প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৫ জুন : লোকসভা ভোটে পরাজিত হয়েই বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী দিলীপ ঘোষ তোলেন “চক্রান্ত“ ও “কাঠিবাজির“ অভিযোগ।আর এবার বিজেপির অসীম সরকার অভিযোগ করলেন,তাঁর পরাজয়ের জন্যে দায়ী বঙ্গের পুলিশ ও প্রশাসন এবং তৃণমূলের বহুবলিরা‘।তারাই নাকি,“পাঁচ রাউণ্ড গননা বাকি থাকতে বিজেপির কাউন্টিং এজেন্ট দের প্রবেশ আটকে দিয়ে তৃণমূল প্রার্থীর পক্ষে ফল প্রকাশ করে তাঁকে হারিয়ে দিয়েছে”।এভাবে তাঁকে হরানোর জন্যে অনেক পুলিশ অফিসারও নাকি দুঃখ প্রকাশ করে তাঁর কাছে চোখের জল ফেলেছে বলে অসীম সরকার দাবি করেছেন।যদিও বিজেপি প্রার্থীর আনা এইসব অভিযোগকে ’পরাজয় জনিত সাইক্রিয়াটিক প্রবলেম’ বলে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক তথা কবিয়াল অসীম সরকারকে এবার বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনে প্রার্থী করে বিজেপি।সিপিএম এই আসনে স্কুল শিক্ষক নীরব খাঁকে প্রার্থী করে।আর তৃণমূল প্রার্থী করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শর্মিলা সরকারকে। তাঁর সঙ্গেই মূলত ভোটের লড়াইটা হয় বিজেপি প্রার্থীর।এই লোকসভা আসনে ভোটার সংখ্যা থাকে ১৮ লক্ষ ১ হাজার ৩৩৩ জন।তার মধ্যে ১৪ লক্ষ ৯২ হাজার ৪৫৩ জন ভোটার ভোট দেন। ৪ জুন ভোটের ফলাফল ঘোষণা হলে জানা যায়,বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকার লক্ষাধীক ভোটে তৃণমূল প্রার্থী শর্মিলা সরকারের কাছে পরাজিত হয়েছেন।
পরাজিত হওয়ার কথা জানার পর ৪ জুন ’গণনায় কারচুপির’ কোন অভিযোগ না এনেই অসীম সরকার বর্ধমানের গণণা কেন্দ্র ছাড়েন।তার পর থেকে ১৩ টা দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর গত ১৮ জুন অসীম সরকার তাঁর পরাজিত হওয়া নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিস্ফোরক অভিযোগ আনেন। তিনি অভিযোগ করেছেন,“পরিকল্পনা করে গণণা কেন্দ্রে বিজেপি এজেন্টদের ঢুকতে না দিয়ে তৃণমূল প্রার্থীর পক্ষে ইচ্ছামত রেজাল্ট আউট করে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।এর জন্যে তিনি গণণা কাজের দায়িত্বে থাকা রাজ্য সরকারে আধিকারীক ও পুলিশকে চুড়ান্ত ভাবে দায়ী করেছেন।পাশাপাশি তিনি তৃণমূলের হয়ে গণণা কেন্দ্রে যাঁরা ছিলেন তাঁদেরকে ’বাহুবলি’ আখ্যাদিয়ে সমান ভাবে দায়ী করেছেন’।
পরিকল্পনা করে কি ভাবে গণণায় তাঁকে হারানো হয় তার ব্যাখ্যাও সামাজিক মাধ্যমে দিয়েছেন অসীম সরকার।এ নিয়ে তিনি বলেছেন,’গণণার আগে জেলার নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসকের অফিসে সর্বদলীয় মিটিং হয়।সেই মিটিংয়ে বলা হয়,সরকারী আধিকারিক সহ কেউ বাইরে থেকে কোন ’খাবার’ নিয়ে গণণা কেন্দ্রে ঢুকতে পারবে না।প্রশাসন থেকে যে শুকনো খাবার দেওয়া হবে সেটা খেয়েই ভোট গণণা করতে হবে।
অসীম সরকারের অভিযোগ,’সর্বদলীয় মিটিংয়ে এমনটা বলা হলেও গণণার দিন হয় ঠিক এর উল্টোটা।এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন,“ওইদিন লাঞ্চ টাইমে শুধুমাত্র সরকারী আধিকারিক ও তৃণমূলের এজেন্টদের জন্য চিকেন বিরিয়ানি ঢোকে।বিজেপি এজেন্টদের একটা জলের বোতলও দেওয়া হয় না।তৃষ্ণার্ত বিজেপির এজেন্টরা জল খেতে বাইরে বের হলে তৃণমূলের ’হার্মাদ বাহিনী’ গণণা কেন্দ্রের ভিতরে ঢুকে যায়। তখন প্রায় ৫ রাউণ্ড গণণা বাকি থাকে।জল খেয়ে বিজেপি এজেন্টরা ফের গণণা কেন্দ্রের ভিতরে ঢুকতে চাইলে তাদের আর ঢুকতে দেওয়া হয় না।তর পরেই গণনার প্রত্যেকটি ঘরে ২-৩ টি করে ’শিল খোলা’ ইভিএম আসতে শুরু করে। তানিয়ে তিনি প্রতিবাদ করেন। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করে না।তারই মধ্যে নিজেদের ইচ্ছামত তৃণমূল প্রার্থীর পক্ষে রেজাল্ট আউট করিয়ে দিয়ে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অসীম বাবু অভিযোগ এনেছেন“। পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন,এভাবে তাঁকে হারানোর বিষয়টি নিয়ে তিনি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছেন।
তবে সামাজিক মাধ্যমে শুধু নিজের পরাজিত হওয়ার এই কাহিনী শুনিয়েই অসীম সরকার খান্ত থাকেন নি।আগামী দিনে যেসব ভোট হবে তাতে বিজেপিকে জিততে হলে কি করতে হবে সেই উপদেশও তিনি বঙ্গ বিজেপি নেতাদের দিয়েছেন।সেই উপদেশে তিনি বলেছেন,’যে দলের যে জায়গায় বাহুবলি আছে,সে জায়গায় সেই দলই ভোটে জিতবে।তাই বিজেপির বুথ এজেন্ট থেকে শুরু করে কাউন্টিং এজেন্টদেরও ওইসব দলের বহুবলিদের মত হতে হবে।নয়তো শুধু মিটিং আর মিছিল করে বিজেপি কোনদিনও বাংলায় ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’
যদিও পরাজিত বিজেপি প্রার্থীর আনা এই সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছেন সিপিএম প্রার্থী নীরব খাঁ।তিনি বলেন,’গণণার দিন গণণা কেন্দ্রে প্রথম থেকে শেষ অব্দি আমি ছিলাম।আমার দলের এজেন্টরাও ছিলেন।অভিযোগ তোলার মত কোন কিছু অন্তত আমাদের চোখে পড়ে নি। তবে ইভিএম মেশিনে ব্যাটারি চার্চ কমলো কি করে সেটা ওইদিন আমাদেরকে ভাবিয়ে ছিল“।একই ভাবে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী শর্মিলা সরকারও জানিয়ে দেন,’উনি (অসীম সরকার) মিথ্যাচার করছেন’। আর জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন ,মনে হচ্ছে ওনার (অসীম সরকারের)পরাজয় জনিত সাইক্রিয়াটিক প্রবলেম’ দেখা দিয়েছে।।