দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),৩১ জুলাই : ঘুমন্ত অবস্থায় নিজের স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করার পর শাবল দিয়ে মাথায় একাধিকবার আঘাত করে খুন করেছিল স্বামী । তারপর সে আত্মসমর্পণের জন্য সাইকেলে চড়ে থানায় যাচ্ছিল । কিন্তু রাস্তায় পুলিশকে টহল দিতে দিতে দেখে সোজা সেখানে চলে যায় । তারপর এক পুলিশকর্মীর পা জড়িয়ে ধরে নিজের দোষ কবুল করে খুনি স্বামী । রবিবার চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারে । শেখ রহমত নামে ওই ব্যক্তির কাছে এই কথা শোনার পর ভাতার থানার পানোয়া গ্রামে তার বাড়িতে গিয়ে রহমতের স্ত্রী মমতাজ খাতুনের (২৯) রক্তাক্ত মৃতদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ । পরে ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহটি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয় ।
মৃতার বাপেরবাড়ি ও প্রতিবেশীদের দাবি,শেখ রহমতের লটারির টিকিট কাটার নেশা আছে । এজন্য বাজারে তার বহু টাকা ঋণ হয়ে গিয়েছিল । মমতাজের নামে ব্যঙ্ক থেকে ঋণও করেছিল সে । সেই সময় ব্যঙ্ক কর্তৃপক্ষ মমতাজের নামে বিমা করিয়ে দেয় । আর সেই বিমার টাকার লোভেই রহমত তার স্ত্রীকে পরিকল্পনামাফিক খুন করেছে বলে তাঁরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন । যদিও খুনি রহমতের দাবি,’আমার স্ত্রী সময়ে রান্না করত না । আমাকে কাজ সেরে বাড়ি ফিরে প্রায় দিনই রান্না করতে হত । আমার বিষয়ে কোনও দায়িত্বপালন করত না আমার স্ত্রী । তাই খুন করেছি ।’ এই ঘটনায় পুলিশ একটি স্বতপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে শেখ রহমতকে গ্রেফতার করেছে । খুনের কারন তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,ভাতার থানার পানোয়া গ্রামে বাপের বাড়ি মমতাজ খাতুনের । বছর ১৩ আগে কাটোয়ার গাঙ্গুলিডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা পেশায় রাজমিস্ত্রী শেখ রহমতের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মমতাজের । তাদের দুই মেয়ে । বড় আসমার(৯) এবং ছোট সানিয়া( ৫) । বিয়ের বছর খানেকের মধ্যেই স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে চলে আসে রহমত । মেয়ে জামাইকে কিছুটা জায়গা রেজিস্ট্রি করে দিয়ে একটা বাড়িও করে দেন মমতাজের বাবা শেখ মোমিন । কিন্তু সাংসারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে প্রায় দিনই অশান্তি হত বলে জানা গেছে৷
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে,এদিন ভাতার থানার পুলিশের একটি টহলদারি ভ্যান আলিনগর চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়েছিল । ভ্যানের আশেপাশেই ছিলেন পুলিশকর্মীরা । সেই সময় বাদশাহী রোড ধরে ভাতার বাজারের মুখে আসছিল শেখ রহমত । পুলিশকে দেখে সোজা তাদের কাছে চলে গিয়ে এক পুলিশকর্মীর পা জড়িয়ে ধরে সে তার স্ত্রীকে খুনের কথা খুলে বলে । পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রহমত জানায়,এদিন ভোরে যখন তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল সেই সময় সে স্ত্রীর গলায় ওড়না জড়িয়ে শ্বাসরোধ করে । স্ত্রী অচৈতন্য হয়ে পড়লে মৃত্যু নিশ্চিত করতে মমতাজের মাথায় একটি উলের পোশাক জড়িয়ে একটি শাবল দিয়ে মুহুর্মুহু আঘাত করে মেরে ফেলে । নৃশংস এই হত্যাকান্ডে স্তম্ভিত এলাকার বাসিন্দারা ।।