প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৩ সেপ্টেম্বর : গঙ্গা অ্যাকন প্ল্যান , ফ্লাড কন্ট্রোল ও ডিভিসি,এই তিনটেই কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে । তবুও আজ অবধি কোন কাজ তারা করে নি । ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘর ,কৃষিক্ষেত্র ও শস্যক্ষেত্র ঢুবে যাচ্ছে। বাংলা বনভাসী হওয়ার জন্য সোমবার বর্ধমানে প্রশাসনিক বৈঠক শেষে ডিভিসি’কে দায়ী করার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারকেও একই ভাবে কাঠগড়ায় তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।শুধু তাই নয়,’ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান“ এতদিন ধরে বাস্তবায়িত না হওয়ার জন্যেও মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায়ী করেন ।
বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে এদিন বর্ধমানে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলাশাসকের দফতরের কনফারেন্স হলে হওয়া এই বৈঠকে রাজ্যের পাঁচ মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস প্রদীপ মজুমদার,স্বপন দেবনাথ, মলয় ঘটক ও সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ছাড়াও দুই সাংসদ কীর্তি আজাদ এবং শর্মিলা সরকার উপস্থিত থাকেন।দুই বর্ধমান জেলার সমস্ত বিভাগের প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে নিয়ে হওয়া বৈঠকে বন্যায় সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির সবিস্তার রিপোর্ট নেন।বন্যা পরিস্থিতিতে প্রসাসনের কর্তাদের ’প্রো-অ্যাকটিভ“ হয়ে কি কি কাজ করতে হবে তাও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন।
প্রশাসনিক বৈঠক শেষে সংবাদ মাধ্যমকে মুখ্যমন্ত্রী জানান , আবার দুু-তিন দিনের বর্ষা আসছে । বঙ্গোপসাগরে দুটো ঘুর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে ।ফলে কিছু জেলায় প্রচণ্ড বৃষ্টি হবে।ডিভিসি যদি আবার জল ছাড়ে যেসব জায়গা ইতিমধ্যে জলে ঢুবে আছে ,সেই সব জায়গা জলের উপর আরও জল প্লাবিত হবে। এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, বাংলার দুর্ভাগ্য । বাংলা ও আসামে যতটা বন্যা হয় সেটা অন্য কোথাও হয় না।
এর ব্যাখ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলা নদী মাতৃক দেশ । বাংলা নদী ,পুকুর ও সমুদ্রে ঘেরা। বাংলার অবস্থানটা ঠিক নৌকার মতন। একটুতেই প্রচণ্ড জল জমে যায়।“ এই ব্যাক্ষ্যা দিয়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলেই আমাদের চিন্তা হয়। নিজেদের বাঁচাতে জল ছেড়ে দেয় বাংলার উপর। দীর্ঘদিন ’ড্রেজিং’ না করার ফলে ’ফারাক্কা’ জলপ্লাবিত হয় । জলটা ছেড়ে দেয় । গঙ্গা ’ইরোশনের’ ফলে মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং বিহারের কিছুটা অংশ যখন প্লাবিত হয় তখন বিহার বাঁধ কেটে দিয়ে জল বাংলায় ঢুকিয়ে দেয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন,“ রাজ্যে ৫ লক্ষ পুকুর ইতিমধ্যেই কাটানো হয়েছে । তাতে অনেকটা জল ভরছে । এটা না হলে আরও বন্যা হত । আরও ভাসতো।
চলতি বন্যায় হওয়া ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে রাজ্যের কৃষক ও সাধারণ মানুষকে দুশ্চিন্তা না করার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ নিয়ে তিনি জানান,বর্ধমান,বাঁকুড়া, বীরভূম, হুগলী ,হাওড়া ,নদীয়া দুই ২৪ পরগনা জেলা হল শস্য ভাণ্ডার। জলপ্লাবিত হয়ে যাদেরই জমির শস্য ও ধান নষ্ট হয়েছে , তারা শস্য বীমা পাবে । আর যাদর কাঁচা বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তার সার্ভে পঞ্চায়েত ডিপার্টমেন্টকে করতে বলা হয়েছে । পাকা বাড়ি করার জন্য ১১লক্ষ কাঁচা বাড়ির মালিককে ডিসেম্বরে প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়াও মাইনোরিটি ডিপার্টমেন্ট থেকেও ৬৫ হাজার বাড়ি তৈরি করো দেওয়া হয় । যাদের মাটির বাড়ি ভেঙে গেছে বা ধসে গেছে , বাড়ির টাকা পাওয়া লিস্টে তাদের ’প্রায়রিটি’ দিতে হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়ে দেন । একই সাথে তিনি জানিয়ে দেন,চাষিদের ধান কেনা কাটায় কোনরকম গাফিলতি চলবে না।ধানকল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে চাষির ধান কিনে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে ।।