🌼 “হিন্দু দার্শনিকগণ কতকগুলি মূলতত্ত্ব হইতে এই পরিদৃশ্যমান জগতের উৎপত্তি স্বীকার করেন। এই তত্ত্বগুলির ক্রমবিকাশই প্রকৃতির ক্রমবিকাশ। জগতের যাবতীয় সৃষ্ট পদার্থ এই তত্ত্বগুলিকে অবলম্বন করিয়া গতিশীল। মানুষের শরীর এই বিশ্ব প্রকৃতির একটি প্রতীক। এই মানবদেহ একটি প্রতীক। এই মানবদেহ একটি ক্ষুদ্র বিশ্ব; সেইজন্য সাধক সাধনপথে যতই অগ্রসর হইতে থাকেন ততই তিনি যােগবলে তাহার স্বীয়দেহে বিশ্ব প্রকৃতির এই তত্ত্বগুলি সত্য সত্যই উপলব্ধি করেন। হিন্দু দার্শনিকদিগের মতে এই বিশ্ব পঞ্চকোষময়, যথা অন্নময় কোষ, প্রাণময় কোষ, মনােময় কোষ, বিজ্ঞানময় কোষ এবং আনন্দময় কোষ। যখন কোন বস্তু সম্পূর্ণরূপে এই পঞ্চ কোষে আবৃত থাকে তখন তাহাকে আমরা জড় পদার্থ বলি। তারপর যখন এই অন্নময় কোষ উন্মুক্ত হয়, তখন উদ্ভিজ জগতের বিকাশ হইতে থাকে। তৎপরে প্রাণময় কোষ উন্মুক্ত হইলে মনােময় কোষের বিকাশ হয় এবং প্রাণিজগতের সৃষ্টি হইতে থাকে। অতঃপর মনােময় কোষ উন্মুক্ত হইলে বিজ্ঞানময় কোষের অভিব্যক্তি পরিলক্ষিত হয় এবং মনুষ্য জগতের সৃষ্টি হইতে থাকে । মানুষে আমরা জড়, প্রাণ ও বুদ্ধির অভিব্যক্তি
দেখিতে পাই। অবশেষে যখন বিজ্ঞানময় কোষ উন্মুক্ত হইয়া পড়ে,তখন আনন্দময় কোষের অভিব্যক্তি হয় এবং তখন মন, প্রাণ, বুদ্ধির পূর্ণ অভিব্যক্তিসম্পন্ন আনন্দময় অতি-মানুষ বা দেবতার সৃষ্টি হয়। তৎপরে এই আনন্দময় কোষ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হইলে জীব তাহার প্রকৃত স্বরূপ সচ্চিদানন্দে অবস্থান করে। এই স্ব-স্বরূপে অবস্থান, ঈশ্বরের সহিত ব্রহ্মের সহিত এই মিলন, সকল সাধকেরই, সকল সাধনারই লক্ষ্য ও গন্তব্যস্থান। সাধক
নিজদেহে একে একে অন্নময়, প্রাণময়, মনােময়, বিজ্ঞানময় কোষের পূর্ণ অভিব্যক্তি উপলব্ধি করিয়া আনন্দময় সাত্ত্বিক পুরুষ হইয়া আনন্দে অবস্থান করেন ।”
শ্রী শ্রী স্বামী শ্রীযুক্তেশ্বর গিরি কর্তৃক প্রণীত “গীতার তত্ত্ব” থেকে সংগৃহীত ।