এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাঁকুড়া,১৪ ডিসেম্বর : সাম্প্রদায়িক হিংসার শিকার অসংখ্য পরিবার প্রাণ বাঁচাতে ভিটেমাটি ছেড়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে এসেছিলেন । আশ্রয় নিয়েছেল পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতের বিভিন্ন রাজ্যগুলিতে । তাঁদের মধ্যে কিছু পরিবার আশ্রয় নিয়েছিলেন বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়র ব্লকের চরগোবিন্দপুর গ্রামে । সঙ্গে করে এনেছিলেন আরাধ্য দেবী মা রক্ষা কালীকে । উদ্বাস্তু, ছিন্নমূল মানুষদের মা রক্ষা করেন ও ভবিষ্যতেও করবেন এই বিশ্বাসে বিগত প্রায় ৬৮ বছর ধরে আরাধ্য দেবীর পূজো করে আসছেন চরগোবিন্দপুর গ্রামে আশ্রয় নেওয়া তৎকালীন পূর্ববঙ্গের মানুষ । প্রতি বছর বাংলা অগ্রহায়ন মাসের শেষ মঙ্গলবার ধুমধাম করে পূজো হয় দেবী রক্ষা কালীর । শীতের শুরুতে এই কালীপূজো ঘিরে উৎসব মুখর হয়ে ওঠে চরগোবিন্দপুর গ্রাম ।
গ্রামিবাসীরা জানান,১৯৫৩ সালে তখন পূর্ববঙ্গ থেকে দলে দলে মানুষ ভিটে মাটি ছেড়ে দিয়ে এসে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এসে আশ্রয় নিচ্ছে । প্রচুর উদ্বাস্তু ভীড় জমাচ্ছেন এপার বাংলায় । সেই সময় পূর্ব বাংলার কয়েকটি পরিবার কোনওভাবে চলে আসেন বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়ের ব্লকে । তাঁরা বনজঙ্গলে ঘেরা দামোদরের চড়ে এসে ওঠেন । জঙ্গল কেটে কুঁড়ে ঘর তৈরি বসবাস শুরু করেন । যদিও তখনও ওই জনবসতি এলাকার কোনও নামকরণ হয়নি । পরে পূর্ববঙ্গ থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে আসা পরিবারগুলিকে নিয়ে গড়ে ওঠা জনবসতি চরগোবিন্দপুর গ্রাম হিসাবে পরিচিত হয় ।
চরগোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা সুভাষ সরকার বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষরা সঙ্গে করে এনেছিলেন তাঁদের আরাধ্য দেবী রক্ষা কালীকে । আমাদের বাবা ঠাকুরদারা বিশ্বাস করতেন রক্ষা কালী মা আমাদের রক্ষা করেছেন ও ভবিষ্যতেও করবেন । আর সত্যি সত্যি প্রতি মুহুর্তে মা আমাদের রক্ষা করেন । তাই পূর্ব পুরুষদের শুরু করা এই পূজো আজও নিষ্ঠার সঙ্গে আমরা চালিয়ে আসছি । আগামী দিনেও চালিয়ে যাবো ।’ তিনি জানান,কোনও তিথি নক্ষত্র দেখে দেবীর পূজো হয় না । ফি বছর অগ্রহায়ন মাসের শেষ মঙ্গলবার দেবীর বাৎসরিক পূজো হয় ।
জানা গেছে,চরগোবিন্দপুর গ্রামের রক্ষা কালী প্রতীমার পাশাপাশি পূজোর মধ্যেও রয়েছে বিশেষত্ব । দেবীর দুই পাশে রয়েছে মহাদেবের দুই বাহন নন্দী ও ভৃঙ্গী । দেবী রক্ষাকালী পাশাপাশি পূজিতা হন শীতলা মা । দেবীর হাতে দেওয়া হয় না খর্গ । নেই কোনও বলিদান প্রথাও । দেবীকে ভোগ হিসাবে ফল,পায়েস ও বিভিন্ন মিষ্ঠান্ন দেওয়া হয় । মঙ্গলবার মূল পূজো । পরের দিন থাকে ভোগের আয়োজন । তার আগে প্রতিটি পরিবারের আত্মীয়স্বজনরা এসে জড়ো হয় । পূজো উপলক্ষে দু’দিন ধরে মেতে ওঠে গোটা গ্রাম ।।