দক্ষিণাকালীরই আর এক রূপ রক্ষাকালী। নামের মধ্যেই নিহিত আছে তাঁর কর্ম — রক্ষা। ইনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রক্ষাকর্ত্রী, অশুভ শক্তি থেকে ভক্তদের সুরক্ষা দেন। দেবী কালিকা শুধুই সংহারের প্রতীক নন; তিনি সৃষ্টির, রক্ষার ও জ্ঞানের উৎস। তাঁর বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পায় জীবনচক্রের নানা দিক — ভয় ও ভক্তি, শক্তি ও করুণা, মৃত্যু ও মুক্তি। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, মাতৃরূপী এই দেবীই সমস্ত শক্তির মূল।
মা রক্ষাকালী চতুর্ভুজা, কৃষ্ণবর্ণা, মুণ্ডমালাবিভূষিতা।
মায়ের ডান হাতে খড়্গ ও নীল পদ্ম, এবং বাম হাতে কর্ত্রী ও খর্পর। মায়ের মাথায় গগনস্পর্শী জটা। মায়ের মাথায় এবং গলায় মুণ্ডমালার অলঙ্কার। মায়ের বক্ষে নাগহার। মা রক্ষাকালীর চক্ষু রক্তবর্ণ। কটিদেশে কৃষ্ণবস্ত্র এবং ব্যাঘ্রচর্ম। মায়ের বাম পা শবের বুকের ওপর, ডান পা সিংহের পিঠে স্থিত। মা রক্ষাকালী লেলিহান রূপে প্রকাশিত, তিনি অট্টহাস্য করেন, মহা ঘোর শব্দ করেন এবং তিনি সুভীষণা।
বিশ্বসারতন্ত্রে রক্ষাকালী মন্ত্র :
চতুর্ভুজা কৃষ্ণবর্ণা মুণ্ডমালাবিভূষিতা।
খড়্গঞ্চ দক্ষিণে পাণৌ বিভ্রতীন্দীবরদ্বয়ং।
কর্ত্রীঞ্চ খর্পরঞ্চৈব ক্রমাদ্বামেন বিভ্রতী।
দ্যাং লিখন্তীং জটামেকাং বিভ্রতীং শিরসা দ্বয়ীং।
মুণ্ডমালাধরা শীর্ষে গ্রীবায়ামথ চাপরাং।
বক্ষসা নাগহারঞ্চ বিভ্রতী রক্তলোচনা।
কৃষ্ণবস্ত্রধরা কট্যাং ব্যাঘ্রাজিনসমন্বিতা।
বামপাদং শবহৃদি সংস্থাপ্য দক্ষিণং পদং।
বিলাপ্য সিংহপৃষ্ঠে তু লেলিহানাসবং স্বয়ং।
সাট্টাহাসা মহাঘোররাবযুক্তা সুভীষণা।।
রক্ষাকালীর ধ্যানমন্ত্র :
ওঁ কৃষ্ণাং লম্বোদরীং ভীমাং নাগকুণ্ডলশোভিতাম্। রক্তমুখীং লোলজিহ্বাং রক্তাম্বরধরাং কটো।। পীনোন্নতস্তনীমুগ্রাং মহানাগেন বেষ্টিতাম্।
শবস্যোপরি দেবেশীং তস্যোপরি কপালিকাম্।। নাসাগ্রধ্যাননিরতাং মহাঘোরাং বরপ্রদাম্।
চতুর্ভুজাং দীর্ঘকেশীং দক্ষিণস্যোর্দ্ধবাহুনা।।
বিভ্রতীং মলিনীমেকাং বামোর্দ্ধে পানপাত্রকম্।
বরাভয়ধরাং দেবীমধস্তাদ্দক্ষবাময়োঃ।
পিবন্তীং রৌধিরীং ধারাং পানপাত্রং সদাসবৈঃ।
সর্ব্বসিদ্ধিপ্রদাং দেবীং নিত্যং গিরিনিবাসিনীম্।।
লোচনত্রয়সংযুক্তাং নাগযজ্ঞোপবীতিনীম্।
দীর্ঘনাসাং দীর্ঘজঙ্ঘাং দীর্ঘাঙ্গীং দীর্ঘজিহ্বিকাম্।।
চন্দ্রসূর্যাগ্নিভেদেন লোচনত্রয়সংযুতাম্।
মারীনাশকরীং দেবীং মহাভীমাং বরপ্রদাম।।
ব্যাঘ্রচৰ্ম্মশিরোবদ্ধাং জগণ্ড্রয়বিভাবিনীম্।
সাধকানাং সুখং কর্ত্রীং সর্ব্বলোকভয়াপহাম্।
এবস্তুতাং সদা কালীং রক্ষাদিং প্রণমাম্যহম্।।
বিশ্বসারতন্ত্রের এই মন্ত্রেই বাংলায় রক্ষাকালী পূজিত হন যদিও এই মন্ত্রে সরাসরি রক্ষাকালীর উল্লেখ নেই। প্রসঙ্গত পালযুগে পঞ্চরক্ষিকা মায়ের পুজো হত, যিনি শরণাগত সন্তানকে সমস্ত আপদ বিপদ থেকে রক্ষা করতেন। এবং রক্ষাকর্ত্রী হিসেবে উপাস্য মায়ের পুজো তন্ত্রধর্মে অত্যন্ত প্রাচীন প্রথা। একাধিক বিখ্যাত রক্ষাকালী আছেন বাংলায়, যেমন বোল্লা কালী।

