প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৪ জানুয়ারী : শ্বশুর বাড়ি থেকে বউকে ফিরিয়ে আনতে গিয়েছিল জামাই । সেই জামাইয়ের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার ঘটনা জানাজানি হতেই শনিবার জন রোষ আছড়ে পড়লো শ্বশুর বাড়িতে। জামাই সুরেশ মাঝির মৃতদেহ শ্বশুর বাড়ির সামনে ফেলে রেখে ইট বর্ষণ চলতে শুরু করে শ্বশুর বাড়িতে। তা নিয়ে শনিবার বেলার ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের রায়নার বিদ্যানিধি গ্রামে। খবর পেয়ে রায়না থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছায়।পুলিশ মৃত জামাইয়ের দেহ উদ্ধার করতে গেল পুলিশকেও ব্যাপক ক্ষোভ বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়।শেষে পূলিশ মৃত সুরেশ মাঝির শ্বশুর বাড়ির কয়েকজনকে আটক করলে উত্তেজনায় লাগাম পড়ে। এরপর পুলিশ মৃত জাইয়ের দেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠাতে সক্ষম হয় ।
মৃত যুবকের বাবা বাপি মাঝি জানিয়েছেন,বছর ২১ বয়সী সুরেশ মাঝি কৃষি যন্ত্রাংশ সারাইয়ের কাজ করতো । গ্রামের এক তরুণীর সঙ্গে সুরেশের ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল । গত বৈশাখ মাসে ওই তরুণীকে বিয়ে করে সুরেশ। কিন্তু সুরেশের সংসার জীবন সুখের হয়নি।অন্য মেয়ের সঙ্গে সুরেশের সম্পর্ক রয়েছে,এমনটা সন্দেহ করতো সুরেশের স্ত্রী। তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয় ।কয়েক মাস সংসার করার পর সুরেশের স্ত্রী সুরেশকে ছেড়ে তাঁর বাবার বাড়িতে চলে যায় । স্ত্রীকে বারবার শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজের বাড়ি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় স্বামী সুরেশ।৫ লক্ষ টাকা দিয়ে সুরেশ কে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে হবে বলে তাঁর শ্বশুর বাড়ির লোকজন জানিয়ে দেয় ।বাপি মাঝির দাবি অনুযায়ী, বউকে নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে অনার জন্য সুরেশ ফের শুক্রবার তাঁর শ্বশুর বাড়িতে যায়।কিন্তু বউকে ফিরিয়ে আনা তো দূরের কথা,উল্টে শনিবার সকালে তারা দেখের বাড়ির একটি ঘরে সুরেশের মৃতদেহ ঝুলছে ।মৃতদেহের পা ঘরের মেঝেতে এমন ভাবে ঠেকে রয়েছে,যেন সুরেশ দাড়িয়ে রয়েছে।তখন গ্রামের বিস্তির্ণ রাস্তায় এবং এবং বাড়ির উঠান পর্যন্ত ফোঁটা ফোঁটা করে রক্ত পড়ে থাকার বিষয়টি সবার নজরে আসে। তা দেশে গ্রামের সবাই এক প্রকার নিশ্চিত হন, সুরেশ কে প্রাণে মেরে ওর শ্বশুর বাড়ির লোকজনই হয়তো বাড়িতে ওর দেহ ঝুলিয়ে দিয়ে পালিয়ে গেছে ।
মৃত যুবকের আত্মীয় সুপর্ণা ধরা বলেন ,আমার মাসির বাড়ির সামনের রাস্তা জুড়ে রক্তের ফোঁটা পড়ে থাকা এবং মৃতদেহ যে ভাবে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল, সেটা আত্মহত্যার কোন ঘটনা হতে পারে না। সুপর্ণা ধরা পরিস্কার জানিয়ে দেন, সুরেশ কে প্রাণে মরে ওর শ্বশুর বাড়ির লোকজন রাতের অন্ধকারে মৃতদেহ বাড়ির ঘরে ঝুলিয়ে দিয়ে পালিয়েছে। সুরেশের বউ ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করেছেন সুপর্ণা ধরা। একই দাবি করেছেন সুরেশের প্রতিবেশীরা ।
বর্ধমান দক্ষিণ মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (এসডিপিও) অভিষেক মণ্ডল জানিয়েছেন, পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। মৃতর শ্বশুর বাড়ির তিন সদস্যকে আটক করা হয়েছে।রবিবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে যুবকের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিত পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে ।।