এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,০৬ জুলাই : মেয়ে পালিয়েছে ভিন ধর্মী প্রেমিকের সাথে । ধর্মান্তরিত হয়ে প্রেমিককে নিকাহ করেছে । বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে মেয়েকে আইনত “ত্যাজ্য” ঘোষণা করলেন হতাশ বাবা-মা । বাংলাদেশের দক্ষিণ- পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের প্রশাসনিক অঞ্চল চাঁদপুরের ঘটনা । চাঁদপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে (Chandpur Judge Court) মেয়ে ঋত্বিকা প্রসাদকে(১৮) আনুষ্ঠানিকভাবে “ত্যাজ্য” ঘোষণা করে সমস্ত সম্পত্তি থেকে ‘চিরতরে বঞ্চিত’ করলেন বাবা উত্তম প্রসাদ ও মা সুমিতা রানী ৷ শুধু তাইই নয়, ধর্মীয় রীতি মেনে কুশপুতুল দাহ,পিন্ডদানসহ জীবিত মেয়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠাও করেন তারা ।
উত্তম প্রসাদ ও মা সুমিতা রানী গত ৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলা নোটারী পাবলিক এর কার্যালয়ে “নিজ কন্যাকে ত্যাগ/ত্যাজ্য সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র”-এ জানিয়েছেন, আমাদের সাংসারিক জীবনে ৩টি কন্যা সন্তান রয়েছে । তারা হল : ঋত্বিকা প্রসাদ(১৮), স্বস্তিকা প্রসাদ(১৩) এবং শ্রেষ্ঠা প্রসাদ(৮) । ঋতিকা প্রসাদ আমাদের বড় কন্যা হয়। তারা লিখেছেন, আমাদের প্রথম কন্যা সন্তান ঋতিকা প্রসাদ ছোট বেলা হতেই খুব অবাধ্য চলাফেরা করিত এবং পিতা মাতা হিসাবে আমাদেরকে কোন মান্য করিত না এবং আমাদের কোন কথাবার্তা মানিয়া চলিত না, উশৃঙ্খল চলাফেরা করিত। যাহার কারনে অনেক সময় আমাদেরকে সমাজে বিভিন্নভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হত এবং অপমান অপদস্ত হতে হত । তবুও কন্যা হিসাবে আমরা সকল অন্যায় সহ্য করে তাকে শুধরাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হইয়াছি ।
ঘোষণাপত্রের দ্বিতীয় পাতায় লেখা হয়েছে,কিছুদিন পূর্বে আমাদের প্রথম সন্তান ঋতিকা প্রসাদ নিজ ধর্ম ত্যাগ করিয়া নোটারী পাবলিক এর মাধ্যমে ঘোষণাপত্র করিয়া মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করিয়া পুনরায় নোটারী পাবলিক এর মাধ্যমে এক মুসলিম সম্প্রদায়ের ছেলেকে আমাদের কথার অবাধ্য হইয়া বাড়ি হইতে পালিয়ে গিয়ে বিবাহ করে। আমাদের প্রথম কন্যা বাড়ি থেকে পালাইয়া যাবার পর আমরা চাঁদপুর মডেল থানায় বিগত ১৮/০৩/২০২৫ তারিখে নিখোঁজ ডায়েরী করি। উক্ত নিখোঁজ ডায়রী নং-১২০৪, তাং-১৮/০৩/২০২৫ইং হয়। উক্ত ডায়েরীর কারণে চাঁদপুর মডেল থানা কর্তৃপক্ষ ভিকটিমকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় এবং ভিকটিমকে বিগত ২৮/০৩/২০১৫ইং তারিখে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করিলে আমধ্য ঘোষণাকারীগণ আদালতে আমাদের কন্যাকে জিম্মা পাওয়ায় প্রার্থনা করিলে আমাদের কন্যার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ভিকটিমকে নিজ জিম্মায় যাওয়ার আদেশ প্রদান করেন৷ পরবর্তীতে আমরা উক্ত বিষয় জানতে পারিয়া বহু বুঝানোর চেষ্টা করিয়াও ব্যর্থ হইয়াছি। এই কারণে আমরা সমাজে অনেক ছোট হইয়াছি এবং জাতিগতভাবেও হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হইয়াছি সমাজে মুখ দেখানোর কোন অবস্থান নাই।
এমতাবস্থায় আমাদের এই ১ম কন্যা সন্তান ঋত্বিকা প্রসাদকে আমি চিরতরে ত্যাজ্য ঘোষণা করিয়া আমাদের সাথে পিতা-মাতা সন্তানের সম্পর্ক চিরতরে ছিন্ন করিলাম । অদ্য হইতে ‘আমাদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির উপর তার অধিকার বিলুপ্ত ঘোষণা করিলাম এবং অদ্য পরবর্তী ভবিষ্যতে আমাদের কোন স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির অংশীদার হিসাবে এই ত্যাজ্য কন্যা বিবেচিত হইবে না। অদ্য পরবর্তী অর্থাৎ ভবিষ্যতে তাহার কোন প্রকার দায় আমরা ঘোষনাকারীগণ গ্রহণ করিব না, তাহার কোন প্রকার অপরাধের দায় পিতা-মাতা হিসেবে আমরা বহন করিবো না।
সব শেষে লেখা হয়েছে,অবাধ্য কন্যা ঋত্বিকার সাথে অত্র হলফনামার মাধ্যমে সকল সম্পর্ক ত্যাগ করিয়া দিলাম এবং আমরা তাহাকে আমাদের সহায় সম্পত্তি হইতে চিরতরে বঞ্চিত করিয়া দিলাম। অদ্য হইতে তাহার সাথে আমাদের আর কোন প্রকার পিতা/মাত্রা কন্যার সম্পর্ক নাই ও রহিল না এবং ভবিষ্যতেও থাকিবে না। আমাদের উক্ত কন্যা ঋত্বিকা প্রসাদের সাথে যদি কেহ কোন প্রকার লেনদেন কি আত্মীয়তার সম্পর্ক কিংবা কোন অপকর্ম করে তাহলে আমরা তাহাতে দায়ী নই। এতদ্বার্থে স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে, সুস্থ্য মস্তিষ্কে কতেক সাক্ষীগণের মোকাবেলায় অত্র হলফনামায় নিজ নাম স্বাক্ষর করিয়া অত্র ঘোষণাপত্র সম্পাদন করিলাম।।

