এইদিন ওয়েবডেস্ক,লখনউ,২৯ মার্চ : প্রাক্তন সমাজবাদী পার্টি (এসপি) সাংসদ তথা মাফিয়া আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরাফকে ২০০৬ সালে উমেশ পাল অপহরণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেছে উত্তরপ্রদেশের এমপি-বিধায়ক আদালত । বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) বিধায়ক রাজু পালের হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন উমেশ পাল । চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে উমেশ পালকে তার বাসভবনের বাইরে গুলি করে হত্যা করা হয় । এরপর আশরাফ আহমেদকে বেরেলি জেলে আনা হয়েছে । জেলে আনার পথে প্রিজন ভ্যানে বসে এনকাউন্টারের আশঙ্কা করেছে আশরাফ । আশরাফের দাবি, দুই সপ্তাহের মধ্যে তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন কারা কর্মকর্তা । সে দাবি করে,অফিসার তাকে বলেছিলেন যে দুই সপ্তাহের মধ্যে তাকে কোনো অজুহাতে কারাগার থেকে বের করে আনা হবে এবং পথে এনকাউন্টার করা হবে ৷ আশরাফ আরও বলেছেন যে তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা । ও উত্তরপ্রদেশ সরকার তার পরিবারের সম্মানহানি করার ষড়যন্ত্র করছে ।
আশরাফ আহমেদ বলছেন, একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাকে হুমকি দিয়েছেন। তবে অফিসারের নাম বলতে রাজি হননি তিনি । তিনি বলেন, কারাগারের ভেতরে নয়, বাইরে বিপদে আছে, কারণ যে গাড়িতে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেটি পাংচারের পরও উল্টে যেতে পারে । তিনি আরও বলেন, তিনি রোজা রেখেছিলেন, কিন্তু যখন তাকে অন্য কারাগারে নিয়ে আসা হয়, তখন পথে তাকে কিছু খেতে দেওয়া হয় । আতিক বলেছেন যে তাকে হত্যা করা হলে অফিসারের নাম সিল করা খামে লিখে ভারতের প্রধান বিচারপতি এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠাবে । তিনি বলেন, উত্তরপ্রদেশ সরকারের উচিত বিষয়টি তদন্ত করা ।
উমেশ পাল অপহরণ মামলায় সাংসদ-বিধায়ক আদালতে হাজির করার জন্য গুজরাটের সবরমতি জেল থেকে প্রয়াগরাজের নাইনি কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়েছিল মাফিয়া আতিক আহমেদকে । জানা গেছে, ইউপি পুলিশ উমেশ পাল হত্যা মামলায় আতিক আহমেদের আত্মীয়সহ ৪০ জনকে আটক করেছে। উল্লেখ্য, আতিক আহমেদের বিরুদ্ধে হত্যা, ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসাসহ শতাধিক ফৌজদারি মামলা রয়েছে । পাশাপাশি একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামনে এসেছে যেখানে সমাজবাদী পার্টির নেতা আতিক আহমেদের ছেলে গ্যাংস্টার আসাদ আহমেদকে তার হাতে পিস্তল নিয়ে রাস্তায় উমেশ পালের পিছনে তাড়া করতে দেখা যাচ্ছে । আসাদ আহমেদই যে উমেশ পালের মাথায় গুলি করার চেষ্টা করেছিল ওই ভিডিওটি তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ । ফুটেজে একজন মহিলাকে উমেশ পালের দিকে দৌড়াতে দেখা যায়, কিন্তু গুলির শব্দ শুনে সেখান থেকে পালিয়ে যান তিনি । পুলিশ জানতে পেরেছে, পিস্তলটি আতিক আহমেদের ছেলে আসাদ আহমেদ। দেওরিয়া জেল থেকে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী মোহিত জয়সওয়ালকে অপহরণ ও অপহরণের দায়ে আতিফ বর্তমানে সবরমতি জেলে বন্দী। আততায়ীকে তার পিস্তলটি কোমরে গুঁজে রাখতে দেখা যায় ।
এদিকে এএনআই-এর সাথে একটি সাক্ষাৎকারে, উমেশ পালের মা শান্তি দেবী বলেছেন,আগামী দিনে মামলা করার মতো আমাদের সামর্থ্য নেই। তাকে (আতিক আহমেদ) ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলে সে জেল থেকেই কাউকে খুন করতে পারে । সে আমার ছেলেকে জেল থেকেই মেরেছে। সে সেখানে থাকলে আমাদের বাঁচতে দেবেন না । আশা করি আদালত তাকে (আতিক আহমেদ) ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেবেন। সে বেঁচে থাকলে হয়তো আমরা বেঁচে থাকতে পারব না। তাই সে চলে গেলেই সন্ত্রাস চলে যাবে ।’
উল্লেখ্য,সম্প্রতি এলাহাবাদ হাইকোর্ট ২০২১ সালের একটি চাঁদাবাজি মামলায় আতিক আহমেদের আর এক ছেলে আলী আহমেদের জামিনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে । আদালত বলেছে,এই ধরনের অপরাধীরা কেবলমাত্র সাক্ষীদের জন্যই নয়,বরঞ্চ সমাজের জন্যও একটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ।।