এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৮ জুন : মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নির্দেশে কলকাতা সহ গোটা রাজ্য জুড়ে চলছে জবরদখল উচ্ছেদ অভিযান । লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়ে পরিবার নিয়ে অতান্তরে পড়েছেন । পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে হঠাৎ করে জবরদখল উচ্ছেদ অভিযান করায় বিভিন্ন মহলের থেকে সমালোচনার ঝড় বইছে । এদিকে তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের ফুটপাতে বসার অনুমতি এবং পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসিক তোলাবাজির অভিযোগ উঠছে । এরই মাঝে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একটা মারাত্মক অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে । শুভেন্দুর অভিযোগ যে সবচেয়ে বড় জবরদখলকারী মুখ্যমন্ত্রী নিজে, কারন উনি কালীঘাটের টালি নালার জমি দখল করে রেখেছেন৷
আজ শুক্রবার বিধানসভার সামনে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে তোপ দেগে বিরোধী দলনেতা বলেন,’আপনি বলছেন জমি উদ্ধার করবেন । আর আপনি নিজেই কালীঘাটের টালি নালার জমি জবরদখল করে নিজের বাড়ির সম্প্রসারণ করেছেন,মিটিং হল তৈরী করিয়েছেন ।’ তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন,’এখনই আপনারা আমার সঙ্গে চলুন, দশ বছর আগে কালীঘাটের টালি নালা কেমন ছিল আর আজ কি হয়েছে আপনাদের আমি দেখিয়ে দেবো ।’ এরপর তিনি বলেন,’জবরদখল কারী যদি কেউ হয়, নালা বা ক্যানেল কেউ যদি বন্ধ করে থাকে, ইরিগেশন যদি কেউ বন্ধ করে থাকে, তার নাম মমতা ব্যানার্জি এবং তার পরিবার । আপনাকে দেখে সুজিত বোসু লেকটাউনের দত্তাবাদে নিকাশি বুজিয়ে প্লট করে কোটি কোটি টাকায় জমিগুলো বেচেছে । তাই সুজিত চোর আর আপনি সাধু এটা হতে পারে না । এক যাত্রায় পৃথকফল হতে পারেনা ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’বেহালার লোকেদের চোখের জল, বিধান নগরের গরিব মানুষগুলোর চোখে জল, রামপুরহাটের হকারদের আর্তনাদ, বোলপুরে দুটো বাচ্চা স্কুল থেকে ফিরে বাবার দোকানের সামনে বসে অঝোর ঝরে কান্না, এই চোখের জলে আপনাকে ভেসে যেতে হবে ।’ এর আগে শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ তোলেন যে গত নির্বাচনে হিন্দু অধ্যুষিত যেসমস্ত এলাকার মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন মূলত তাদের বিরুদ্ধেই অভিযান চালানো হচ্ছে ।
এদিকে একের পর এক তৃণমূল কংগ্রেসের নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে ।
ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে হাওড়ায় একটি রেস্তরাঁ লাগোয়া এলাকায় ফাঁকা জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে । কাজ ছিল তার শুনানি৷ সেই মামলায় পুলিশের রিপোর্টে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা । তিনি স্থানীয় বিএলএলআরওকে দিয়ে জমি চিহ্নিত করিয়ে ফের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন । এছাড়া মাঝেরহাট ব্রিজের কাছে হেলেন কেলার সরণীতে জমি দখল করে পার্টি অফিস গড়ে তোলার অভিযোগ তুলেছে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ । বিচারপতি অমৃতা সিনহা পুলিশকে উচ্ছেদ অভিযানের নির্দেশও দিয়েছিলেন । কিন্তু বিচারপতি সিনহার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেছিল শাসক দল । মামলাটি যায় প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যর ডিভিশন বেঞ্চে ।ডিভিশন বেঞ্চে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে ১০০ বছর ধরে কোন জমি দখল করে বাস করলেও সেই জমির উপর দখলদারদের অধিকার জন্মায় না । একই সঙ্গে জমি জবরদখল প্রসঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য সরকারকে হলফনামা আকারে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ ।
মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে জবরদখল উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে আজ বড়সড়ো একটা টুইট করেছেন শুভেন্দু অধিকারী ৷ তিনি লিখেছেন,’বিচিত্র এই বঙ্গে, উচ্ছেদের দুই চিত্র । একদিকে,বোলপুরে ভেঙে ফেলা হয়েছে ঘর ও বাবার দোকান, স্কুল থেকে ফিরে সব সম্বল হারানোর যন্ত্রণায় কান্নায় ভেঙে পড়েছে দুই খুদে ! বোলপুর- শ্রীনিকেতন রোডের উপর অবস্থিত ছিল এই দোকান।
অন্যদিকে,রাজারহাট নিউটাউন এলাকার চকপাঁচুড়িয়া মৌজায় পূর্বতন সরকারের দ্বারা অধিকৃত জমিতে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের মদতে অসাধু ব্যবসায়ীরা সরকারি জমি অবৈধ ভাবে দখল করে বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ বানাচ্ছেন, অথচ HIDCO-র কর্তাদের চোখে তা পড়ে না। পুলিশ তো ঘুষ পেলে চোখে ঠুলি পরে নেয়, তারপর এই সব বেআইনি কাজকর্ম নজরে আসে না। এই রকম ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে, প্রয়োজনে আরও প্রকাশ করবো ভবিষ্যতে ।’।