এইদিন ওয়েবডেস্ক,রাজশাহী,২৯ এপ্রিল : কন্যাসন্তান হওয়ায় শিশুর মুখে বিষ ঢেলে মারতে চেয়েছিলে বাবা । আজ সেই মেয়েই পুলিশ হয়ে নিল মধুর প্রতিশোধ । বছর তেইশের এক তরুনীর জীবন সংগ্রামের এমনই এক কাহিনী সামনে এল প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজশাহীর বাঘা এলাকা থেকে । তবে পুলিশের চাকরি পাওয়ার পরে বাবা রিফাজ উদ্দিনের মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছা ছিল লিজা খাতুন নামে ওই তরুনীর । কিন্তু তাঁর সে ইচ্ছাপূরণ হয়নি । কারন লিজার ও তাঁর মা বুলবুলি বেগমকে ছেড়ে বহু বছর আগে বেপাত্তা হয়ে গেছে রিফাজ । তবে লিজার এই সাফল্যে গর্বের শেষ নেই মা,মামার বাড়ি আর এলাকার বাসিন্দাদের ।
বুলবুলি বেগমের যখন ১৭ বছর বয়স তখন চণ্ডিপুর গ্রামের দিনমজুর রিফাজ উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল । বিয়ের দুই বছরের মাথায় পৃথিবীতে আসে লিজা । আর তখন থেকেই শুরু হয় অশান্তি । কন্যাসন্তানের জন্ম কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না রিফাজ উদ্দিন । মেয়ের যখন ৯ মাস বয়স তখন তার মুখে বিষ ঢেলে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল সে । কিন্তু ছোট্টো লিজার মায়ের নজরে পড়ে গিয়েছিল । আর এক মুহুর্ত দেরি না করে তিনি মেয়েকে নিয়ে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে যান । শেষ পর্যন্ত মায়ের তৎপরতায় পুনঃজীবন পায় লিজা । মেয়েকে সুস্থ করার পর আর স্বামীর উপর ভরসা রাখতে পারেননি বুলবুলি বেগম । তাই শ্বশুরবাড়ি মুখো না হয়ে তিনি প্রথমে চলে যান এক বোনের বাড়িতে । সেখান থেকে সোজা বাপের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন । শুরু হয় মা-মেয়ের কঠিন সংগ্রামের জীবন।
লিজার কথায়, ‘আমাদের জীবনটা অত সহজ ছিল না । হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে অল্পস্বল্প উপার্জন করে সংসার চালানোর পাশাপাশি আমার পড়াশোনার খরচ জোটাতেন আমার মা । আমিও মাঝে মধ্যে পরিচারিকার কাজ করেছি । তার মাঝেই পড়াশোনা চালিয়ে গেছি ।’
জানা গেছে,স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষে বাঘা শাহাদৌলা সরকারি কলেজে অনার্সের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছেন লিজা । গত মাসে পুলিশে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেছিলেন । উচ্চতা, শরীর চর্চা, লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভাসহ সাতটি ধাপ পার করে তবেই নির্বাচিত হন লিজা । রাজশাহী পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) বলেন,’লিজা খুব মেধাবী । মোট ১০ হাজার প্রার্থীর মধ্যে সে সাফল্য পেয়েছে । নকআউট সিস্টেমে একের পর এক পরীক্ষার সাতটি ধাপ পার করে পুলিশের চাকরি পেয়েছে । রাজশাহী জেলায় ৭২ জন প্রার্থীর মধ্যে অন্যতম লিজা । তার এই সাফল্যে অসংখ্য শুভকামনা জানাই ।’
লিজা বলেন,’জ্ঞান হওয়ার পর বাবাকে এখনও দেখা হয়নি । এখন বাবার কথা খুব মনে পড়ছে । বড় হওয়ার পর শুনেছি বাবার নিষ্ঠুরতার কথা । খুব ইচ্ছা আছে বাবার মুখোমুখি হওয়ার । দেখা হলে জানতে চাইবো কেন বিষ দিয়ে মারতে চেয়েছিলে আমাকে ? আমার কি অপরাধ ছিল ?’
তবে সাফল্য পেয়ে মামা আর মাসিদের অসংখ্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন লিজা । লিজা জানায়,মামা-মাসিদের পরিবারও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নয় । তাঁদের সদিচ্ছা আর সক্রিয় সহযোগিতা না পেলে হয়তো তিনি এই জায়গায় পৌঁছতে পারতেন না ।।