এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৩ সেপ্টেম্বর : তুমুল বৃষ্টিপাতে ভয়াবহ পরিস্থিতি শহর কলকাতায় । কার্যত গোটা কলকাতা জলমগ্ন । আজ মঙ্গলবার সকালেই জমা জলে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল । সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে রোগীর পরিবারকে ৷ একটা অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় জল ইঞ্জিনে ঢুকে স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায় । তারপর রোগীর পরিবারকে জলের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স ঠেলে ঠেলে নিয়ে যেতে দেখা যায় । পরিবারের এক ক্ষিপ্ত সদস্যকে মিডিয়ার ক্যামেরার সামনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যায়, “দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী, উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে ।”
এদিকে কলকাতার পুরসভার মেয়রের দাবি যে গঙ্গার জল ঢুকে প্লাবিত হয়েছে শহর । অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সাধারণ মানুষের মৃত্যুর সব দায় সিইএসসির ঘাড়ে চাপিয়েছেন । বলেছেন, ‘আমার সঙ্গে সিইএসসির-এর কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কার কথা হয়েছে। এর আগেও একাধিক দুর্ঘটনা হয়েছে, কিন্তু সিইএসসির সতর্কভাবে কাজ করছে না, এভাবে যেন মানুষের প্রাণ না যায়’।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষ বার্তা দিয়েছে সিইএসসিও। তাতে লেখা হয়েছে,’জননিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পর্যাপ্ত সতর্কতার বিষয় হিসেবে, অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে চরম জলাবদ্ধতার কারণে, কিছু এলাকায় সরবরাহ সক্রিয়ভাবে বন্ধ রাখা হচ্ছে। আমরা তখনই বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধার করতে পারব যখন সংস্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের জানাবে যে জল নিরাপদ স্তরে নেমে গেছে। দয়া করে মনে রাখবেন, রাস্তার আলোর খুঁটি এবং ট্রাফিক লাইটগুলি সিইএসসি-এর মালিকানাধীন, রক্ষণাবেক্ষণ বা পরিচালিত নয়। আমাদের দল দিনরাত কাজ করছে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং আমরা সবসময়ই সংস্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আপনাদের অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত। দয়া করে আমাদের সঙ্গে থাকুন।
দয়া করে যত্ন নিন এবং নিরাপদে থাকুন।’
সাংবাদিক ও সমাজকর্মী প্রসূন মৈত্র বলেছেন,’বছর পাঁচেক আগের কথা, আমফান পরবর্তী সময়ে সিইএসসি এর কাজে জনগণ ক্ষুব্ধ তখন সেই বেসরকারী সংস্থার হয়ে ওকালতনামা নিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। তারা সার্টিফিকেট জারি করেছিল যে সিইএসসি নাকি অসাধারন কাজ করছে আর সেই সার্টিফিকেট জারি করার পাঁচ দিনের মধ্যেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিলেন এক দমকলকর্মী। জাম্পকাট টু ২০২৫, বিগত কয়েকঘণ্টায় আবার কলকাতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেলেন ৭ জন আর প্রত্যাশা অনুযায়ী মমতা ব্যানার্জি সব দায় ঠেলে দিলেন সিইএসসি এর দিকে (কলকাতা পুলিশ শুনছেন? এবার কোন সার্টিফিকেট দেবেন না?)। মমতা ব্যানার্জির দাবী সিইএসসি এর গাফিলতিতেই এই দুর্ঘটনা। সিইএসসি নাকি তাঁর বলা সত্ত্বেও কলকাতায় পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণ করছে না। এখন প্রশ্ন হলো যে মুখ্যমন্ত্রী যে গাফিলতির কথা জানেন সেটা কি কলকাতা কর্পোরেশন জানতো না? বিদ্যুৎ মন্ত্রক জানতো না? তাহলে তারা সেই গাফিলতিপূর্ণ কাজে সার্টিফিকেট দিলো কিভাবে? আর হ্যাঁ, ২০১৫ সালে সিইএসসি এর প্রধান সঞ্জীব গোয়েঙ্কাকে বঙ্গ বিভূষণ সম্মান কে দিয়েছিল সেটা মমতা ব্যানার্জির মনে আছে তো?’
বানভাসি কলকাতায় একের পর এক মৃত্যুতে কার্যত কিংকর্তব্যবিমুঢ় শাসকদল । এই পরিস্থিতিতে পুরসভার কন্ট্রোল রুমে খবরের চ্যানেলের পর্দায় চোখ রেখে দাঁড়িয়ে থাকা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের একটি ছবি পোস্ট করে তীব্র ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি নেতা তরুনজ্যোতি তিওয়ারি । তিনি এক্স-এ লিখেছেন,’হাকিম বাবুর কন্ট্রোল রুম নাটক!কলকাতার জনগণ এবার সত্যিই নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন! কারণ আমাদের সকলের প্রিয় হাকিম বাবু নাকি হাজির হয়েছেন পুরসভার কন্ট্রোল রুমে। তিনি কী করছেন জানেন? ABP আনন্দ টিভি চালিয়ে বন্যার ছবি দেখছেন!মানে, প্রশাসনের এত CCTV ক্যামেরা, কোটি কোটি টাকা খরচ, পুলিশের নজরদারি—সব মমতা ব্যানার্জির সরকারের মতই, একেবারে অকার্যকর।
শহর ডুবছে, মানুষ ভুগছে, কিন্তু হাকিম বাবু তথ্য নিচ্ছেন টিভি দেখে! তাহলে প্রশ্ন ওঠে— CCTV গুলো কোথায় গেল?করদাতাদের টাকায় কেন এই ভাঁওতা?
যখন মিডিয়ার ক্যামেরাই আসল কাজ করছে, তখন প্রশাসন নামক নাটকের দরকারই বা কী?’
তিনি আরও লিখেছেন,’আজকের এই বিপর্যয়ে একটাই স্পষ্ট—কলকাতা মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে KMC-র দয়া-দাক্ষিণ্যে ডুবে আছে। মানুষের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা চলছে। শুধু মিডিয়ার ক্যামেরাই কাজ করছে, সরকার আর পুরসভার মেশিনারি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।ধন্যবাদ ABP আনন্দ—আপনারা না থাকলে এই সরকারের ব্যর্থতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো যেত না।’ বিজেপি নেত্রী লকেট চ্যাটার্জি বলেছেন,’জলমগ্ন শহর কোলকাতা, চলছে মৃত্যুমিছিল। বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসবের আগে ব্যর্থ প্রশাসন।’।