এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৮ ডিসেম্বর : কোন সরকারের বিরুদ্ধে যখন প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া প্রবল আকার ধারণ করে তখন কোন না কোন প্রকল্প ঘোষণা করে “শিলান্যাস” কর্মসূচি নিতে দেখা যায় তাদের । মূলত এর উদ্দেশ্য হলো ভোটারদের ভাঁওতা দিয়ে ভোট আদায় করা । স্বাধীন ভারতে রাজনৈতিক দলগুলি এভাবে ভাঙতোবাজি করে ভোটে জিতেও গেছে । এমনকি তারা সরকার গঠন করেছে । বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া ব্যাপক আকার ধারণ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে । মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, নারী নির্যাতনসহ একাধিক ইস্যুতে ব্যাকফুটে আছে । এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভোটের মুখেই “শিলাপোঁতার একটা কর্মযজ্ঞ শুরু” করতে চলেছে বলে দাবি করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।
মমতা ব্যানার্জির সরকারের এই গোপন পরিকল্পনা ফাঁস করতে আজ সোমবার বিকালে কলকাতার সল্টলেকের দলীয় কার্যালয় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন, ‘গোটা রাজ্য জুড়ে জলাঞ্জলি বা হতশ্রীর পাঁচালি বহরমপুর থেকে প্রকাশ করার পরে মমতা ব্যানার্জি দেখছেন যে তেমন লোক হচ্ছে না । উনার সরকারের প্রতি বর্ণ ধর্ম নির্বিশেষে উনার সরকারের প্রতি আস্থা উঠে গেছে এবং তীব্র প্রতিষ্ঠান বিরোধী হওয়া রয়েছে।তাই তিনি এবারে রেডিমেড প্রচার কার্যক্রম করার জন্য, এক্সটেনশনে থাকা যার মেয়াদ ৩১ শে ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে শেষ হবে, মাননীয় মুখ্য সচিব মনোজ পন্থকে দিয়ে গত শুক্রবার তিনি ডিএম এবং বিডিওদের কিছু নির্দেশ সিনেমা পাঠিয়েছে।’
কি দেই নির্দেশনামা তা পড়ে শোনান শুভেন্দু । তিনি বলেন,’তিনি বলেছেন বাড়ির জল সরবরাহ এবং আমার পাড়া আমার সমাধান প্রকল্পে কাজ হোক বা না হোক প্রচার বাড়াতে হবে । কিছুদিন আগে আমি মুরলীধর লেনের কার্যালয়ে বসে অভিযোগ করেছিলাম যে ৭ হাজার কোটি টাকার ৯১১৪ টা স্কিমের টেন্ডার করা হচ্ছে । এবং আমি ঠিকাদার বন্ধুদের কাছে অনুরোধ করেছিলাম যে যাওয়ার শেষ মুহূর্তে আপনারা ঠকবেন না । যদি আপনারা ঠিকাদারী নেন তাহলে ভবিষ্যতে আমরা দায়িত্বে এলে এই অবৈধ কাজে পেমেন্ট করতে পারবোনা ।’
তিনি বলেন,’মাত্র ১০% টাকা অর্থাৎ ৭০০ কোটি টাকায় দিয়ে টেন্ডার করাচ্ছে অথবা কাজ করতে শুরু করেছে । সাত হাজার কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ১০% টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । কারণ উনি(মমতা ব্যানার্জি) ভালো করে জানেন যে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে, ২০২১ সালের দিন অনুযায়ী এমসিসি চালু হয়ে যাবে । ২৪ শে ফেব্রুয়ারির পর যেকোনো দিন নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করতে পারে ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’অথচ মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ তার নির্দেশে জেলাশাসক এবং ভিডিও দের বলেছে, এখন থেকে প্রচার সর্বস্তরে নিয়ে যেতে হবে । প্রতিটি এলাকাকে রাখতে হবে নিবিড় প্রচারের আওতায় । বলতে হবে এই কাজ শুধুমাত্র রাজ্য সরকারই করছে। প্রচারের জন্য ব্যবহার করতে হবে লিফলেট । মাইক প্রচার আর মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া হোর্ডিং এলাকায় এলাকায় দৃশ্যমান প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ১৫ বছরের রিপোর্ট কার্ড এবং উন্নয়নের পাঁচালী সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সরকারের চ্যালেঞ্জ এবং শিলান্যাস । তবে কাজ হবে না, শুধু শিলা পোঁতা হবে । শিলান্যাসের পরে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে জেলা শাসককে একটা মিটিং করতে হবে ।’
তিনি বলেন,’মিটিংয়ে থাকতে হবে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের, নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য, সরকারি কর্মচারী এবং গ্রামের বিশিষ্টজনদের । মিটিংয়ে উপস্থিতি ৫০০ জন অন্তত নিশ্চিত করতে হবে । আই প্যাকের ব্যবস্থাপনায় সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দিয়ে বক্তৃতা হবে । উপস্থিতিতে অন্তত পঞ্চাশ শতাংশ মহিলা হতে হবে । এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । অর্থাৎ, ‘এই প্রচার করে শিলাপোঁতার একটা কর্মযজ্ঞ শুরু হতে চলেছে । এইটা আমি পর্দা ফাঁস করলাম ।’
তিনি পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন,’গোটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বলব মিটিংগুলোতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী ২ কোটি চাকরির তালিকা দেখতে চাইবেন । নরেন্দ্র মোদিজির সরকার ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে ৪০ লক্ষ বাড়ি গিয়েছে, কেন বাড়ি পাননি জিজ্ঞেস করবেন । ৭২ লক্ষ্য শৌচালয় দিয়েছে, কেন শৌচালয় পাননি প্রশ্ন করবেন । জল জীবন মিশন প্রকল্পে ৮ হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন, কেন আপনার বাড়িতে জল যায়নি তার প্রশ্ন করবেন আপনারা । কেন ওয়ান টিচার, টু টিচার, নো টিচার স্কুল চলছে, এত স্কুল বন্ধ হয়ে গেল কেন, প্রশ্ন করবেন আপনারা । প্রশ্ন করবেন ৬ মে ২২৫ তারিখে উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরোনোর তিন মাস পর কেন ভর্তি হয়েছে? কেন জয়েন্টের সব চেয়ে শেষে পশ্চিমবঙ্গের রেজাল্ট বের করা হয়েছে ? কেন গত আট বছরে ৮২০০ স্কুল বন্ধ করা হয়েছে ? রতন টাটার টাটা কোম্পানি সহ ৬৮৮৮ শিল্প কেন মমতা ব্যানার্জির সময়ে তাড়ানো হয়েছে ? কেন মহিলাদের রাত্রে বেরোনো যাবে না মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন ? কেন অভয়ার মতো ঘটনা আজ ঘটে ? কেন দুর্গাপুরের আইটিসি কলেজের মেডিকেলের ছাত্রীকে গ্যাং রেপ হতে হয় ? আপনারা গিয়ে এইসব প্রশ্ন জেলাশাসকদের করুন ।’
শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেন,’জিজ্ঞেস করুন কাকদ্বীপে মাতা কালীকে প্রিজন ভ্যানে উঠতে হয় কেন ? জিজ্ঞেস করুন বিতর্কিত বাবর এর নামে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করলে অনুমোদন লাগেনা, কিন্তু দুর্গাপূজা, সরস্বতী, পুজো কালী পুজো করতে গেলে কেন আদালতে যেতে হয় ? এই প্রশ্নগুলো করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের জনগণকে এই হাটসভা, উঠানসভা, প্রচার সভা শিলাপোঁতার সভাতে করার জন্য আবেদন করছি ।’।

