জয়দীপ মৈত্র,দক্ষিন দিনাজপুর,২৭ মে : ‘কুমোর-পাড়ার গোরুর গাড়ি/বোঝাই করা কলসি হাঁড়ি’-কবিগুরুর কবিতায় বর্ণিত গ্রামবাংলার এই খন্ডচিত্র আজ অতীত । আর ‘বংশীবদন’-এর সঙ্গে ‘ভাগ্নে মদন’কে কলসি-হাঁড়ি বোঝাই গড়ুর গাড়িতে চড়ে হাটে যেতে দেখা যায় না । প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে প্রয়োজন হারিয়েছে হাঁড়ি-কলসি । কিন্তু সাম্প্রতিক কালের তীব্র দাবদহের কারনে ঠান্ডা জল দিয়ে তেষ্টা মেটাতে ফের একবার খোঁজ হচ্ছে মাটির তৈরি এই বিশেষ পাত্রগুলির । দক্ষিন দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে মাটির তৈরি জালার এখন প্রচুর চাহিদা । ক্রেতা বিক্রেতারা আদর করে এর নাম রেখেছে ‘মিনি ফ্রিজ’ । স্বাভাবিক তাপমাত্রা থেকে এই পাত্রে রাখা জলের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি পর্যন্ত কম থাকে বলেই এই নাম দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৃৎশিল্পিরা । জেলা ছাড়িয়েও উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ এর মানুষেরও নজর কেড়েছে গঙ্গারামপুরের ‘মিনি ফ্রিজ’ ।
শুক্রবার গঙ্গারামপুরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁথিঘাট পালপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল প্রতিটি কারখানায় থরে থরে সাজানো মাটির কলসি । খয়েরি আর লাল রঙের বর্ডার দেওয়া জালার নিচের দিকে একটি ছিদ্র রাখা হয়েছে ট্যাপ কল লাগানোর জন্য । বাজারে এই জালাই বিকোচ্ছে ‘মিনি ফ্রিজ’ বলে । কারখানার ভিতরে দম ফেলার ফুরসত নেই মৃৎ শিল্পিদের । একের পর এক ‘মিনি ফ্রিজ’ তৈরি করে রোদে শুকতে দিচ্ছেন কারিগরেরা । পুরুষদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন পরিবারের মহিলারাও । মৃৎ শিল্পিরা জানিয়েছে,প্রতি পিস ৭৫ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দাম ধার্য্য করা হয়েছে । বিগত কয়েকদিন ধরে বিক্রিবাটা ভালোই হচ্ছে । ফলে অল্পস্বল্প লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত পরিবারগুলি ।
স্থানীয় মৃৎ শিল্পি মিনারানী পাল,নীলকমল পালেরা বলেন,’দিন দিন মাটির দাম বেড়ে চলেছে । তাও পাওয়া যাচ্ছে না । দূরদূরান্তে নদীর চর, শুকিয়ে যাওয়া পুকুর,জমি থেকে মাটি আনাতে হচ্ছে । ফলে লাভের গুড় পিপড়েতে খাচ্ছে । গরমের মরশুমে অল্পসল্প জালা,কলসি বিক্রি হলেও বছরের বাকি সময় কার্যত হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে হয় । সংসার চালানোই কঠিন হয়ে যায় । সেই কারনে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা আর এই কাজের দিকে ঝুঁকছে না ।’
জানা গেছে,গঙ্গারামপুরের কাঁথিঘাট পালপাড়ায় ২৫০-৩০০ জন মৃৎশিল্পের সাথে যুক্ত । প্রত্যেকটি পরিবারই হতদরিদ্র । নীলকমল পাল বলেন, ‘সরকারিভাবে আমাদের একবার একটি করে মেশিন দেওয়া হয়েছিল । তারপর আর কোনো সরকারি সহায়তা পাইনি আমরা । আরও কিছু মেশিনের দরকার । সেই সঙ্গে সরকারিভাবে যদি কিছু আর্থিক সহায়তা দেওয়া হত তাহলে এই মৃৎশিল্পটা টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আরও সহায়ক হত । অনেক কর্মসংস্থানও হত ।’।