প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৮ মে : বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য অধিগৃহিত জমির দাম জমি মালিককে মেটানো হয় নি । তাই পূর্ব বর্ধমানের জেলা শাসকের বাংলো ক্রোক করার নির্দেশ দিল আদালত।শুক্রবার বর্ধমানের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক বিশ্বরূপ শেঠ এই নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশনামায় তিনি বর্ধমান শহরের সাধনপুর এলাকায় বাগান, ফাঁকা জমি ও ভবন সহ পুরো বাংলো ক্রোক করার কথা উল্লেখ করেছেন।
শুধু নির্দেশ দিয়েই খান্ত হয় নি আদালত।নির্দেশ কার্যকর করার জন্য জেলা আদালতের নাজিরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদেশ করেছেন বিচারক। এমনকিক্রোকের পর বাংলোটি যাতে নিলামে বিক্রি করা যায় তার জন্য বাজারদর জানতেও নাজিরকে বলা হয়েছে। ক্রোক প্রক্রিয়া কার্যকর করতে কতজন পুলিস প্রয়োজন হবে তারও রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে নাজিরকে। ১৯ জুলাই এ ব্যাপারে আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে হবে নাজিরকে। জেলাশাসকের বাংলো নিলাম করে জমির মূল্য বাবদ আদালত নির্ধারিত টাকা মিটবে কিনা তাও নাজিরকে জানাতে বলা হয়েছে
বিচারকের এমন রায় নজিরবিহীন বলে মনে করছেন আইনজীবি মহল ও প্রশাসনের কর্তারা ।
বিচারক বিশ্বরূপ শেঠের এমন নির্দেশের কথা চাউর হতেই এদিন জেলার প্রশাসনিক মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ধমানের গভর্ণমেন্ট প্লিডার (জিপি) মুরারি মোহন কুমার এ প্রসঙ্গে বলেন,’সরকারের তরফে হাইকোের্ট রিভিউ পিটিশন করার কথা বলে সময় চাওয়া হয়। এনিয়ে দু’পক্ষের শুনানি হয়। তবে, আদালত কি নিের্দশ দিয়েছে তা না দেখে বলতে পারব না।’
বর্ধমান আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় সড়ক ফোর-লেন করার জন্য ২০০৩ সালে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। পশ্চিম বর্ধমানের কাঠপুকুর মৌজায় কলকাতার সরশুনা থানার হো-চি-মিন সরণির বাসিন্দা সুশান্ত কুমার গোস্বামীর ০.৪১ একর জমি সরকার অধিগ্রহণ করে । সেই সময় জমির মূল্য স্থির হয় ২৬ লক্ষ ৭৬ হাজার ২৪০ টাকা। যদিও সরকার সেই টাকা মেটায় নি। এনিয়ে প্রশাসনের নানা মহলে দরবার করেন জমির মালিক। তাতে কাজ হয়না। বাধ্য হয়ে জমির মূল্য বাবদ নির্ধারিত টাকা পেতে তিনি ২০১৩ সালে মামলা করেন বর্ধমান আদালতে। আদালত জমির মূল্য বাবদ ৫৪ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয়।কিন্তু আদালতের নির্দেশের পরও সরকার জমির মালিককে জমির মূল্য বাবদ প্রাপ্য টাকা মেটায়নি। তাই নির্দেশ কার্যকর করতে ২০১৫ সালে ফের আদালতের দ্বারস্থ হন জমির মালিক। সেই থেকে মামলাটি বর্ধমানের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে চলছিল।
এরই মধ্যে জমির মালিক মারা যান।তার পর তাঁর তিন ওয়ারিশ মিতালি গোস্বামী, পার্থসারথি গোস্বামী ও সিদ্ধার্থ গোস্বামী মামলাটি চালিয়ে যান।চলতি বছরের ১২ এপ্রিল আদালত জমির মূল্য বাবদ মালিককে ১ কোটি ৯৯ লক্ষ ৭০ হাজার ৭৯০ টাকা ১৭ মে এর মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশও মানেনা সরকার। সেই মামলার শুনানি এদিন হয় । এদিনের শুনানির শুরুতে জিপি ১২ এপ্রিলের নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোের্ট রিভিউ পিটিশন দাখিল করার জন্য আরও ২ মাস সময় চান।তখন সিদ্ধার্থ যেহেতু নিজেই আইনজীবী তাই তিনি এদিন নিজেই সওয়াল করেন। সরকার পক্ষের সময় চাওয়া নিয়ে তিনি তীব্র আপত্তি করেন। দু’পক্ষের সওয়াল শোনার পর বিচারক তাঁর পর্যবেক্ষণে জানান, ২০১৫ সাল থেকে মামলাটি ঝুলে রয়েছে। আগেরদিনের শুনানিতেই আর কোনও সময় দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল । এরপর রায় কার্যকর করা নিয়ে সময় দিলে ন্যায় বিচার বঞ্চিত হবে। সরকার পক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়ে ৩.০৪ একর জমির উপর তৈরি জেলা শাসকের বাংলো ক্রোক করার নির্দেশ দেন বিচারক।
সিদ্ধার্থ গোস্বামী বলেন,’আমি নিজেই আইনজীবী। সরকার দীর্ঘদিন ধরে নানা অছিলায় জমির দাম মেটাচ্ছিল না। আমি আইন জানি বলে কিভাবে রায় কার্যকর করতে হয় তা আমার জানা আছে। আইনজীবীর যদি এই অবস্থা হয় তাহলে সাধারণ মানুষের কি অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়।’।
