প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৬ মে : ডিভিসির সেচ খালের উপরে থাকা সেতুর দু’দিকের বাঁক যেন মরণ ফাঁদ।রাজ্য সড়কের উপরে থাকা দুর্বল কালভার্টের মতো সেই সেতু পেরিয়ে যেতে গিয়ে কয়েক বছর আগে দু’দুটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। তাতে বহূ মানুষের প্রাণও গিয়েছে ।এখনও মাঝে মধ্যে ঘটে দুর্ঘটনা ।এইসব কিছুর পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থেকে তারকেশ্বর যাবার ১৫ নম্বর রাজ্য সড়কের জামালপুরেরচৌবেড়িয়ায় নতুন সেতু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূর্ত দফতর । সেতু তৈরির জন্যে যে জমির প্রয়োজন হবে তা চিহ্ণিত করণের কাজও ইতিমধ্যেই সমাপ্ত হয়ে গিয়েছে। জমি মিলে গেলেই শুরু হয়ে যাবে সেতু তৈরির কাজ ।
শুধু জামালপুরের চৌবেড়িয়ার সেতু তৈরি নয় ,ভাতারের সামন্তী রোডে কুবরাজপুরে খড়ি নদীর উপর থাকা সেতুটি সংস্কারের কাজও হবে। তার জন্যে দু’বছর ধরে ৩০ লক্ষ টাকা পড়ে আছে।জানা গিয়েছে ,চলতি মাসেই ওই সেতু সংস্কার করার কাজে হাত লাগাবে পূর্ত দফতরের সড়ক বিভাগ ।
মেমারি চকদিঘী তারশ্বর রাজ্য সড়ক চওড়া করার কাজ বছর তিন বছর আগেই সম্পূর্ন হয়ে গেছে । কিন্তু রাস্তা চওড়া হয়ে গেলেও চৌবেড়িয়ায় ডিভিসি সেচ খালের উপরে থাকা পুরানো সেতুটি কালভার্টের আকারেই রয়ে থাকে ।যে সেতু দিয়ে পাশাপাশি যেতে পারে না দুটি গাড়ি ।প্রশাসন সূত্রে জানা গায়েছে , ওই জায়গায় চওড়া নতুন সেতু তৈরি ও তার সংযোগকারী রাস্তার জন্যে ০.৮৩ হেক্টর জমির প্রয়োজন। সেই জমি পাওয়ার জন্যে জমি অধিগ্রহণ দফতর এলাকার বেশ কয়েক জন জমির মালিকের সঙ্গে কথা বলেছে।প্রশাসনের দাবি, জমির মালিকরা সেতুর জন্যে জমি দেওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন। তাঁরাও মনে প্রাণে চাইছেন বাঁকের বিপদ এড়াতে চৌবেড়িয়ায় সেচ খালের উপর দিয়ে সোজাসুজি ভাবে তৈরি হোক চওড়া পাকা সেতু ।
চৌবেড়িয়া সেচ খালের উপরে থাকা বিপজ্জনক সেতু । জামালপুর । সোমবার ।
বাসিন্দাদের এমনটা চাওয়ার কারণটাও যথেষ্ট
ততপর্যপূর্ণ । প্রশাসন ও এলাকার বাসিন্দাদের কথায় জানা গিয়েছে,কয়েক বছরের ব্যবধানে চৌবেড়িয়ার ওই সেতুর উপর দু’টি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছিল।প্রথমটি ঘটে ২০০৮ সালের ৬ অক্টোবর মহাসপ্তমীর রাতে। ঠাকুর দেখে টাটাসুমো গাড়িতে চড়ে জামালপুরের পাঁচড়া গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন রক্ষিত পরিবারের সদস্যরা । পথে বাঁক কাটিয়ে টাটাসুমো গাড়িটি চৌবেড়িয়ার সেতুর মুখে পৌছেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সোজা ডিভিসি সেচ খালের জলে পড়ে যায়। এই দুর্ঘটনায় টাটা সুমোয় থাকা রক্ষিত পরিবারের চার শিশু সহ দশ জনের মৃত্যু হয় । এর পরের বড় দুর্ঘটনাটি ঠিক একই জায়গায় ঘটে দু’বছর বাদ দোসরা অক্টোবর তারিখে । শ্মশানযাত্রী বাহী একটি ছোট লরি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ডিভিসির সেচ খালের গভীর জলে গিয়ে পড়ে । এই দুর্টনাতেও ১০ জন শ্মশানযাত্রী প্রাণ হারান।এর পরেও নানা সময়ে একই জায়গায় মোটরবাইক ও অন্য যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়েছে।একের পর এক এইসব দুর্ঘটনা ও পুরানো সেতুটির বিপদ জনক অবস্থা তৈরি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ত দফতর চৌবেড়িয়ায় নতুন আলদা সেতু তৈরির পরিকল্পনা নেয়।তিন বছর আগেই শেষ হয়েছে মেমারি চকদিঘী তারকেশ্বর রোড় চওড়া করার কাজ। তারপর ওই জায়গায় নতুন চওড়া পাকা সেতু তৈরির উপরে জোর দেওয়া হয়। বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করে পাঠানোর পরে রাজ্য সরকার সেতু ও তার সংযোগকারী রাস্তা তৈরির জন্যে সাড়ে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছ, বর্তমানে মেমারি-তারকেশ্বর সড়ক পথ চওড়ায় রয়েছে ১০ মিটার। সেখানে চৌবেড়িয়ার সেতুটি মাত্র সাড়ে ৪ মিটার চওড়া রয়েছে।নতুন সেতু তৈরি হয়ে গেলে আর কাউকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হবে না ।
পূর্ত দফরের বর্ধমান ডিভিশন (২)-র এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কনক কুমার সাহা জানিয়েছেন,রাস্তাটি যতটা চওড়া তার তুলনায় সেতুটির চওড়া অনেকটাই কম। তার উপর বিপদজনক বাঁক রয়েছে। দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকায় চৌবেড়িয়ায় নতুন করে সেতু তৈরির অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে ।
সেতু তৈরির জন্যে জমি দিতে সন্মত হয়েছেন
এলাকার প্রায় ১৩ জন জমি মালিক । তাঁদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় পাঁচড়ার রক্ষিত পরিবার
।এই রক্ষিত পরিবারের সদস্য দিলীপ রক্ষিতের সঙ্গে সোমবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,“চৌবেড়িয়ায় ডিভিসি সেচ খালের উপরে নতুন করে চওড়া সেতু তৈরি হলে দুর্ঘটনা কমবে।বিপদজনক বাঁক কাটিয়ে সরু সেতু পেরিয়ে যেতে গিয়ে কাউকে আর দুর্ঘটনার কবলে আর পড়তে হবে না ।আমাদের মতো কাউকে আর পরিবারের দশজন স্বজন কে হারানোর যন্ত্রণাও পেতে হবে না।তাই সেতু তৈরির জন্য জমি দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের পরিবারের কেউ আপত্তি তোলে নি।অন্য যে সব জমি মালিকদের প্রশাসন ডেকেছিল তাঁরাও জমি দেওয়ার ব্যাপারে কোন আপত্তি তোলন নি । তবে আমরা এই টুকু চাইবো, সরকার জমির মূল্য নির্ধারণ ঠিকঠাক যেন করে। জামালপুর পঞ্চায়েতের সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ভূতনাথ মালিক বলেন, ‘চৌবেড়িয়ায় সেচ খালের উপরে চওড়া সেতু নির্মানের দাবি দীর্ঘ দিনের । রাজ্য সরকারের সহযোগীতায় সেই দাবি এবার পূর্ণ হতে চলেছে।
প্রশাসন সূত্রে এও জানা গিয়েছে,ভাতারের সামন্তী রোডের উপর সংযোগকারী রাস্তা ও সেতু সংস্কারের জন্যে ৩০ লক্ষ টাকা দেড় দুই বছর ধরে এসে পড়ে আছে। করোনা অতিমার,
বিধানসভা ভোট,পরীক্ষা প্রভৃতি নানা কারণে সেতু সংস্কারের কাজে এতদিন পূর্ত দফতর হাত দিতে পারেনি। তাই এবার ভাতারের সামন্তী রোডের উপরে সংযোগকারী রাস্তা ও সেতু সংস্কারের কাজও সরে ফেলার সিদ্ধান্ত পূর্ত দফতর নিয়ে ফেলেছে । পূর্ত দফতরের ধারণা সেতু সংস্কার করতে ৪৫ দিন সময় লাগবে। চলতি মাস থেকেই তারা সংস্কারের কাজে হাত লাগাতে চাইছেন।
দফতরের হাইওয়ে ডিভিশন ২-এর সহকারী ইঞ্জিনিয়ার (ভাতার) নাড়ুগোপাল বলেন, “সংযোগকারী রাস্তা ও সেতুর মধ্যে নীচের দিকে ফাটল লক্ষ্য করা গিয়েছে। স্বাস্থ্যপরীক্ষ করে দেখা গিয়েছে সেতুটি দুর্বল। সে জন্যে সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে।“ভাতারের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী, বিডিও অরুণ কুমার বিশ্বাসও সেতুটি পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেতু সংস্কার চলাকালীন পাশেই হিউম পাইপ দিয়ে যাতায়াতের জন্যে একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা করা হবে।