প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৮ অক্টোবর : জনতার টাকা লুটের জন্য তৃণমূল কংগ্রেস দলটা আর বেশিদিন বাংলায় ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।রাজ্য বিধানসভায় তৃণমূল সরকারের পুরো মন্ত্রিসভাটাই আগামী দিনে জেলের ভিতরে থাকবে।জেলের ভিতর থেকেই তৃণমূলের মন্ত্রিরা সরকার চালাবে। শুক্রবার বর্ধমানে দলীয় সভায় যোগ দিয়ে এমনটাই দাবি করলেন সাংসদ তথা বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। পাশাপাশি তিনি এও বলেন,’তৃণমূল চোর ডাকাতের দল,সেই জন্য তৃণমূল চোর ডাকাতকেই ভালবাসে।আর বিজেপি সাধারণ মানুষকে ন্যায় বিচার পাবার ব্যবস্থা করছে। যদিও তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের এইসব মন্তব্যকে পাগলের প্রলাপ বলে কটাক্ষ করেছেন ।
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে রাঢ়বঙ্গের বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে এদিন বর্ধমানে জেলা বিজেপি পার্টি অফিসে আসেন লকেট চট্টোপাধ্যায় । সভা শুরুর আগে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি আগাগোড়াই তৃণমূল কংগ্রেস দল ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়ান। লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন,’তৃণমূলের নেতারা এত দুর্নীতি করেছে যার কারণে সাধারণ মানুষ মনে করছেন তারা
তৃণমূলকে ভোট দিয়ে ভুল কাজ করেছে।এখন সাধারণ মানুষ মনেকরছেন যত তাড়াতাড়ি হোক তৃণমূল সরকার পড়ুক।তৃণমূলের একের পর নেতা-মন্ত্রীর জেলে যাচ্ছে।ডিসেম্বরের মধ্যে তৃণমূলের একাধিক নেতা মন্ত্রী জেলের মধ্যে থাকবে। তারজন্য আপনা আপনি তৃণমূল সরকারটা পড়ে যাবে ।’
রাজ্য সরকারের বেসরকারি নার্সিংহোমকে স্বাস্থ্য সাথীর বকেয়া বিল মিটিয়ে দেওয়া নিয়েও কটাক্ষ করেন লকেট চট্টোপাধ্যায় । এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন ,’ভাইপো এখানে চিকিৎসা না করিয়ে নিজে চলে গেছেন দুবাই ও আমেরিকায়। নিজেদের নেতা-মন্ত্রীরা বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করায়।অথচ বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে সেরকম ভাবে চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছিল না।পরিষেবা নেই বলে জানিয়ে তারা রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছিল।পঞ্চায়েত ভোট এসেগেছে,
তাই মুখ রক্ষা করার জন্য সব বেসরকারী হাসপাতাল কে স্বাস্থ্য সাথীর টাকা শোধ করে দিয়েছে’। অন্যদিকে বড়োঞা থানার ওসি সনজিৎ সেনকে শোকজ করা প্রসঙ্গে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন,বড়োঞা থানার ওসি সকলের সামনে সত্যি কথা বলে ফেলেছেন। পুরো তৃণমূল দলটাই চোর। চোরেদের নামে ভালো কথা বলেলনি বলেই আজকে ওনাকে বরখাস্ত করা হলো।
তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিবিরের পাল্লা ভারি থাকা ও সেখানেই মুকল রায় ও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দেখতে পাওয়া যাওয়া নিয়েও বিদ্রুপের সুর শোনা যায় লকেট চট্টোপাধ্যায়ের গলায় ।এই প্রসঙ্গে তিনি দাবি করেন,তৃণমূল কংগ্রেস দলটা আড়াআড়ি ভাবে ভাগ হয়ে গিয়েছে। পিসির দল, ভাইপোর দল হয়ে গেছে। পিসির দলের কয়েকজন জেলে গেল, ভাইপোর দলে কয়েকজন নতুন এলেন । এটাই চলছে। আমরা কিছুদিন ধরে দেখতে পাচ্ছি আমাদের পিসির আশে পাশের লোকজন বড় বড় স্ক্যাম করেছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অনুব্রত মণ্ডল, মানিক ভট্টাচার্য সহ আরো কত জন না আছেন।আসানসোলের এক মন্ত্রীর বাড়িতে ED ও CBI হানা দিয়েছে।লকেট চট্টোপাধ্যায় আরো দাবি করেন,তৃণমূল দলটা পুরোপুরি ভাবেই ভেঙে যাচ্ছে।আগামী দিনে কোন ভাগটা থাকবে তা কেই বা জানে ! ওদের সবাই নিজের নিজের একটা অস্তিত্বের একটা জায়গা খুজছেন । তাই কেউ একবার পিসির কাছে যাচ্ছে, আবার ভাইপোর কাছে যাচ্ছেন। এত সিন্ডিকেট তোলাবাজি এত এত জনতার টাকা লুট করেছে, তাই এরা বেশিদিন আর বাংলায় থাকতে পারবে না।যারা চোর, লুটেরা, আছে তাদের নিয়ে ইডি, সিবিআই খুব তাড়াতাড়ি তদন্ত করে গারদে ঢোকাবে। আগামী দিনে দেখতে পাবেন বিধানসভায় তৃণমূলের যে মন্ত্রিসভা রয়েছে,সেই মন্ত্রিসভার পুরো ভাগটাই জেলের ভেতরে থাকবে। জেলের ভেতর থেকেই মন্ত্রীরা সরকার চালাবে ।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাশে আছেন বলে মুকুল রায় যে মন্তব্য করেছেন তা নিয়েও বিদ্রুপ করেন লকেট চট্টোপাধ্যায় । তিনি বলেন,এখন পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে চোর, ডাকাত, যারা লুট করেছেন, তাদের পাশেই তৃণমূলের নেতারা থাকে। আর যাদের টাকা লুট হয়েছে, জনতার টাকা লুট হয়েছে। তাদের পাশে ভারতীয় জনতা পার্টি থাকে। শুধু ভোট নেওয়ার সময় মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তৃণমূল নেতারা জনতার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট নেয়। তৃণমূল চোর ডাকাতের দল। চোর ডাকাতকেই ভালোবাসে। সাধারণ মানুষ ভারতীয় জনতা পার্টির পাশে আছে। ভারতীয় জনতা পার্টি যেসব মানুষের টাকা লুট হয়েছে তাদের সাথে থেকে ন্যায়ের আওয়াজ তুলবে। আগামী দিন কি করে তাদের বিচার দেওয়া যায় তার চেষ্টাই বিজেপি করছে।
বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতার পর জোড়াসাঁকোর বিধায়কের স্ত্রীর লটারিতে এক কোটি টাকা পড়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই বিষয়ে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের দাবি,এটা একটা নতুন কৌশল ’ডিয়ার লটারি’ একটা বিখ্যাত নাম।কৌশল করে তৃণমূল কালো টাকাকে সাদা করছে, আর গরিব মানুষের টাকা লুট করা হচ্ছে। লুট করার মাধ্যমে তৈরি গরিবের টাকা ’ডিয়ার লটারির’’ মাধ্যমে তৃণমূল নেতা, মন্ত্রীদের কাছে পৌঁছাচ্ছে। এই লটারি অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। কারণ এর সাথে তৃণমূলের নেতা থেকে মন্ত্রী সবাই জড়িত আছে।এর তদন্ত হওয়া উচিত বলেও লকেট চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন ।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমেরিকায় থাকাকালীন তার সঙ্গে বিনয় মিশ্র দেখা করেছেন বলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী য দাবি করেছেন তাকেও ঘুর পথে সমমর্থন করেন বিজেপি নেত্রী লকেট । তিনি বলেন,’শুনতে পাই কখনো দুবাইতে দেখা করেছে ,আবার কখনো আমেরিকায় দেখা করছেন ।পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে কয়লা, গরু পাচারে পুরোপুরি ভাবে কালী ঘাট জড়িত আছে। বাংলায় দেখা করতে অসুবিধে, বাংলার সবার নজরে পড়ে যাবে তার জন্যই বাইরে গিয়ে নিজেদের সেটেলমেন্ট চলছে। টাকার আনাগোনা চলছে।’
কেন্দ্র প্রত্যেই রাজ্য এনআইএ এর শাখা খোলার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে পূর্ণ সমর্থন জানান লকেট চট্টোপাধ্যার। এই প্রসঙ্গ তিনি বলেন,’খুব ভালো সিদ্ধান্ত । প্রত্যেকটা ডিস্ট্রিক্টে বা রাজ্যে এন আই এর শাখা খোলা হবে। সবচেয়ে বড় বিষয়,দেলের যে সীমানা গুলো রয়েছে তার দায়িত্ব শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের একার নয়। সেই সীমানা গুলোর দায়িত্ব রাজ্য সরকারকেও দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার যদি ঠিকমতন কাজ করে তবে কি সীমানা থেকে গরু পাচার, দু- নম্বরী ও দুর্নীতির কাজ হয়? এবার এইসব বন্ধ হবে। তবে এই সিদ্ধান্ত আমাদের রাজ্য সরকার কতটা মানবে সেটাই একটা বড় প্রশ্ন । কারণ বাংলাদেশ থেকে বা বিভিন্ন জায়গা থেকে যখন গরু পাচার হয় তখন আমাদের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোন হেল্প পায় না। রাজ্য সরকার চোখ বন্ধ করে বসে থাকে। চোখ বন্ধ অবস্থায় যত গরু পাচার হয়ে যায়। আর টাকা তাদের কাছে চলে আসে।’
সায়ন্তন বসু কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বকে চিঠি পাঠিয়ে বলেছেন, রাজ্য বিজেপি বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের দল। ২০১৯ এর মডেল করতে হবে। সায়ন্তন বসুর এই দাবি নিয়ে ,লকেট চট্টোপাধ্যায় কিছু তেমন বলতে চান নি। তিনি শুধু বলেন,’যে যার মত প্রকাশ করতেই পারে। সেটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেখবেন।’।