কালিকাপুরাণ, মহাকাল সংহিতা ও বিভিন্ন তন্ত্রগ্রন্থে দেবী কালিকার অসংখ্য রূপের উল্লেখ পাওয়া যায়। আদ্যাশক্তি রূপে তিনি ব্রহ্ম স্থির ও নিষ্ক্রিয়। কিন্তু সেই ব্রহ্ম যখন কর্মশক্তি লাভ করেন, তখনই দেবী কালী রূপে প্রতিভাত হন। এই কারণেই দেবী কালিকা সৃষ্টির, সংহার ও রক্ষার প্রতীক। তন্ত্র মতে দেবীর নয় থেকে শুরু করে আট কিংবা এগারোটি প্রধান রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়। সেগুলির মধ্যে দেবী দক্ষিণাকালীর রূপের মাহাত্ম্য ও ধ্যানমন্ত্র নিচে উল্লেখ করা হল :-
দক্ষিণাকালী
গ্রামবাংলার গৃহস্থ ও মন্দিরে সবচেয়ে জনপ্রিয় রূপ এটি। দেবীর গাত্রবর্ণ নীল, গলায় মুণ্ডমালা, হাতে খড়্গ ও নরমুণ্ড। ডান হাতে অভয় ও বরমুদ্রা প্রদর্শিত। দক্ষিণাকালীর পদতলে শায়িত অবস্থায় থাকেন মহাদেব। এই রূপ শক্তি ও করুণার মেলবন্ধন।
দক্ষিণা কালিকা ধ্যান মন্ত্র :–
ওঁ করালবদনাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাম্ ।
কালিকাং দক্ষিণাং দিব্যাং মুন্ডমালাবিভূষিতাম্।।
সদ্যশ্ছিন্নশিরঃখড়্গবামাধোর্দ্ধকরাম্বুজাম্ ।
অভয়াং বরদাঞ্চৈব দক্ষিণোর্দ্ধাধঃপাণিকাম্।।
মহামেঘপ্রভাং শ্যামাং তথা চৈব দিগম্বরীম্ ।
কণ্ঠাবসক্তমুন্ডালীগলদ্রুধিরচর্চ্চিতাম্ ।
কর্নাবতংসতানীতশবযুগ্মভয়ানকাম্ ।।
ঘোরদ্রংষ্টাং করালাস্যাং পীনোন্নতপয়োধরাম্।
শবানাং করসংঘাতৈঃ কৃতকাঞ্চীং হসন্মখীম্ ।।
সৃক্কদ্বয়গলদ্রক্তধারাবিস্ফুরিতাননাম্ ।।
ঘোররাবাং মহারৌদ্রীং শ্মশ্মানালয়বাসিনীম্ ।
বালার্কমণ্ডলাকারলোচনত্রিতয়ান্বিতাম্ ।।
দস্তুরাং দক্ষিণব্যাপি-মুক্তালম্বিকচোচ্চয়াং ।
শবরূপ-মহাদেবহৃদয়ো-পরিবংস্থিতাম্ ।।
শিবাভির্ঘোররাবাভিশ্চতুর্দিক্ষু সমন্বিতাম্ ।
মহাকালেন চ সমং বিপরীতরতাতুরাম ।।
সুখপ্রসন্নবদনাং স্মেরাননসরোরুহাম্ ।
এবং সঞ্চিন্তেয়ৎ কালীং ধর্মকাম-সমৃদ্ধিদাম্ ।।
—————————————————বঙ্গানুবাদ :– যিনি করালবদনা, ঘোররূপা, মুক্তকেশী, চতুর্ভুজা।,
যিনি দক্ষিণাকালিকা নামে অভিহিতা, দিব্যা, মুণ্ডমালায় বিভূষিতা।।
যার বামদিকে নিম্ন ও ঊর্ধ্বস্থিত পদ্মহস্তে যথাক্রমে সদ্যছিন্ন মুণ্ড ও খড়গ আছে।
এবং দক্ষিণদিকের নিম্ন ও ঊর্ধ্বহস্তে যিনি বর ও অভয়দান করছেন।।
যিনি মহামেঘের মত শ্যামবর্ণা ও দিগ্বসনা।
গলদেশের মুণ্ডমালা হতে নিঃসৃত রক্তে যা্র সর্বাঙ্গ রঞ্জিত হচ্ছে।।
দুইটি শিশু শবকে কর্ণভূষণরূপে ধারণ করে যিনি অতি ভীষণা হয়ে আছেন।
যাঁর দন্ত ও মুখবিবর ভয়ংকর, যিনি পীনোন্নত স্তনযুক্তা।।
যিনি শবহস্ত দ্বারা কটিভূষণ রচনা করে হাস্যমুখী।
ওষ্ঠপ্রান্ত থেকে রক্তধারা নিঃসৃত হওায় যিনি ভীষণ আননা হয়ে আছেন।।
যাঁর রব মূর্তি অতি ভয়ংকর,যিনি শ্মশানে বাস করেন।
যাঁর নয়নত্রয় সূর্যমণ্ডলের মত রক্তিম।।
যাঁর দন্ত উন্নত,যাঁর কেশগুচ্ছ দক্ষিণদিক আবৃত করে বিলম্বিত হয়ে রয়েছে।
যিনি শবরূপী মহাদেবের হৃদয়োপরি অবস্থিতা।।
ভয়ংকর শব্দকারী শিবাকূল দ্বারা চতুর্দিকে বেষ্টিতা।
মহাকালের সঙ্গে যিনি বিপরীত বিহারে নিরতা।।
সুখে যাঁর বদনমণ্ডল হর্ষোজ্জ্বল, যাঁর মুখ আনন্দে প্রসন্ন ও মুখকমল সর্বদা হাস্যযুক্ত।
সেই ধর্ম–কাম-সমৃদ্ধি দায়িনী কালিকাকে এভাবেই স্মরণ করতে হয়।।