প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,৩০ সেপ্টেম্বর : কয়েকদিন ধরে চলা লাগাতার বর্ষণের জেরে জল বাড়ে নদ-নদীতে।তার উপর বৃহস্পতিবার দামোদরে ২ লক্ষ ৪ হাজার ৩৮৬ কিউসেক ও অজয় নদে দেড় লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছ। এর ফলে পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন এলাকা বানভাসি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগাম সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা প্রশাসন ।নদি তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারের সতর্ক থাকার জন্য এদিন মাইকে প্রচার চালায় প্রশাসন। তৈরি রাখা হয়েছে ফ্লাড সেন্টার সহ যে কোন ধরনের বিপর্যয় মোকাবিলার ব্যবস্থা ।
প্রশাসনের এই সতর্কতা মূলক প্রচার চলার ফাঁকেই হঠাৎতই জল বেড়ে যায় অজয় নদে ।তখনই স্থানীয়দের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে খবর পৌছায় অন্যান্য দিনের মত এদিন দুপুরে মঙ্গলকোটের কল্যাণপুরের কাছে অজয় নদের চরে গবাদি পশু চারাতে যাওয়া আউশগ্রামের ফতেপুরের তিন যুবক ১২ টি গবাদি পশু নিয়ে বিপদে পড়ে গিয়েছে। অজয়ের চরের ভিতরে থাকা একটি গাছে দুপুর দেড়টা থেকে তাঁরা আটকে রয়েছে । এই খবর পেয়ে নড়ে চড়ে বসে প্রশাসন । প্রায় পাঁচ ঘন্টা পর বিপর্যয় মোকাবিলা দল তাঁদের উদ্ধার করে । সেচ দফতর সূত্রে জানা যায়, ঝাড়খণ্ডের শিকাটিয়া ও হিংলো ব্যারেজ থেকে প্রায় দেড় লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ার জন্যে এ দিন দুপুরের পর থেকে আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম ও কাটোয়ায় জল বাড়তে শুরু করেছে। অন্যদিকে দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে দামোদরে দু’লক্ষের বেশী কিউসেক জল ছাড়ার কারণে গলসি থেকে জামালপুর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় দামোদরে জল অনেকাংশেই বেড়ে গিয়েছে । এদিন রাতে দ্বারকেশ্বরের জল বড়ে যাওয়ায় রায়না ২ বলকের উচালন পঞ্চায়েতের একলক্ষী এলাকা জলপ্লাবিত হয়ে পড়ে । উচালন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আনিসুর রহমান খাঁন জানিয়েছেন , দ্বারকেশ্বরে জল বাড়ায় একলক্ষী সহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে ।ওই গ্রামগুলির প্রায় ৫০ -৬০ ঘর বাসিন্দাকে স্থানীয় বিদ্যালয় গুলিতে এনে রাখা হয়েছে । বাসিন্দাদের গবাদি পশু গুলিকেও উদ্ধার করে নিয়ে সেখানে রাখা হয়েছে । যে কোন পরিস্থিতির মোকাবিলায় সব রকম ব্যবস্থা তৈরি রাখা হয়েছে বলে উপ প্রধান জানিয়েছেন ।
জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা জানিয়েছেন , “জল ছাড়ার খবর আসার পরেই যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ব্লক, মহকুমা, পুরসভা ও জেলাতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। অজয়ের ধারে আউশগ্রাম, কাটোয়া, মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামের দু’টি ব্লক এবং দামোদরের ধারে থাকা জামালপুর, গলসি খণ্ডঘোষ ও রায়নার দু’টি ব্লকের পরিস্থির বিষয়ে প্রশাসন ‘নজর’ রখে চলেছে। নদি ধারে থাকা গ্রাম গুলির বাসিন্দাদের সরানো শুরু হয়েছে।’
সেচ দপ্তরের আকারিকরা এদিন জেলার বিভিন্ন এলাকার নদি বাঁধের অবস্থা খতিয়ে দেখেন । অজয় নদের বিভিন্ন এলাকায় বালির ঘাট রয়েছে। বালি বহনের জন্যে বেশ কয়েকটি জায়গাতে বাঁধ কাটা রয়েছে। সেই সব জায়গা দিয়ে জল ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় বাসিন্দাদের মধ্য আতঙ্ক তৈরি হয়েছে । সেচ দপ্তরের কর্তারা কয়েকটি জায়গায় বাঁধ থেকে মাটিও ধসা বন্ধে জরুরী ভিত্তিতে কাজ শুরু করে দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
জালালপুর ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার জানিয়েছেন, দামোদরের নিম্ন অববাহিকাতে জল বাড়ার সম্ভাবনা থাকায় নদি তীরবর্তী প্রতিটি গ্রামে মানুষজনকে সচেতন করা হয়েছে। সিভিক ভলেন্টিয়ার, ভিলেজ পুলিশকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে ।।