জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,শিয়ালদহ,০৪ জুলাই : এও কি সম্ভব, গল্প তাও আবার মাত্র ন’টা শব্দে – অবাক করার মত ঘটনা। বিষয়টি সামনে আসতেই একইসঙ্গে চমকে ওঠেন কবি-সাহিত্যিক সহ সাহিত্য প্রেমী মানুষরা। সবার মনে একটাই প্রশ্ন – যেখানে ন’টা শব্দের মাধ্যমে সম্পূর্ণ মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য একটা বাক্য সৃষ্টি করতে অনেক সময় হিমশিম খেতে হয় সেখানে আস্ত একটা গল্প লেখা কি আদৌ সম্ভব? এটা ঠিকই একদল কবি-সাহিত্যিকের হাত ধরে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলা কাব্য-সাহিত্য জগতে নিত্য নতুন ঘরানা আসছে। উপন্যাস, প্রবন্ধ, বড় গল্পের জগত পার হয়ে সাহিত্যের জগতে আবির্ভাব ঘটেছে ছোট গল্পের। তাই বলে পরমাণু গল্প?
একরাশ সংশয়কে সঙ্গী করে গত ৩ রা জুলাই দুই শতাধিক কবি-সাহিত্যিক উপস্থিত হন শিয়ালদহের কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ভবনে। লক্ষ্য পরমাণু গল্প উৎসবে অংশগ্রহণ করা এবং বিষয়টি কি সেটা সুস্পষ্ট ভাবে উপলব্ধি করা। কারণ অনেক বিতর্ককে সঙ্গী করে আন্তর্জাতিক পরমাণু গল্প চর্চা পর্ষদের উদ্যোগে সেখানে আয়োজিত হয় ‘পরমাণু গল্প উৎসব ২০২২’।
অনুষ্ঠানে প্রথমবারের জন্য প্রকাশিত হয় ৩৪০ জন কবির লেখা ‘পরমাণু গল্প সংকলন’। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে উপস্থিত প্রতিটি কবির হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি করে পরমাণু গল্প সংকলনের বই ও মেমেণ্টো। সংকলনটি হাতে পেয়েই চমকে ওঠেন উপস্থিত কবিরা।
সংকলনের প্রতিটি পাতা বারুদে ঠাসা। একটু আগুনের ফুলকি পেলেই অর্থাৎ কবি প্রতিভার কলমের ছোঁয়া পেয়ে সৃষ্টি হতে পারে সমাজ পরিবর্তনের অসাধারণ গল্প। ‘ছিদাম কহিল, বাবু, আমি বহুরূপী বটি কিন্তু গিরগিটি নই’ (১৩ পৃষ্ঠা) বর্তমানে ঘন ঘন দলবদল অথবা প্রেমিক-প্রেমিকা পাল্টানোর প্রেক্ষাপটে সুন্দর গল্প সৃষ্টি করা যেতেই পারে। ‘সর্বসমক্ষে হাসিখুশি থাকা মেয়েটাও রাতের অন্ধকারে বালিশ ভেজায়’, ‘নরপিশাচের জিঘাংসায় ক্ষতবিক্ষত চিবুকের তিলটা সমাজকে চাবুক কষায়’- এরকম ৩৪০ টা শব্দ বন্ধনী সত্যিই ভাবনার প্রেরণা যোগায়। এখান থেকেই সৃষ্টি হতে পারে কয়েক হাজার গল্প।
এর আগে প্রদীপ প্রজ্বলিত করে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন বিশিষ্ট কবি তথা সাংবাদিক কমল দে সিকদার। তার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন মঞ্চে উপস্থিত অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। গলায় উত্তরীয় পড়িয়ে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে তাদের বরণ করে নেওয়া হয় ।কমল বাবু ছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক-সাংবাদিক বরুণ চক্রবর্তী ও অংশুমান চক্রবর্তী, সাহিত্যিক তাপস সাহা ও কবি প্রদীপ আচার্য প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা পরমাণু গল্প বিষয়টি কী সেটা ব্যাখ্যা করেন। সংকলনে প্রকাশিত ছোট ছোট লাইনগুলি থেকে প্রেক্ষাপট নিয়ে নিজস্ব ভাবনার গল্প লেখার জন্য নবীন প্রতিভাদের তারা পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কবি চিত্রা কুণ্ডু বারিক। তিনি বললেন – সত্যি কথা বলতে নিজের মনের মধ্যে ‘পরমাণু গল্প’ বিষয়টি নিয়ে তীব্র সংশয় ছিল। ভাবছিলাম, এটা আবার কী? অবশেষে বুঝতে পারলাম এটা গল্পের এমন একটা প্রেরণা যার সাহায্যে বড় গল্প লেখা যেতে পারে। প্রসঙ্গত চিত্রা দেবী নিজেই একটি সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদিকা।
প্রায় তিন ঘণ্টা ব্যাপী সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন পরমাণু গল্প ভাবনার উদ্ভাবক বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিক সুশান্ত ঘোষ। তিনি বললেন – পরমাণু গল্প অনেকটা ভাবসম্প্রসারণের মত। এখানে নয় শব্দের ছোট গল্পের মধ্যেই একটা বড় গল্পের ইঙ্গিত আছে অথবা প্রচ্ছন্ন ভাবে লুকিয়ে আছে। এবার সেটার সাহায্য নিয়ে কবিরা আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে গল্পের মাধ্যমে নিজস্ব ভাবনা প্রকাশ করতেই পারেন। সুতরাং শিরোনাম দেখে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। তিনি আরও বলেন – প্রাথমিক পর্যায়ে পরমাণু গল্পের ভাবনাটা সেইসব কবি প্রতিভাদের জন্য সহায়ক হবে যারা লিখতে চান অথচ ঠিকমত নিজেদের প্রকাশ করতে পারেন না। দ্যাখা যাবে লিখতে লিখতে একটা সময় নিজেরাই সফল কবি হয়ে উঠেছেন এবং তখনই পরমাণু গল্পের ভাবনাটা সার্থকতা লাভ করবে ও সমৃদ্ধ হবে বাংলা কাব্য জগত ।।