এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,২৮ জুলাই : হিন্দু নিধনকারী ৬ কট্টরপন্থী মুসলিমের মৃত্যুদন্ড দিল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল । সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হল খুলনার বটিয়াঘাটার বাসিন্দা আমজাদ হোসেন হাওলাদার সহর আলী সরদার, আতিয়ার রহমান, মোতাছিম বিল্লাহ, কামাল উদ্দিন গোলদার ও নজরুল ইসলাম। এর মধ্যে নজরুল ইসলাম পলাতক । বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) বেলা ১১ টা ২৫ মিনিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এই সাজা ঘোষণা করেন ।
প্রসঙ্গত,প্রো পাকিস্থানি মানসিকতা সম্পন্ন ওই দূষ্কৃতীরা বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের নির্মূল করতে দীর্ঘদিন ধরে সচেষ্ট ছিল । বহু নিরীহ হিন্দুকে নৃসংশভাবে খুন,সম্পত্তি লুটপাট, অগ্নিসংযোগ,হিন্দু মহিলাদের ধর্ষণের মত গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ।
আদালত সুত্রে খবর,আমজাদ হোসেন হাওলাদারসহ ৪-৫ জনের একটি দল ১৯৭১ সালের ১০ আগস্ট রাজাকার বটিয়াঘাটার মাছালিয়া গ্রামের শান্তি লতা মণ্ডলের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল । শান্তি লতাদেবীর স্বামী বিনোদ মণ্ডলকে অপহরণ করে নৃসংশভাবে কোপানোর পর গুলি করে খুন করে তারা । ওই বছর ১৫ অক্টোবর বটিয়াঘাটার পূর্বহালিয়া গ্রামের বাসিন্দা হরিদাস মজুমদারকেও একই কায়দায় খুন করে ওই ৬ জনের দুষ্কৃতীদল ।
এরপর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২১ অক্টোবর হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করতে বটিয়াঘাটার সুখদাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি বাড়ি হামলা চালায় তারা । চারজন হিন্দুকে নৃসংশভাবে কুপিয়ে খুন করে । বেশ কিছু বাড়িতে চড়াও হয়ে লুটপাটের পর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় । ওই বছরের ২৯ নভেম্বরে আসামিরা বটিয়াঘাটার বারোআড়িয়া গ্রামে হামলা চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা জ্যোতিষ মণ্ডল এবং আব্দুল আজিজকে গুলি করে খুন করে । এর বাইরেও বহু হিন্দুকে খুনসহ গুরুতর অভিযোগ রয়েছে ওই ৬ জনের বিরুদ্ধে । যেগুলি পুলিশের খাতায় রেকর্ড নেই বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা ।
জানা গেছে,নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ৬ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা রজু করেছিল বাংলাদেশ পুলিশ । এতদিন তারা জেলবন্দি ছিল । গত ২৬ জুলাই (মঙ্গলবার) তাদের দোষী সব্যস্ত করে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল । এদিন সাজা ঘোষণা করা হয় । এদিন সকাল ১০টা ৩৫ মিনিট নাগাদ ২০৩ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু হয়। রায়ের প্রথম অংশ পাঠ করেন বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম। দ্বিতীয় অংশ পাঠ করেন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার। তিনি রায় পড়ার আগে বলেন, কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধীর বর্তমান বয়স বিচার্য নয়, বিচার হচ্ছে ৭১ সালে তারা যেসব অপরাধ করেছেন সেই অপরাধের বিবেচনায় । আজকে যাদের বয়স ৮০ বছরের উপরে, অপরাধ করার সময় তাদের বয়স ছিল ৩০ বছর বা তার আশেপাশে । আদালতে রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ।।