইতিহাস নিয়ে পিএইচডি’র জন্য গৃহীত ইন্টারভিউয়ের রেজাল্ট শুক্রবার প্রকাশিত হয় । বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি’র আসন সংখ্যা ৯টি হলেও ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন ২৫০ জন । তাদের সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়ে সফলদের তালিকায় অর্ণব দামের নাম রয়েছে এক নম্বরে। অর্ণব দামের এমন রেজাল্ট করা প্রসঙ্গে সইদ তনভীর নাসরিনের ব্যাখ্যা,’শুধু বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই বিষয়টি মডেল ।’একই সঙ্গে তিনি বলেন ’ওঁর (অর্ণব দামের )ইচ্ছাপূরণে সরকার যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে সেটাও সমান ভাবে উল্লেখযোগ্য ।’
পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত প্রাক্তন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম ।একদা রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনের ঘুম কেড়ে নেওয়া মাওবাদী নেতা অর্ণব গত ২৬ জুন ইতিহাস নিয়ে পিএইচডি’র জন্য ইন্টারভিউ দেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর ইন্টারভিউ নেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই ইতিহাস বিভাগের দিকপাল অধ্যাপকরা ।ওই দিন কড়া পুলিশি পাহারায় অর্ণবের ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া নিয়ে সরগরম থাকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বর।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অর্ণব দাম এখন শ্রীঘরে ।পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে অর্ণব।গত ২৯ ফেব্রুয়ারী তাঁর সাজা ঘোষণা হয় । তার পর থেকে প্রথমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেল,পরে গত ১৭ মার্চ থেকে অর্ণবের ঠিকানা হয় হুগলীর চুঁচুড়ার সংশোধনাগার। সেখানে লাইব্রেরী আছে। সেই লাইব্রেবী থেকে বই নিয়ে অর্ণব পড়াশোনা চালান।অর্ণব আগেই ইন্দিরা গান্ধী ওপেন ইউনিভার্সিটি (ইগনু) থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর হয়েছেন। তাঁকে পিএইচডি করার সুযোগ দেওয়ার তিনি আর্জি জানান।বিচারক তাঁর আদেশে সেই আবেদনের বিষয়টি নথিভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা বিবেচনা করতে বলেন। কিন্তু সংশোধনাগারে কেউ প্রথমে অর্ণবের আবেদনকে পাত্তা দিচ্ছিল না বলে অভিযোগ ওঠে।যদিও অর্ণব নিজের দাবিতে অনড় থাকেন। দাবি আদায়ের জন্যে অর্ণব অনশন প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরুর কথাও ঘোষণা করে বসেন।
এমন পরিস্থিতিতে বন্দি অর্ণবের পাশে দাঁড়ায় এপিডিআর সংগঠন। তারা অর্ণবের দাবির পক্ষে সমর্থন জানিয়ে হুগলি জেল কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানায়। দাবি না মানলে ভেতরে-বাইরে একযোগে আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেয় এপিডিআর।শেষে জেল প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। অর্ণবের পিএইডির ইন্টারভিউর ব্যবস্থা হয় । গত ২৬ জুন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ণবের ইন্টারভিউ দেওয়ার ব্যবস্থা হয় ।
এদিকে পিএইচডি’র ইন্টার ভিউতে প্রথম স্থান লাভ করা অর্ণব দাম এখন হুগলি জেলে ভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষে আন্দোলন রত হয়েছেন। দাবি আদায়ের জন্যে শুক্রবার থেকে একটা মিলও বয়কট করছেন। তাঁর দাবি,“কর্তৃপক্ষ তাঁকে জেলে যে কাজ দেয়, সেই কাজের প্রথম তিন মাসের মজুরি দিতে এখন অস্বীকার করছে।সেই মজুরি আদায়ের দাবিতে অনড় অর্ণব“। শুধু তাই নয় ,অর্ণব অভিযোগ তুলেছেন তিনি যে জেলে বন্দি হয়ে আছেন সেই জেলে চিকিৎসা ব্যবস্থা বলে কিছু নেই। বন্দীদের জন্য ২৪ ঘন্টা ডাক্তারের ব্যবস্থা করার দাবি তিনি তুলেছেন। অর্ণবের আরও অভিযোগ!জেলের ধারণ ক্ষমতার তুলনায় বন্দি সংখ্যা অনেক বেশি। বন্দি সংখ্যা কমাতে হবে। অর্ণবের অভিযোগ অনুযায়ী,“ধারণ ক্ষমতার চাইতে বন্দী সংখ্যা বেশি হওয়ায় জেলে খাবারের মান ও অন্যান্য প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা ভয়ংকর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।“ এই সমস্ত দাবি আদায়ের লক্ষে অর্ণবের দাবি মানার জন্যে ’এপিডিআর’ এর টিম শুক্রবার জেল সুপারের কাছে ডেপুটেশন দিয়ে এসেছে । এছাড়াও গবেষণা কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্যে অর্ণব দাম যাতে জামিনে মুক্তিি পায় সেই দাবিও এপিডিআর জানিয়েছে বলে জানা গিয়েছে ।।