এইদিন ওয়েবডেস্ক,দিনাজপুর(বাংলাদেশ),১০ সেপ্টেম্বর : কয়েকটি আদিবাসী পরিবারকে নতুন ঘর তৈরি করে দিয়েছিল সরকার । আর তা কেড়ে নিল স্থানীয় জিহাদিরা । ভূমি জিহাদের এই ঘটনাটি বাংলাদেশের দিনাজপুর সদর উপজেলার । উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের চিলমন খান দিঘির পাড়ে নিজস্ব ঘর থাকা সত্ত্বেও ১২ টি আদিবাসী পরিবার বর্তমানে গৃহহীন । তাঁরা ভয়ে ঘরে ঢুকতে পারছে না । গত মঙ্গলবার এনিয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে আশ্রয়হীন পরিবারগুলি । তাঁদের অভিযোগ, সরকারের কাছ থেকে ঘরের দলিল বুঝে পাওয়ার পর ঘরে উঠতে গেলে স্থানীয় মুসলমানেরা তাঁদের প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে । তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে ঘরগুলিতে । যদিও ঘরের দলিল তাঁদের কাছেই আছে বলে তাঁরা জানান ।
সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী,মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ফাজিলপুর ইউনিয়নের ৫২ টি আশ্রয়হীন আদিবাদী পরিবারকে ঘর তৈরি করে দিয়েছিল শেখ হাসিনা সরকার । সরকারি প্রকল্পে চিলমন খান দিঘির পাড়ে নির্মাণ করা হয়েছিল ৫২ টি ঘর । প্রথম পর্যায়ে ৩০টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০টি এবং তৃতীয় পর্যায়ে ১২টি আদিবাসী পরিবারের জন্য ঘর নির্মান করে দেওয়া হয় । ইতিমধ্যে ৪০টি ঘরে ৪০ টি আদিবাসী পরিবার বসবাসও শুরু করেছে । তৃতীয় পর্যায়ে ১২টি পরিবারের ঘরে ঢোকার কথা ছিল । পরিবারগুলিকে জায়গার দলিল পর্যন্ত হস্তান্তর করে দেওয়া হয়েছে ৷ কিন্তু শেষ পর্যায়ের ১২ টি পরিবার এযাবৎ ঘরে ঢুকতে পারেনি স্থানীয় মুসলিমদের বাধার কারণে ।
জানা গেছে, দিঘির পূর্ব পাশে অর্ধেক অংশে রয়েছে মুসলমানদের কবরস্থান। বাকি অংশে সাঁওতালদের কবরস্থান ও মন্দির । পাশেই প্রায় এক একর জায়গায় কোদাইলধোয়া দিঘি । আর কবরস্থানের দোহাই দিয়ে মুসলিম লোকজন ওই ১২ টি আদিবাসী পরিবারের গৃহপ্রবেশ আটকে দিয়ে নতুন ৬ টি ঘরে তালা লাগিয়ে দিয়েছে । বাকি ছয়টিতে বসবাস শুরু করেছেন পাশের পরশুরামপুর গ্রামের মোস্তফা কামাল, দফিলউদ্দিন, আজিজুল ইসলাম, ইয়াসিন আলী, বকুল আলী ও অমিলা বেগম । তবে তারা ঘর দখলে রাখতে ঘরের মেঝেতে শুধু চাটাই পেতে রেখেছেন । জবরদখককারীদের দাবি, তারাও ভূমিহীন। প্রথম দিকে তাদের ঘর দেওয়ার কথা ছিল। দিঘির পারে তাদের একটা কবরস্থান আছে। কবরস্থানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সেখানে বসবাস করা তাদেরই অধিকার । কোদাইলদহ দিঘিটি ভাগে নেওয়া মৎস্যচাষী রহিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি গায়ের জোরে একটা ঘরের দখল নিয়ে নিয়েছে । নিজের ঘর থাকা সত্ত্বেও দফিলউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি আদিবাসীদের একটি ঘরে তালা লাগিয়ে নিজের দখলে রেখেছে ।
অন্যদিকে গৃহহীন রবেন মুরমু (৫১),সুনীল কিস্কু (৪৫),বলেন,’আমরা তিন পুরুষ ধরে চিলমন খান দিঘির পারসহ পাড়গাঁও গ্রামে শতাধিক সাঁওতাল পরিবার বসবাস করছি । দিঘির পাড়ে ৩০টি পরিবারে ১৬৭ জনের বসবাস । সবার মাটির ঘর ছিল। বহু কষ্ট করে বসবাস করতাম । সরকার ঘর করে দেওয়ার পর ভেবেছিলাম কিছুটা কষ্ট লাঘব হবে । কিন্তু স্থানীয় মুসলমানরা আমাদের ঘর দখল করে নিয়েছে । এখন আমরা অন্যের বাড়ির বারান্দায় দিন কাটাচ্ছি ।’
উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া শাওন হাঁসদা বলেন,’পাড়ায় ৪৬ জন শিশু-কিশোর আছে। এমনিতেই খেলার মাঠ নেই। পূজা-পার্বণে অনুষ্ঠান করার জায়গা নেই। মন্দিরের যে জায়গায় অনুষ্ঠান করা হতো, কবরস্থানের কারণে সেটিও বন্ধ ।’
এদিকে এই বিষয়ে কিছুটা অসহায় দেখালো ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অভিজিৎ বসাককে । তিনি শুধু জানিয়েছেন, বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে । এই বিষয়ে দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মর্তুজা (ইউএনও) আল মুঈদ বলেছেন, সরকারিভাবে যাঁদের জন্য ঘর বরাদ্দ হয়েছে, একমাত্র তাঁরাই ঘর প্রাপ্য হবেন । অন্য কারও দখলে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই । দু’এক দিনের মধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টির নিষ্পত্তি করবো ।’।
তথ্যসূত্র ও ছবি : প্রথম আলো ।