প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৫ জুন : বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর নেতা মন্ত্রীরা সেখানে পৌছে গিয়ে প্রতিশ্রতির বন্য বইয়ে দিয়েছিলেন।কিন্তু কেউ কথা রাখেন নি। তাই গ্রামবাসীদের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা অর্থ সাহায্য তুলে তা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া মিটেয়ে স্বামী আরমান খাঁ-র মৃতদেহ বাড়ি ফিরিয়ে আনতে হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন স্ত্রী মমতাজ বিবি। স্বামীর মৃতদেহের সামনে বসে চোখের জল মুছতে মুছতে মমতাজ বিবি রবিবার আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন,স্বজনকে হারালাম, সম্পদও গেল,তবুও নেতা মন্ত্রীরা কেউ কথা রাখলেন না। আমদের পরিবারটা অথৈ জলে পড়ে গেল !
বছর ৩৬ বয়সী আরমান খাঁর বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট থানার মঙ্গলকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দেউলিয়া গ্রামে।পরিবারের সবার অন্ন সংস্থানের জন্য দির্ঘদিন ধরে দক্ষিণ ভারতে নির্মান শ্রমিকের কাজ করতো আরমান । বাড়িতে বৃদ্ধা মা,স্ত্রী ও দুই নাবালক সন্তানকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। ১৫ দিন আগে চেন্নাই থেকে বাড়ি ফিরছিলেন আরমান।পুণরায় কাজে যোগ দেওয়ার জন্য আরমান শুক্রবার করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনে চেপে ওয়না হয়েছিলেন ।ওই দিনই ওড়িশার বালেশ্বরে হওয়া ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় আরমানের মৃত্যু হয় । অভিশপ্ত ট্রেনেই টিকিট ছিল আরমান খাঁর । তাই দুর্ঘটনাস্থলে তাকে খুঁজে পেতে পর দিন প্রতিবেশীদের সাহায্য নিয়ে পরিবারের লোকজন সেখানে পৌছান। সেখানে গিয়ে দু’তিনটে ঘর খুঁজে লাশের গাদার মধ্যে থেকে আরমানের দেহ সনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরা।
মৃতের আত্মীয় রহিম শেখ এদিন বলেন, লাশের গাদায় অনেক খোঁজ চালিয়ে তাঁরা আরমানের মৃতদেহ খুজে পান।কিন্তু মৃতদেহ নিয়ে মঙ্গলকোটের বাড়িতে ফেরার ব্যাপারে তাঁরা সেখানে কোনরকম সহায়তা পান না। সরকারি আ্যম্বুলেন্সে করে নিখরচায় মৃত দেহ মৃতদের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়ে বলে বলা হয়ে থাকলেও সেইসব কোন সহায়তাই তাঁরা পান না। এমত অবস্থায় বিকল্প আর কোন পথ খুঁজে না পেয়ে গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য তোলার দায়িত্ব মৃত আরমানের পরিবারের লোকজনকেই কাঁধে তুলে নিতে হয় । গ্রামবাসীদের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা অর্থ সাহায্য তুলে তা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে আরমানের মৃতদেহ নিয়ে তাঁরা বালেশ্বর থেকে মঙ্গলকোটে ফেরেন।
মমতাত বিবি এদিন বলেন,দুর্ঘটনার খবর পাবার পর থেকে আমি আমার স্বামীর ফোনে বারে বারে ফোন করি । কিন্তু কোন রিং হয়ে গেলেও কোন সাড়া পান না।স্বামীর কি হল তা ভেবে তাঁর দুঃশ্চিন্তা বড়ে।সেই থেকে টিভির খবরের দিকে প্রতিনয়ত নজর রাখছিলেন।শনিবার বেলা গড়াতে জানতে পারেন তাঁর স্বামী প্রাণ হারিয়েছন। এদিন স্বামীর মৃতদেহ বাড়িতে পৌছানোর পর আক্ষেপ প্রকাশ করে মমতাজ বিবি বলেন, ট্রেন,দুর্ঘটনার পর থেকে টিভির খবরে দেখতে পাই ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত ও জখমদের পরিবারের পাশে থাকবেন বলে কত প্রতিশ্রুতিরর বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন নেতা মন্ত্রীরা । কিন্তু সেই সেইসব প্রতিশ্রুতি যে ফাঁকা আওয়াছ হবে তা তিনি কল্পনাও করতে পারেন নি । শেষে
গ্রামবাসীদের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা অর্থ সাহায্য সাহায্য তুলে তা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া মিটিয়ে তাঁর স্বামী আরমান খাঁ এর মৃতদেহ ফিরিয়ে আনাতে হল। না পেলাম রেল দপ্তরের কাছ থেকে কোনো সাহায্য,না পেলাম নেতা মন্ত্রীদের সাহয্য। পরিবারের একমাত্র রোজগেরো স্বজন কে হারিয়ে আমাদের গোটা পরিবারটাই এখন অথৈ জলে পড়ে গেল বলে মমতাজ বেগম আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
এদিকে পুলিশ সূত্রেও যা জানা গিয়েছে সেটাও বড় চাঞ্চল্য কর । ট্রেন দুর্ঘটনার মৃত আরমান খাঁর দেহের ময়নাতদন্ত ছাড়াই বাড়ি নিয়ে আসতে দেওয়া হয়েছে। সেই কারণে এদিন কাটোয়া মহকুমা পুলিশ আধিকারিক ও মঙ্গলকোট ব্লকের বি ডি ও-র তত্ত্বাবধানে কাটোয়া মহুকুমা হাসপাতালে আরমান খাঁ-র মৃতদেহের ময়না তদন্ত হয় ।
একই রকম বঞ্চনার শিকার হয়েছেন বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত সাদ্দাম সেখের পরিবার । এদিন
একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে তাঁরা বলেন , সাদ্দাম শেখের দেহ বালেশ্বর থেকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে আনতে তাঁদের ২০ হাজার টাকা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া মেটাতে হয়েছে। গয়না বন্ধক দিয়ে সেই অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া জোগাড় করতে হয়েছে বলে পরিবারের লোকজন জানান। মৃত সাদ্দাম সেখের আত্মীয়দের অভিযোগ,ওড়িশায় আমরা কোন সাহায্য পায়নি। রেল দফতর থেকে বলা হয়েছিল ,নিখরচায় মৃতদেহ বাড়িতে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে । কিন্তু আমরা সাদ্দামের মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য রেলের কোন সাহায্য পাই নি।শেষে এক অ্যাম্বুলেন্স চালকের হাতে পায়ে ধরে কুড়ি হাজার টাকার চুক্তিতে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে সাদ্দামের মৃত দেহ
বালেশ্বর থেকে কাটোয়ায় নিয়ে এসেছি। এদিন বাড়ির মেয়েদের হাতের আংটি, গলার হার খুলে নিয়ে তা বন্ধক দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া মেটাতে হওয়ায় সাদ্দাম সেখের আত্মীয় নজরুল সেখও তীব্র ক্ষোভ উগড়ে দেন ।।