এইদিন ওয়েবডেস্ক,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),১১ এপ্রিল : বিয়ের আয়োজন সম্পূর্ণ । বর ও কনেপক্ষের লোকজন ভিড় জমিয়েছেন ছাদনাতলায় । বর আসতেই সানাইয়ের সুরের সাথে শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে মুখোরিত হয়ে উঠল গোটা এলাকা । পুরোহিতের বিয়ের মন্ত্রপাঠের মধ্যে মালাবদল থেকে শুভ দৃষ্টি হল । বাকি শুধু সিঁদুরদান । কিন্তু সেই শুভ মুহুর্তের ঠিক আগেই বরপক্ষ বলে ওঠে, ‘কনে কালো । এবিয়ে হবে না৷’ কনেপক্ষেও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয় । তারা বলে,’বর বুড়ো । আর বুড়ো বরের সাথে আমাদের মেয়ের বিয়ে দেবো না’ । এনিয়ে বর ও কনেপক্ষের মধ্যে শুরু হয়ে গেল তুমুল বাকবিতন্ডা । থেমে যায় সানাইয়ের সুর, শঙ্খ আর উলুধ্বনি । ভেস্তে যায় বিয়ে । বরকে নিয়ে বরযাত্রী ফিরে যায় । কনেকেও ছাদনাতলা থেকে সরিয়ে ঘরে নিয়ে যাওয়া হল ।
তবে এটা কোনো নরনারীর বিয়ে নয়,বরঞ্চ পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের মাজিগ্রামের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শাকম্ভরীর সঙ্গে দেউলেশ্বরের শিবের শুভ পরিণয় অনুষ্ঠানের প্রাচীন রীতি । প্রতি বছর চৈত্রমাসের মদন চতুর্দশীর দিন ধুমধাম করে দেবদেবীর বিয়ের আয়োজন করা হয় । কিন্তু সিঁদুরদানের ঠিক আগেই ‘কনে কালো আর বুড়ো বর’ নিয়ে বিতন্ডার কারনে বিয়ে ভেস্তে যায় । দেবীকে থাকতে হয় অরক্ষণীয়া।
স্থানীয়রা জানান, শাকম্ভরীর শিলামূর্তিটি প্রায় ১২০০ বছরের প্রাচীন। বহু বছর আগে মাজিগ্রামের সর্দারপাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা গ্রামের একটি পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে এই শিলামূর্তি উদ্ধার করেছিলেন। শাকম্বরী পৌরাণিকদেবী৷ চতুর্ভুজা দেবীমূর্তিটি ফুটখানেক উচ্চতার কালোপাথরের। দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে গ্রামের বটব্যাল পরিবার সেবাইতের কাজ করে আসছেন ৷ বর্তমানে ১৪ টি পরিবার সেবাইতের দায়িত্ব পালন করছে ৷
অন্যদিকে মাজিগ্রামে একটি উঁচু ডাঙ্গার উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন ভগবান দেউলেশ্বর শিব। গ্রামের ভট্টাচার্যদের কয়েকটি পরিবার সেবাইতের দায়িত্ব সামলান । শিবলিঙ্গের পাশাপাশি একটি অষ্টধাতুর শিবমূর্তি পুজো হয়। সারাবছর দেবদেবীর নিত্যসেবার হয়৷ তবে চৈত্রমাসের মদন চতুর্দশীর দিন দেবী শাকম্ভরী ও ভগবান দেউলেশ্বর শিবের বিবাহ অনুষ্ঠান ঘিরে সবচেয়ে বড় উৎসব হয় । বিয়েতে বৈদিক রীতি অনুযায়ী যাবতীয় আচার মেনে চলা হয়। গ্রামবাসী শুভজিৎ পাত্র,গৃহবধূ অন্তরা বটব্যাল,সুনীতা চক্রবর্তী (ভট্টাচার্য)রা বলেন,’গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান, সন্তানের বিয়ের সময় বাবা মা যেমন উপোস করে তেমনই আমাদেরও উপোস করতে হয় । কিন্তু দেবীকে থাকতে হয় অরক্ষণীয়া। কয়েক শতাব্দী ধরে এই প্রথাই চলে আসছে।’ তারা আরও জানান,তবে বিয়ে ভেস্তে গেলেও দুদিন পর প্রথা মেনে কনেযাত্রীরা ভট্টাচার্যদের বাড়িতে যায় । তাঁরাও প্রথা মেনে অতিথি বরণ করেন।
আজ শুক্রবার ছিল সেই পূণ্যতিথি । দেবী শাকম্ভরীর সঙ্গে দেউলেশ্বরের শিবের শুভ পরিণয় অনুষ্ঠান ঘিরে মেতে ওঠে গোটা গ্রাম। বিবাহ অনুষ্ঠান ছাড়াও আষাঢ় নবমীর দিন ধুমধাম করে পুজো হয়।।