এইদিন ওয়েবডেস্ক,জম্মু-কাশ্মীর,২৬ ফেব্রুয়ারী : পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু কাশ্মীর (PoJK) থেকে যে সমস্ত জঙ্গি নাশকতার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সেই সমস্ত স্থানীয় জঙ্গিদের একটি তালিকা তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক (MHA) । জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ (JKP) এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলির সহায়তায় তৈরি ওই তালিকাভুক্ত জঙ্গিদের “স্বতন্ত্র জঙ্গি” হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে । এখন তাদের সম্পত্তি ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (UAPA) সহ বিভিন্ন আইনের অধীনে তাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করা হয়েছে ।নিরাপত্তা সংস্থাগুলি মনে করে গত পয়লা জানুয়ারী রাজৌরি জেলায় ধানগরি হামলার পিছনে পাকিস্তান এবং পিওজেকে-তে বসে থাকা স্থানীয় জঙ্গিদেরই কাজ । যে হামলায় দুই নাবালক সহ ৭ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নিহত হয়েছিল । আহত হয়েছেন আরও এক ডজন। ওই সমস্ত সন্ত্রাসবাদীরা জম্মু- কাশ্মীরের সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত গ্রামগুলিকেই মূলত টার্গেট করছে ।
সরকারী সূত্র অনুযায়ী,জম্মু অঞ্চলের ডোডা জেলায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক জঙ্গি পাকিস্তান এবং পিওজেকে থেকে কাজ করছে । ডোডা জেলায় আনুমানিক ১১৮ জন জঙ্গি সক্রিয় রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে । তাদের মধ্যে ১০ জন লস্কর-ই-তৈবা (এলইটি) এবং জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেএম) এর কমান্ডারের পদে রয়েছে । এর মধ্যে গোলাম মোহাম্মদ আত্তুরের ছেলে ইরশাদ আহমেদ আট্টু ওরফে আদ্রিস এবং ঠাথরির নন্দনা ফাগসুর দাউদ বাটের ছেলে মোহাম্মদ আমিন ওরফে খুবাইব ওরফে হারুনকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই পৃথক সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করেছে। খানপুর ফাগসুর বাসিন্দা আরসুল্লা খান্ডয়ের ছেলে আব্দুর রশিদ ওরফে জাহাঙ্গীকে শীঘ্রই একই তালিকাভুক্ত করা হতে পারে । কারণ তার বিরুদ্ধে ডসিয়ার প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া ডোডা থেকে আরও সাতজন জঙ্গি কমান্ডার যাদেরকে পৃথক সন্ত্রাসী হিসাবে ঘোষণা করা হতে পারে তাদের মধ্যে রয়েছে সাজান ভাগওয়াহের গোলাম মোহাম্মদ ভাটের ছেলে আবদুল হাই ওরফে তাহির বিলাল, ভাদেরওয়াহ, মসজিদ মহল্লার আবদুল হাই খতিবের ছেলে মোহাম্মদ হোসেন খাতিব, হামদানপুরের আব্দুল কাদুসের ছেলে খালিদ হোসেন ওরফে সাইফুল্লাহ, মানোই গান্দোহ গ্রামের মাংতা বাটের ছেলে মাজিদ হুসেইন ওরফে আবু জেহেদ মুজাহিদ, ট্রেঙ্কল কাহারার গোলাম মোহাম্মদের ছেলে মোহাম্মদ শফি ওরফে নাদিম, গোলাম হোসেন ঠাকুরের ছেলে নাসির আহমেদ ওরফে বাবলু। খাই মহল্লা ভাদেরওয়াহ, বগলা ভরথের লালদিন গুজ্জরের ছেলে নাজির আহমেদ গুজ্জর ওরফে আবু মানাজির, ডান্ডাল কাস্তিগড়ের গোলাম মোহাম্মদ নায়েকের ছেলে শাবির আহমেদ নায়েক ওরফে শেরা, গোলাম নবীর ছেলে আত্তা মোহাম্মদ, তান্ত কাহারার ছেলে জাকির হোসেন। আব্দুর রশিদ ভাদেরওয়াহের ড্রাইনা ভল্লা এবং খানপুরা ফাগসুর আরসুল্লা খান্ডয়ের ছেলে আব্দুর রশিদ ওরফে জাহাঙ্গীর। এরা প্রত্যেকেই ডোডা জেলার বাসিন্দা । পাকিস্তান এবং পিওজেকে বসে ভারতে নাশকতার ছক কষছে তারা ।
ডোডা ছাড়াও কিশতওয়ার জেলার ৩৬ জন সন্ত্রাসবাদীকে পাকিস্তান এবং পিওজেকে-তে সক্রিয় জঙ্গি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে । যারা স্থানীয় যুবকদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদে অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য উসকানি দিচ্ছে। নর গুরসাইয়ের মোহাম্মদ রফিক এবং পুঞ্চ জেলার গৌন্থালের শামশির হুসেনকেও খুব শীঘ্রই “স্বতন্ত্র জঙ্গি” হিসাবে ঘোষণা করা হবে কারণ তারা সরাসরি জম্মু ও কাশ্মীর গজনভি ফোর্স (জেকেজিএফ) এর সাথে যুক্ত ছিল । যে সংগঠনটিকে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দ্বারা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তারা উভয়ই পাকিস্তান থেকে কাজ করছে এবং পুঞ্চ এবং রাজৌরির দুই সীমান্ত জেলায় ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) এবং গ্রেনেড লাগানো সহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে স্থানীয় যুবকদের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য এর আগে সহায়ক করেছিল । রাজৌরি এবং পুঞ্চ জেলার ১৪ জন সন্ত্রাসবাদীও পাকিস্তান থেকে কাজ করছে বলে খবর । চলতি বছরের পয়লা জানুয়ারী রাজৌরি জেলায় ধানগরি হামলার পিছনে তাদের ভূমিকা ছিল বলে মনে করছে পুলিশ ।
পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলি ওই সমস্ত জঙ্গিদের সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিবরণ সংগ্রহ করেছে । তারা পাকিস্তান এবং পিওজেকের কোথায় বসবাস করত, তাদের কোন জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ দিয়েছে, জঙ্গিদের অনুপ্রবেশে তাদের ভূমিকা,ড্রোন এবং অন্যান্য উপায়ে অস্ত্র ,গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরক ভারতে পাঠানো এবং আত্মীয়-স্বজনসহ স্থানীয় যুবকদের সন্ত্রাসবাদে প্রলুব্ধ করা প্রভৃতি বিষয়গুলি তদন্ত করে দেখছে গোয়েন্দারা ।।