দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),২৮ নভেম্বর : রাত পোহালেই পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার শ্রীখণ্ডের বড়ডাঙ্গায় শুরু হতে চলেছে প্রায় ৪৫০ বছরের প্রাচীন নরহরি মিলন উৎসব । মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের পার্ষদ নরহরি সরকারের তিরোভাব দিবস উপলক্ষ্যে প্রতি বছর কার্ত্তিক মাসের কৃষ্ণা একাদশী তিথিতে উৎসবের আয়োজন করা হয় । মেলাও বসে । তিনদিন ধরে উৎসব চলে । কয়েক হাজার পূন্যার্থীর সমাগম হয় । তবে গত বছর করোনা পরিস্থিতির কারনে মেলা হয়নি । তবে এবারে সীমিত পরিসরে মেলার আয়োজন করা হয়েছে জানিয়েছেন শ্রীখন্ড মধূমতী কমিটির অধ্যক্ষ অনুপম ঠাকুর । সেই সঙ্গে তিনি জানান, করোনা বিধি মেনেই এবারে উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে । পুন্যার্থী ও ভক্তরা যাতে করোনা বিধি মেনে চলেন তার জন্য কমিটির তরফ থেকে সচেতনতামূলক প্রচার করা হচ্ছে ।
মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের অনুসারী নরহরি সরকারের জন্ম ১৪৭৮ সালে কাটোয়া থানার শ্রীখণ্ডের বৈদ্য পরিবারে । শ্রীচৈতন্যদেবের জীবদ্দশায় তিনি গৌরাঙ্গ বিগ্রহের পুজোর প্রবর্তন করেন । বৈষ্ণব সমাজে তাঁকে স্বতন্ত্র ধারার প্রবর্তক বলে মানা হয় । ১৫৬২ খ্রিস্টাব্দে দেহত্যাগ করেন নরহরি সরকার । তারপর নরহরি সরকারের ভাইপো রঘুনন্দন,বৈষ্ণব সাধক শ্রী নিবাস আচার্য্য,গদাধর দাস ও নিত্যানন্দ পুত্র বীরভদ্র মহাজনদের উদ্যোগে বড়ডাঙ্গায় নরহরির সাধনস্থলে মিলন উৎসবের আয়োজন করা হয় । তখন থেকেই উৎসব উপলক্ষে মেলা হয়ে আসছে ।
প্রাচীন নিয়ম মেনে আজও গৌরাঙ্গের দারুমূর্তিকে পালকিতে চড়িয়ে শ্রীখণ্ডে নরহরি সরকারের সাধনস্থল থেকে প্রায় দুই কিমি দুরে বড়ডাঙ্গার ভজনস্থলেতে আনা হয় । যাত্রাপথে বাজনা সহযোগে কীর্তন পরিবেশন করেন কীর্তনীয়া ও বাউল শিল্পিরা । মহাপ্রভুর দারুমূর্তি বড়ডাঙ্গায় আনার পর বৈষ্ণব রীতিনীতি মেনে নরহরি সরকার ঠাকুরের তীরধান দিবস পালন করা হয় । শুধু বৈষ্ণব সমাজই নয়,এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সাধারন মানুষের মধ্যেও প্রবল উৎসাহ দেখা যায় । লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয় কাটোয়ার বড়ডাঙ্গায় নরহরি সরকারের ভজনস্থলে ।।