এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাঠমান্ডু,২৮ ডিসেম্বর : নেপালি ক্রিকেটার সন্দীপ লামিছনের বিরুদ্ধে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে । আজ বৃহস্পতিবার কাঠমান্ডু জেলা আদালতে সেই মামলার চুড়ান্ত শুনানি চলছে । বুধবার বিতর্ক শেষ না হওয়ায় জেলা জজ শিশিররাজ ঢাকলের আদালতে মামলাটি পর্যবেক্ষণে রাখা হয় । গত রবিবার বিচারপতি ঢাকালের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শুরু হয় । প্রথম দিন বাদীর পক্ষে তিন সরকারি আইনজীবী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। সোমবার ও মঙ্গলবার সরকারি ছুটি থাকায় শুনানি করা যায়নি । বুধবার থেকেই সন্দীপের তরফে শুরু হয়েছে বিতর্ক। বুধবার সন্দীপের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মুরারি সাপকোটা।
নেপালি জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সন্দীপ লামিচানের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল গত ১৪ অক্টোবর । তার বিরুদ্ধে অভিযোগ,কাঠমান্ডুর একটি হোটেলের ৩০৫ নম্বর কক্ষে ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোরীকে নিয়ে গিয়েছিল সন্দীপ এবং ২১ আগস্ট তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছিল । কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে সন্দীপের বিরুদ্ধে নেপালি সিভিল কোড ২০৭৪-এর অধ্যায় ১৮ এবং ১৮ ধারার ২১৯ উপধারার ৯৩০ এর অধীনে একটি মামলা রজু করা হয় ।
জানা গেছে,পুলিশের কাছে তার জবানবন্দির সময়, নির্যাতিতা কিশোরী বলেছে যে সন্দীপ তাকে কাঠমান্ডু এবং ভক্তপুরের নাগারকোটে নিয়ে যায় এবং তারপর তাকে কাঠমান্ডুতে ফিরিয়ে এনে একটি হোটেলে ধর্ষণ করে। নির্যাতিতা মেয়েটির বক্তব্য অনুযায়ী, ৫ই আগস্ট দুপুর ১২:৫৫ মিনিটে কাঠমান্ডু মেট্রোপলিটন সিটি-৯-এ অবস্থিত একটি হোটেলের ৩০৫ নম্বর কক্ষে সন্দীপ তাকে ধর্ষণ করে। ওই তরুণীর বয়ান, ওই দিনই রাত ১২টা ২৫ মিনিটে সন্দীপ তাকে ফের ধর্ষণ করে। ধর্ষণের অভিযোগ জানানোর পর পুলিশ ভিকটিম মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করে।
জানা গেছে,নির্যাতিতা কিশোরী এবং সন্দীপ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ‘স্ন্যাপ চ্যাট’-এর মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ হয়। বলা হয়, স্ন্যাপ চ্যাটের মাধ্যমে একে অপরকে জানার কিছুক্ষণ পর সন্দীপ মেয়েটির সঙ্গে দেখা করার প্রস্তাব দেয় এবং তাকে নিতে গাড়ি চাপিয়ে নিয়ে যায়। বলা হচ্ছে যে সন্দীপ মেয়েটিকে ৫ আগস্ট সকাল ৬টার দিকে কাঠমান্ডু থেকে ভক্তপুরে নিয়ে যায় তার গাড়িতে করে। এরপর তারা নাগরকোটে পৌঁছায় । মেয়েটি বলে যে সন্দীপ নাগরকোটে মদ খেয়েছিল এবং সেখান থেকে কাঠমান্ডু ফিরেছিল।
তারা যখন কাঠমান্ডুতে আসে, তখন রাত ১১টা বেজে যায় এবং তারা একটি হোটেলে একটি রুম বুক করে বলেছিল যে হোটেল বন্ধ থাকবে। জবানবন্দিতে ভিকটিম মেয়েটি জানায়, একই হোটেলের ৩০৫ নম্বর কক্ষে সন্দীপ তাকে ধর্ষণ করে।
ঘটনার পর, ক্রিকেট খেলতে বিদেশে যাওয়া সন্দীপকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে একটি ডিফিউশন নোটিশ জারি করা হয়। এরপর নেপালে ফেরার সময় ২০ অক্টোবর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সন্দীপকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সার্কেল গোশালা তাকে হেফাজতে রেখে ধর্ষণের তদন্ত শুরু করে। মামলার প্রাথমিক শুনানিতে, কাঠমান্ডু জেলা আদালত বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সন্দীপকে কারাগারে পাঠানোর জন্য রিমান্ডের আদেশ জারি করে। জেলা আদালতের নির্দেশে কয়েক মাস কারাবন্দী সন্দীপ পাটন হাইকোর্টের নির্দেশে শর্তসাপেক্ষে কারাগার থেকে মুক্তি পান। তবে বিদেশে না যাওয়ার হাইকোর্টের শর্ত খারিজ করে দেয় নেপালের সুপ্রিম কোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ক্রিকেট দলে ফিরে আসা সন্দীপও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ক্রিকেট খেলতে বিদেশে চলে গিয়েছিলেন । শেষ পর্যন্ত কিশোরীকে ধর্ষণের মামলার শুনানি রবিবার থেকে শুরু হয়েছে ।
সন্দীপের আইনজীবী সরোজ ঘিমিরের মতে, বৃহস্পতিবার শুনানিতে সন্দীপের আইনজীবীর যুক্তি শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মামলায় আসামি সন্দীপের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য হাই প্রোফাইল আইনজীবীরা প্রতিনিধিত্ব করছেন । রয়েছেন প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল রমন শ্রেষ্ঠা,সিনিয়র অ্যাডভোকেট শম্ভু থাপা, সাপকোটা, সবিতা ভান্ডারী, সরোজ ঘিমিরেও লামিছনে প্রভৃতি আইনজীবীরা । সন্দীপের মামলায় ইতিমধ্যে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা তাদের যুক্তি পেশ করেছেন বলে জানা গেছে । যেহেতু নির্যাতিতা একজন নাবালিকা, তাই দোষী সব্যস্ত হলে সন্দীপ লামিচানকে ১০ থেকে ১২ বছরের কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন ।।