আমাদের হাতের কাছেই প্রকৃতি বিভিন্ন উপকারী খাবার সাজিয়ে রেখে দিয়েছে। শুধু সেই খাবারগুলো প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আর তাতেই একাধিক অসুখ এড়িয়ে চলা সম্ভব। আর এমনই সব উপকারী খাবারের তালিকায় একদম উপরের দিকেই আসবে অঙ্কুরিত ছোলার নাম। উচ্চ মাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার ছোলা। এতে ভিটামিন, ফাইবার, প্রোটিন তিনটিই থাকে। ছোলাতে ফ্যাটের পরিমাণ খুব কম। তাই ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বেশ উপকারি হিসেবে কাজ করে ছোলা।
পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, অঙ্কুরিত ছোলা হলো পুষ্টির ভাণ্ডার। এই খাবারে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালোরি, প্রোটিন, ফ্যাট, কার্ব, ফাইবার, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, ফোলেট, ম্যাগনেশিয়াম, বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামন কে’র মতো একাধিক জরুরি উপাদান। তাই নিয়মিত অঙ্কুরিত ছোলা খেলে রোগ-বালাই কাছে ঘেঁষার সুযোগ পায় না।
রোজ সকালে খালি পেটে অঙ্কুরিত ছোলা খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে,হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে,হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, দ্রত ওজন কমায়,এটি ত্বককে ভিতর থেকে ময়েশ্চারাইজ করে,ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে,চুলের গোড়া মজবুত করে,চুল পড়া কমায়,অঙ্কুরিত ছোলা ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ হওয়ায়,গর্ভবতী নারীর জন্য উপকারি।
ছোলার গুণাগুণ কারুরই অজানা নয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক সকালে খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার কিছু উপকারিতা :
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ :
ডায়াবেটিসকে ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে একাধিক জটিল সমস্যা পিছু নেয়। এক্ষেত্রে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথিসহ ভয়ংকর সব রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হয়। আর এই কাজে আপনার বন্ধু হতে পারে অঙ্কুরিত ছোলা। রোজ সকালে এক বাটি অঙ্কুরিত ছোলা খেলেই দেহে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়বে। ফলে প্রত্যক্ষভাবে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেকটাই সুবিধা মিলবে বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে রেখেছেন বিশেষজ্ঞরা।
পেটের সমস্যা :
গ্যাস, অ্যাসিডিটি ও বদহজম থেকে শুরু করে একাধিক পেটের সমস্যা প্রশমিত করতে অঙ্কুরিত ছোলার কোনও জুড়ি নেই। আসলে এই খাবারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ইনসলিউবল ফাইবার। আর এই ফাইবার অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ানোর কাজে সিদ্ধহস্ত। ফলে খাবার হজম হবে খুব সহজেই। আর এই কারণেই বদহজম, গ্যাস ও অ্যাসিডিটির মতো পেটের সমস্যার ফাঁদ এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে।
হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে :
হৃদযন্ত্র হলো শরীরের পাম্প। এই অঙ্গটি গোটা শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করে। তাই এই অঙ্গের সুস্থ থাকাটা খুবই জরুরি। তবে বর্তমান জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের সাঁড়াশি আক্রমণে এই অঙ্গের ওপর আঘাত হানছে একাধিক প্রাণঘাতী অসুখ। তাই হৃদরোগ নিয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। এই প্রসঙ্গে ওয়েবমেড জানাচ্ছে, রোজ সকালে অঙ্কুরিত ছোলা খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেকটাই হ্রাস পাবে। ফলে হৃদরোগের কোপে পড়ার আশঙ্কাও কমবে।
প্রোটিনের উৎস :
অঙ্কুরিত ছোলা কিন্তু প্রোটিনের ভাণ্ডার। তাই দেহে প্রোটিনের ঘাটতি মেটানোর কাজে অঙ্কুরিত ছোলার কোনো জুড়ি নেই। এক্ষেত্রে সারাদিনে মাত্র এক বাটি অঙ্কুরিত ছোলা খেলেই অনেকটা পরিমাণে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করবে । আর দেহে প্রোটিনের ঘাটতি মিটে গেলে পেশির জোর বাড়বে। এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। তাই প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে চাইলে নিয়মিত অঙ্কুরিত ছোলা খাওয়ার কথা ভুলবেন না।
সতর্কতা :
অনেকক্ষণ ধরে ছোলা ভিজিয়ে রাখার পরই অঙ্কুর তৈরি হয়। তবে বহু ক্ষেত্রে এই কাজটি করতে গিয়েই বেশ কিছু রোগ-জীবাণু এই খাবারে বংশবিস্তার করার সুযোগ পয়ে যায়। তাই খুব সতর্ক হয়েই ছোলা ভেজাতে হবে। আর অঙ্কুরিত ছোলা খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে নেওয়া দরকার। এর মাধ্যমেই সংক্রমণের আশঙ্কা এড়িয়ে যেতে পারবেন। এইটুকু কাজ করলেই সুস্থ থাকবে শরীরও। এছাড়া অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলুন। দৈনিক ২০–৩০ গ্রাম ভেজানো ছোলা যথেষ্ট। বিশেষ শারীরিক অবস্থা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।।