দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),০৩ ডিসেম্বর : বিপুল অঙ্কের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় বিভিন্ন গ্রাম মিলে ১২ টি জল প্রকল্পের পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বিদ্যুৎ দপ্তর । যার জেরে বিগত প্রায় একমাস ধরে পানীয়জল সরবরাহ বন্ধ । ফলে চরম বিপাকে পড়ে গেছেন ওই সমস্ত গ্রামের বাসিন্দারা । সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৪২ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিল বাকি আছে বলে বিদ্যুৎ দপ্তর সুত্রে খবর । এত বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল বকেয়া নিয়ে একদিকে প্রশ্ন উঠছে, অন্যদিকে তেমনি ওই জল প্রকল্পগুলি আদপেই আর চালু হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে । ফলে কার্যত অথৈ জলে পড়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারের বেশ কয়েকটি গ্রাম মিলে সরকারি জল প্রকল্পের ১২ টি পাম্পের ভবিষ্যৎ ।
বিদ্যুৎ দপ্তর সুত্রে খবর,বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের সাড়ে ৪২ লক্ষ টাকার মধ্যে ভাতারের সাহেবগঞ্জ-১ পঞ্চায়েতের নুরপুর গ্রামের জলপ্রকল্পে বকেয়া বিলের পরিমাণ ১৬ লক্ষ ২৬ হাজার ৭৫৯ টাকা ।ভাতারের বিঘরা গ্রামের প্রকল্পে বকেয়া ৮ লক্ষ ১৩ হাজার ৯২৫ টাকা । নিত্যানন্দপুর পঞ্চায়েতের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের প্রকল্পে বকেয়া ৪ লক্ষ ৮৭ হাজার ৮০৫ টাকা। নাসিগ্রামের একটি প্রকল্পে বকেয়া ৪ লক্ষ ৭৬ হাজার ৫৪২ টাকা। সাহেবগঞ্জ গ্রামের প্রকল্পে বকেয়া ২ লক্ষ ২৮ ১২৭ টাকা। বামুনিয়ায় বকেয়া ২ লক্ষ ১০ হাজার ২০২ টাকা। মাহাতা পঞ্চায়েতের ঝাড়ুল গ্রামের জলপ্রকল্পে বকেয়া বিল ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৬৯৯ টাকা। মাধপুর গ্রামে বকেয়া ১ লক্ষ ৩ হাজার ১১৬ টাকা। জলদগ্রামে প্রকল্পে ৭৫৮৬০ টাকা, জামবনি গ্রামের প্রকল্পে ৩৩২০২ টাকা, বড়পোশলা গ্রামের প্রকল্পে ৩১৮৬৩ টাকা, এবং খেড়ুর গ্রামের সজলধারা প্রকল্পে বকেয়া বিলের পরিমাণ ২৮৪৩২ টাকা । একমাস আগেই ওইসমস্ত জলপ্রকল্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বিদ্যুৎ দফতর ।
বিদ্যুৎ দফতরের স্টেশন ম্যানেজার মিঠুন মজুমদার বলেন,’এলাকার ১২ টি জলপ্রকল্পে পাম্পের বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ৪২ লক্ষ ৫৩ হাজার ৫৩২ টাকা । বকেয়া বিল মেটানোর জন্য ওই সমস্ত জলপ্রকল্পের কমিটিগুলির কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও বিল জমা না পড়ায় সংযোগ কাটা গিয়েছে । আরও কয়েকটি প্রকল্পের সংযোগ কাটা হয়েছিল। যারা এর মধ্যে বিল জমা করে দিয়েছেন সেই পাম্পগুলিতে ইতিমধ্যে ফের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে ।’
জানা গেছে,গতমাসে ভাতারের নিত্যানন্দপুর, নবাবনগর, সালুন, নাসিগ্রাম প্রভৃতি গ্রামের জলপ্রকল্পে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার দরুন সংযোগ বিছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল । তবে ৭ টি প্রকল্পের কমিটি বকেয়া বিল জমা করার পর তাদের পুর্নসংযোগ করে দেয় বিদ্যুৎ দফতর । কিন্তু যে সমস্ত জল প্রকল্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বর্তমানে বিচ্ছিন্ন রয়েছে সেগুলো এত বিল বকেয়া কেন ? এখন ওই প্রকল্পগুলির ভবিষ্যৎই বা কি ?
এই বিষয়ে ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বাসুদেব যশ অবশ্য সিপিএমের ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছেন । তাঁর কথায়, ‘নুরপুর গ্রামে ২০০৯ সালে বাম আমলে সজলধারা প্রকল্প চালু হয়েছিল । কিন্তু তখন ওই প্রকল্প পরিচালনার জন্য কোনও কমিটি গঠন করা হয়নি । গ্রাহকদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিলের টাকাও তোলা হয়নি। ওইভাবেই চলছিল। এখন সংযোগ কাটা পড়েছে।’পাশাপাশি তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন,এত বিপুল পরিমাণ বিল মেটানো কার্যত অসম্ভব । জল প্রকল্পগুলি ফের চালু করতে গেলে নতুন করে কমিটি গঠন করতে হবে ।।