এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),০৩ ফেব্রুয়ারী : বসন্ত মানেই শিমুল পলাশের রঙ ছড়ানো । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পলাশের রুপে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন, ‘রাঙ্গা হাসি রাশি রাশি অশোক পলাশে’। বসন্তের বার্তা বাহক পলাশ ছাড়া বসন্তের কথা ভাবাই যায় না । কিন্তু নগরায়ন আর মানুষের সীমাহীন ‘চাহিদা’র কারনে প্রকৃতির এই অপরূপ সৃষ্টিটি আজ বিলুপ্তপ্রায় ৷ পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার বিডিও অফিসের ঠিক সামনেই বর্ধমান-কাটোয়া সড়ক পথের রয়েছে দু’একটি পলাশ গাছ । বসন্তের আগমনের বার্তা বহন করছে গাছটি শাখায় শাখায় ফুটে থাকা লাল ফুলগুলি । কিন্তু মানুষের অবহেলার কারনে গাছটি কতক্ষণ নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে তা নিয়েই সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে । কারন গাছগুলির ঠিক নিচেই লাগানো হয়েছে একটা ডাউস বিটুমিন বয়লার। আর তা থেকে বের হওয়া উত্তাপ ও দৈত্যাকৃতি কালো ধোঁয়ার কুন্ডলী গ্রাস করছে লাল ফুলে সেজে থাকা পলাশগাছ গুলিকে। আর অফিস যাওয়া আসার পথে তা দেখেও নিশ্চুপ বিডিও অফিসের বাবুরা ৷
আসলে,ভাতার বাজারে বর্ধমান-কাটোয়া সড়কের উপর খানাখন্দ মেরামতের কাজ চলছে কয়েকদিন ধরে । আর পাথরে বিটুমিন মেশানোর জন্য বয়লার ও মিস্কিং মেশিন কয়েকদিন ধরেই লাগিয়ে রাখা হয়েছে ভাতার বিডিও অফিসের সামনে পলাশ গাছগুলির নিচে । সকাল থেকে সেই মেশিন দিয়ে গদগদ করে বের হচ্ছে নিকষ কালো ধোঁয়ার কুন্ডলী । তাতে আশপাশের ও পথচলতি মানুষের প্রাণ যেমন ওষ্ঠাগত হচ্ছে, পাশাপাশি নাগাড়ে ধোঁয়া আর প্রবল তাপ সহ্য করতে করতে পলাশ গাছগুলি আদপেই বেঁচে থাকবে কিনা তা নিয়ে এখন সন্দেহ দেখা দিয়েছে । এনিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ।
প্রসঙ্গত,কয়েক দশক আগে ভাতার ব্লকের ব্যক্তিগত জায়গায় অনেক পলাশ গাছ দেখা যেত । কিন্তু গাছগুলি বসন্তে পরিবেশের সৌন্দর্য বাড়ালেও অর্থকারী না হওয়ায় একের পর এক গাছ কেটে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে । সেই সময় বর্ধমান-কাটোয়া সড়কের দু’পাশেও পলাশ গাছ দেখা যেত । কিন্তু রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য সেগুলিও কাটা পড়ে যায় । তারপর থেকে এলাকা থেকে কার্যত মুছে যায় পলাশ গাছের অস্তিত্ব । প্রায় ১৬-১৭ বছর আগে ভাতারের তৎকালীন বিডিও অরিন্দম রায় উদ্যোগী হয়ে নিজের অফিসের সামনে কয়েকটা পলাশ গাছ লাগিয়েছিলেন। তারপর থেকে গাছগুলি সেখানেই রয়ে গেছে ।
কিন্তু ঠিকাদার সংস্থার বিটুমিন বয়লারের উত্তাপ ও ধোঁয়া সহ্য করে গাছগুলির অস্তিত্ব কতদিন টিকে থাকবে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার পরিবেশপ্রেমীরা ৷ ইতিমধ্যে ভাতারে পরিবেশপ্রেমী একটি সংস্থা ‘ভাতার গাছগ্রপ’-এর পক্ষ থেকে বিডিও এর কাছে মেশিনগুলি গাছের তলা থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানানো হয়। সংস্থার কর্মকর্তা শেখ আসিক জানান গাছের তলায় পোষ্টার সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে সচেতন করার উদ্দেশ্যে । এই বিষয়ে ভাতারের বিডিও দেবজিৎ দত্তের বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ সর্বশেষ খবর যে বিডিওর নির্দেশে ওই মেশিনপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।।