প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৫ নভেম্বর : দূষণের ধোঁযাশায় ঢাকা পড়েছে দেশের রাজধানী শহর দিল্লী।যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। মাত্রাতিরিক্ত দূষণের ধোঁয়াশায় দেশের রাজধানী শহর ঢাকা পড়ার অন্যতম কারণ হিসাবে উঠে এসেছে চাষের জমিতে ’নাড়া’ পোড়ানোর ঘটনা।তার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের শীর্ষ আদালত ’নাড়া’ পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
কিন্তু এত কিছুর পরেও হুঁশ ফেরেনি রাজ্যের শস্যগোলা বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলার চাষিদের ।তাঁরা রাজ্যের কৃষি ও পরিবেশ দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই এখনও বেপরোয়া মনোভাব দেখিয়ে জমিতে নাড়া পুড়িয়েই চলেছে । তার ফলে দূষণ যেমন মাত্রা ছাড়াচ্ছে তেমনই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জমিতে থাকা উদ্ভিদের খাদ্য উপাদান ।এই ঘটনায় রীতিমত উদ্বিগ্ন রাজ্যের কৃষি ও পরিবেশবিদরা ।
শীত পড়তে না পড়তেই এবছরও দূষণের ধোঁয়াসায় ঢাকা পড়ে দেশের রাজধানী শহর দিল্লী । একই ভাবে কলকাতাতেও বেড়েচলেছে দূষণের মাত্রা । দূষণজনিত এমন পরিস্থিতি থেকে নিস্কৃতি পাবার জন্য কৃষি দপ্তর ও পরিবেশ বিদরা জমিতে নাড়া পোড়ানো থেকে চাষিদের বিরত হবার কথা বারে বারে বলে চলেছেন । নাড়া পোড়ানো যে বেআইনি তা নিয়ে জনগনকে ওয়াকিবহাল করতে সরকারী ভাবে প্রচারের কোন খামতি রাখা হচ্ছে না । স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরাও পথে নেমে প্রচার চালাচ্ছে । কিন্তু এতসব কিছুর পরেও জমিতে নাড়া পোড়ানো বন্ধে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না শস্যগোলার চাষিরা ।
রাজ্যের শস্যগোলা বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলা । এই জেলার চাষিরাই যে শুধু জমিতে ’নাড়া’ পোড়াচ্ছেন এমনটা নয় । অন্য জেলার চাষিরাও নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জমিতেই ’নাড়া’ পোড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ । “আবহাওয়া ও পরিবেশ দপ্তরের কর্তারা মনে করছেন এমনটা চলতে থাকলে দিল্লীর মতো এই বাংলার গ্রামীন এলাকাও দূষণের ধোঁয়াশায় ঢাকা পড়াটা শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র ।’
বর্তমান সময়ে দূষণের ধোঁয়াশায় দেশের রাজধানী শহর দিল্লী ঢাকা পড়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে সেখানকার জনজীবন । ধোঁয়াশার কারণ অনুসন্ধানে নেমে পড়ে আবহাওয়া ও পরিবেশ দপ্তর ।অনুসন্ধানে নেমে সবদিক খতিয়ে দেখে পরিবেশ বিদরা নিশ্চিত হন দূষণের কারণেই ধোঁয়াশায় ঢাকা পড়েছে দিল্লী শহর । তার মুখ্য কারন হিসাবে সামনে আসে চাষের জমিতে ’নাড়া’ পোড়ানোর ঘটনা । খোঁজ খবর নিয়ে পরিবেশ বিদরা জানতে পারেন শীত শুরুর প্রক্কালে দিল্লীর গুরগাঁও সহ পার্শবর্তি এলাকার চাষিরা কম্বাইন হারবেস্টার মেশিনের সাহায্যে জমির ফসল কাটা ও ঝাড়ার কাজ সেরেছেন । ঝাড়াই কাজ শেষে হবার পর ফসলের অপ্রয়োজনীয় অংশ অর্থাৎ ‘নাড়া’ জমিতে জড়ো করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন সেখানকার চাষিরা । ওই ’নাড়া’ পোড়ানোর ধোঁয়া শীতের জলীয় বাস্পের সঙ্গে মিশে ধোঁয়াশায় পরিণত হচ্ছে । আর সেই ধোঁয়াশায় সমগ্র দিল্লী শহর ঢাকা পড়ায় সেখানকার বাসিন্দারা শ্বাস কষ্টে যেমন ভুগছে ,তেমনই চোখও জ্বালা করছে বলে বলে দাবি করা হয়।রাজধানী শহরে দূষণের ধোঁয়াশা মাত্রা ছাড়ানোয় বিষয়টি নিয়ে শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয় দেশের শীর্ষ আদালত ।
কৃষি দপ্তরের কর্তারা জানাচ্ছেন , দিল্লীর এমন ঘটনা সামনে আসার পরেও হুঁশ ফরেনি এই রাজ্যের বিশেষত শস্যগোলা পূর্ব বর্ধমান জেলার চাষিদের । বিশ্ব উষ্ণায়ন ও পরিবেশ দূষণ রোধে হাজারো সচেতনতা প্রচার চালানো হলেও সচেতন হতে চাইছেন না চাষিরা । শীত পড়তেই জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে ’আমন ’ধান কাটা ও ঝাড়ার কাজ । হারভেস্টার মেশিন দিয়ে আমন ধান গাছ কেটে ধান ঝেড়ে নেবার পর এই জেলার চাষিরাও অবশিষ্ঠাংশ অর্থাৎ ‘নাড়া’ এখন জমিতেই পোড়াচ্ছেন ।
পরিবেশ বিদরা বলছেন, জমিতে ‘নাড়া’ পোড়ানোর রেওয়াজ চাষিরা বন্ধ না করলে আগামীদিনে দিল্লীর পুনরাবৃত্তি শস্যগোলা সহ গোটা রাজ্যেও ঘটবে ।তাই জমিতে ’নাড়া’ পোড়ানো বন্ধে সচেতনতা প্রচার চালানো শুরু করেছে জেলার কৃষি দপ্তর । কিন্তু হাজারো সচেতনতা প্রচার সত্ত্বেও সচেতন হতে চাইছেন না চাষিরা ।জেলার সর্বত্রই এখনও চলছে অবাধে ‘নাড়া’ পোড়ানো ।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় এদিন বলেন,বাংলার প্রশাসন জমিতে ’নাড়া’ পোড়ানো বেআইনি ঘোষনা করেছে ।তার পরেও যারা জমিতে ’নাড়া’ পোড়াচ্ছেন তাঁদের বিরুদ্ধে কৃষি দপ্তর আইনমাফিক কড়া ব্যবস্থা নিতেই পারে। এই ব্যাপারে প্রশাসন উদাসীনতা দেখালে আগামীদিনে দিল্লীর পরিণতি এই বাংলাতেও যে ঘটবে তা নিশ্চিৎ ভাবেই বলাযায় বলে জয়দীপবাবু দাবি করেছেন ।
রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার জানান ,“জমিতে ’নাড়া’ পোড়ালে প্রচুর পরিমানে উদ্ভিদ খাদ্য নষ্ট হয়ে যায় । আমন চাষ মরশুমে খড়ের অবশিষ্ট অংশ জমিতে পুড়িয়ে না দিয়ে জমিতে গর্ত করে সেখানে তা ফেলেদিয়ে মাটি চাপা দিলে মাটির জৈব কার্বন বৃদ্ধি পাবে । কৃষি জমির উপরিভাগের ৬ ইঞ্চি মাটি সবথেকে মূল্যবান । জমিতে নাড়া পোড়ালে মাটির গঠন ও গুণমান ক্ষতিগ্রস্ত হয় । জমিতে নাড়া পোড়ালে উপকারি জীবাণুও উত্তাপের কারণে ধ্বংস হয়ে যায় ।নষ্ট হয়ে যায় জমির গুনগত মান । এমনকি জমি বন্ধা হয়ে যায় । ধানের নাড়া পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে প্রচুর দূষিত গ্যাস নির্গত হয় । যা মানুষের স্বাস্থের পক্ষেও ক্ষতিকর । প্রদীপ মজুমদার আরও জানান, হারভেস্টার মেশিনে ধান ঝাড়ার পর খড়ের অবশিষ্ট অংশ কমপোস্ট বা ডার্বি কমপোস্ট সার তৈরির কাজে লাগালে চাষীরা যেমন উপকৃত হবেন তেমনই দূষণ থেকেও রাজ্যবাসী রক্ষা পাবেন ।চাষের স্বার্থেই জমিতে ’নাড়া’ পোড়ানো থেকে বিরত হওয়ার জন্য তিনি চাষিদের আহ্বান জানিয়েছেন ।।