প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৪ নভেম্বর : এ যেন ’জাদু’ বিদ্যাকেও হার মানিয়ে দেওয়ার মত ব্যাপার ।যা ছিল শিশুবিকাশ কেন্দ্র তা রাতারাতি হয়ে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয় । আর এই ঘটনা নিয়েই শুক্রবার সকাল থেকে ব্যাপক ক্ষোভ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের লোদনা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বারিশালী গ্রাম। ঘটনার বিহিত চেয়ে গ্রামের বাসিন্দারা ই-মেল করে ব্লক প্রশাসন ও মহকুমা শাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। পাশাপাশি ঘটনার নিন্দাকরে বিরোধীরাও বিষয়টি নিয়ে জোরদার আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দিয়েছে।
বারিশালী গ্রামে শুক্রবার পৌছে দেখা যায়
অ্যাসবেস্টর্স চালার একটি বাড়ির সিমেন্ট দিয়ে
বড় বড় করেলেখা রয়েছে, ‘বারিশালী ২২ নম্বর শিশুবিকাশ কেন্দ্র’। তার ঠিক নীচে আবার তৃণমূলের প্রতীক আঁকা রয়েছে । প্রতীকের মাথায় রঙ দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘বারিশালী তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়’।আর এ নিয়েই বেঁধেছে বিরোধ। গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন,দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর ধরে এই বাড়িটি ছিল শিশুবিকাশ কেন্দ্র অর্থাৎ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ছিল। কিছু দিন হল বারিশালী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে কেন্দ্রটি স্থানান্তর করা হয় ।
তারপর থেকে বাড়িটি ফাঁকাই পড়েছিল । হঠাৎ করে বুধবার সকালে ফাঁকা বাড়িটির ‘দখল’ নেয় শাসক দল,তৃণমূল। তারা পর রাতারাতি বাড়িটিকে তৃণমূল কার্যালয় বানিয়ে ফেলা হয় । বাড়িটির দেওয়ালেও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীক এঁকে দিয়ে তার উপরে বারিশালী তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয় বলে লিখে দেওয়া হয়েছে । এমনকি ওই লেখার পাশে বুথ ১০২/১১৩ বলেও উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসী দাবি করেছেন,’এতকাল শিশুশিক্ষা কেন্দ্র হিসাবে যে বাড়িটি ব্যবহৃত হয়েছে সেটি হয় প্রসাসন অন্য কোন জনকল্যাণ কর কাজে ব্যবহার করক ,নয়তো বাড়িটিকে সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক। সেই কথাই প্রশাসনকে জানানো হয়েছে বলে গ্রামবাসীরা মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে মহকুমা শাসক (বর্ধমান দক্ষিণ) কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল বলেন,’ই-মেলে পাঠানো চিঠি এখনও দেখিনি। ওই চিঠির বিষয়বস্তু দেখার পর পুলিশের পাশাপাশি প্রশাসনিক ভাবেও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।’
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা মনোরঞ্জন বটব্যাল জানান, বারিশালী গ্রামের বাসিন্দা জগবন্ধু রায় সিপিএমের দলীয় অফিস করার জন্যে ১৯৮৪ সালে জায়গাটি দান করেছিলেন । যার দাগ নম্বর: ২২৮৯, খতিয়ান নম্বর: ১৫৮/২। এর কিছুদিনের মধ্যেই গ্রামে শিশুবিকাশ কেন্দ্র অর্থাৎ অঙ্গনওয়াড়ি তৈরির প্রস্তাব আসে। কিন্তু তখন শিশুবিকাশ কেন্দ্র গড়ার জন্যে জায়গা না মেলায় জগবন্ধু বাবুর অনুমতিতে ওই জায়খার একাংশে ‘২২ নম্বর’ শিশু বিকাশ কেন্দ্র গড়ে ওঠে ।সেই থেকে কিছুদিন আগে পর্যন্ত ওই বাড়িতেই শিশুবিকাশ কেন্দ্র চলে। বাড়িটির প্রকৃত মালিক জগবন্ধু বাবু পাঁচ বছর আগে মারা গিয়েছেন । আর তিনি যাঁকে ওই জমিটি দিয়ে গিয়েছিলেন সেই সিপিএমের নেতা আলম সাহানাও পাঁচ মাস আগে মারা গিয়েছেন ।
প্রশাসনকে ই-মেলে পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষর থাকা জয়ন্ত মাঝি,আয়নাল মণ্ডল সহ ৫০ জন বাসিন্দার দাবি,বাড়িটি এখন কার্যত মালিকানাহীন। ওই বাড়িতে প্রতিদিন সন্ধেয় নাট্যচর্চার আসর বসে। সে জন্যে বাড়িটি যাতে কোনও রাজনৈতিক দলের হাতে না যাক । বাড়িটিকে সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হলেই ভাল হয়।
খণ্ডঘোষের বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ বলেন, ‘দখলদারি নীতিতে তৃণমূল বিশ্বাস করে না।
সিপিএমের কয়েকজন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। বিধানসভার অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে আলোচনায় বসে এই বিষয়টি সমাধানের
যথাযথ পথ বের করা হবে ।’ যদিও সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য বিনোদ ঘোষ বলেন,’ওই বাড়ি রাজনৈতিক দলের হাতে চলে গেলে এলাকার সাংস্কৃতিক প্রেমী মানুষরা সমস্যায় পড়বেন।তাই
বাড়িটিকে যাতে সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র হিসাবে
গড়ে তোলা সেটাই প্রশাসন দেখা উচিত ।’ আর জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,’দখলের রাজনীতিতে তৃণমূল সিদ্ধহস্ত । তাই ভোটের সময় ছাপ্পা ভোট দেওয়ার জন্য বুথ দখল থেকে শুরু করে শিশুবিকাশ কেন্দ্র দখল , সবই তৃণমূলের রাজত্বে চলছেই ।’।